গ্রীষ্ম এসেছে নিজের চিরচেনা রূপে। কাঠ ফাটা রোদ, ক্লান্ত দুপুর, হঠাৎ লোডশেডিং আর শরীর ঘেমে একাকার অবস্থা। এমন সময় শুধু ক্যালেন্ডারের পাতা নয়, একটু বদল দরকার জীবনের রুটিনেও। গরমে শরীর ও মন সুস্থ রাখতে চাইলে সহজ ও কার্যকরী কিছু কৌশল অবলম্বন করতে পারেন যা আপনাকে রাখবে সতেজ। চলুন জেনে নেই গরমে সুস্থ থাকার কিছু চমৎকার কিছু উপায়।
পানির বন্ধু হোন
গরমে পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন) সবচেয়ে বড় শত্রু। দিনে কমপক্ষে ৮—১০ গ্লাস পানি পান করুন। ঘাম বেশি হলে আরও বেশি। বাইরে গেলে সব সময় সঙ্গে পানির বোতল রাখুন। খালি পেটে অথবা ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস পানি, মাঝে মাঝে ডাবের পানি, লেবু পানি, চিড়ার পানি বা ওরস্যালাইন খান। তবে অতিরিক্ত ঠান্ডা বা বরফ দেওয়া পানি এড়িয়ে চলুন। হঠাৎ শরীর ঠান্ডা হয়ে গিয়ে জ্বর—গলাব্যথা হতে পারে।
হালকা খাবার খান
গরমে ভারী খাবার খেলে শরীর আরও গরম হয়ে ওঠে। ফলে বাড়ে ক্লান্তি ও অস্বস্তি। ভাতের সঙ্গে টক ডাল, শাকসবজি, টক দই, বেশি করে ফল (তরমুজ, বাঙ্গি, পেঁপে, শসা), ভাজাপোড়া, ঝাল—মশলা এড়িয়ে চলুন।
ত্বক ও চুলের যত্ন
গরমে শুধু শরীর নয়, ত্বক ও চুলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই বাইরে গেলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। দিনে অন্তত দুবার মুখ ধুয়ে নিন। হালকা অয়েল বা অ্যালোভেরা জেল চুলে ব্যবহার করুন। রোদ থেকে ফিরে ঠান্ডা পানিতে মুখ—চুল ধুয়ে নিন।
পোশাকে হোক আরাম ও স্বস্তির
গরমে স্বস্তি পেতে সুতির হালকা জামাকাপড় পরুন। গাঢ় রঙের পরিবর্তে হালকা রঙ বেছে নিন। খোলামেলা পোশাক শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ঘুমে ছাড় নয়
অতিরিক্ত গরমে ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে, ফলে মেজাজ খারাপ, ক্লান্তি, মাথাব্যথা সব কিছুই আসে। তাই হালকা খাবার খেয়ে শুতে যান। ঘুমানোর আগে ঘরে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করুন। ঘর ঠান্ডা হলে ভালো ঘুম হবে।
মনকে রাখুন ঠান্ডা
শুধু শরীর ঠান্ডা করলেই হবে না, মনও শান্ত রাখা জরুরি। দিনে ৫—১০ মিনিট চোখ বন্ধ করে গভীর নিঃশ^াস নিন। বাইরে জরুরি কাজ না থাকলে রোদে বের না হওয়া ভালো। বিকেলে হাঁটাহাঁটি বা ছাদে বসে কিছুক্ষণ প্রকৃতিকে দেখুন।
গরমে যা এড়িয়ে চলা জরুরি
সোডা, কোল্ড ড্রিংক, মসলাদার ফাস্টফুড, অতিরিক্ত কফি/চা, প্লাস্টিক বোতলে গরম পানি রেখে পান করা।
ছবি:০৫
তীব্র গরমে হঠাৎ অসুস্থ হলে যা করবেন
তাপমাত্রা বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে হিট স্ট্রোক, হিট এক্সহউশনসহ নানা ধরনের সমস্যা। অতিরিক্ত গরমে ত্বকের নিচের ধমনীগুলো যখন খুলে যেতে থাকে, তখন রক্তচাপ কমে যায় এবং হৃদপিণ্ডের কাজ বাড়িয়ে দেয়। সারা শরীরের রক্ত পৌঁছানোর জন্য হৃদপিণ্ডকে দ্রুত পাম্প করতে হয়। ফলে শরীরে হালকা র্যাশ বা দানা দেখা দিতে পারে, যা চুলকাতে পারে। অথবা কারো পা ফুলে যেতে পারে। এমনকি রক্তচাপ বেশি কমে গেলে হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত হতে পারে।
একই সঙ্গে বেশি ঘামের কারণে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়তে পারে। ফলে দেখা দিতে মাথাঘোরা, অজ্ঞান হয়ে পড়া, বমি ভাব, মাংসপেশিতে খিচ ধরা, মাথাব্যথা, ক্লান্তি, অবসাদ এবং মনে দ্বিধার ভাব হওয়া। এসব থেকে বাঁচার জন্য সচেতনতা বেশি জরুরি। চলুন জেনে নেই তীব্র গরমে হঠাৎ অসুস্থ হলে কী করা উচিত—
তীব্র গরমে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে কী করা উচিত সে বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছে ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।
>> তীব্র গরমে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে যত দ্রুত সম্ভব তাকে ঠাণ্ডা জায়গায় নিয়ে শুইয়ে দিতে হবে, এবং তার পা কিছুটা ওপরে তুলে দিতে হবে।
>> প্রচুর পানি বা পানীয় খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে, পানিশূন্যতা দূর করার পানীয় দেয়া যেতে পারে।
>> আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বক ঠান্ডা করার ব্যবস্থা করতে হবে, ভেজা কাপড় বা স্পঞ্জ দিয়ে মুছে দেয়া যেতে পারে শরীর। বগলের নিচে এবং ঘাড়ে গলায় ঠাণ্ডা পানি দেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
>> তবে আধা ঘণ্টার মধ্যে যদি সুস্থ না হয়, তাহলে ঐ ব্যক্তির হিট স্ট্রোক হবার আশঙ্কা রয়েছে। কালক্ষেপণ না করে তক্ষুনি চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। হিটস্ট্রোক হলে মানুষের ঘেমে যাওয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে ঐ ব্যক্তি।
কাদের ঝুঁকি বেশি?
>> গরমে স্বাস্থ্যবান মানুষের হিট স্ট্রোক হবার আশঙ্কা কম। কিন্তু কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ার মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছেন। বিশেষ করে বৃদ্ধ এবং যাদের আগে থেকেই অসুস্থতা রয়েছে তাদের অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি।
>> যাদের ডায়াবেটিস টাইপ ওয়ান বা টু, রয়েছে তাদের শরীর দ্রুত পানি শূন্য হয়ে পড়ে এবং কিছু জটিলতা দেখা দেয়।
>> বেশি গরমে বাচ্চাদের খুব কষ্ট হয়। অনেক সময় তারা নিজেদের অস্বস্তির কথা বুঝিয়ে বলতে পারে না, যে কারণে মা—বাবারা সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিতে পারে না।
তাপদাহের সময় কী করা উচিত?
>> ঠাণ্ডা থাকুন আর শরীরকে পানিশূন্য হতে দেবেন না।
>> গরমে রোদের মধ্যে কাজ না করা এবং বেশি পরিশ্রমের কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।
>> দিনের বেলায় ঘরে পর্দা টেনে দিন। প্রচুর পানি এবং দুধ পান করুন।