শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০৯ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

এই গরমে প্রশান্তিতে থাকার টিপস

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫

গ্রীষ্ম এসেছে নিজের চিরচেনা রূপে। কাঠ ফাটা রোদ, ক্লান্ত দুপুর, হঠাৎ লোডশেডিং আর শরীর ঘেমে একাকার অবস্থা। এমন সময় শুধু ক্যালেন্ডারের পাতা নয়, একটু বদল দরকার জীবনের রুটিনেও। গরমে শরীর ও মন সুস্থ রাখতে চাইলে সহজ ও কার্যকরী কিছু কৌশল অবলম্বন করতে পারেন যা আপনাকে রাখবে সতেজ। চলুন জেনে নেই গরমে সুস্থ থাকার কিছু চমৎকার কিছু উপায়।

পানির বন্ধু হোন
গরমে পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন) সবচেয়ে বড় শত্রু। দিনে কমপক্ষে ৮—১০ গ্লাস পানি পান করুন। ঘাম বেশি হলে আরও বেশি। বাইরে গেলে সব সময় সঙ্গে পানির বোতল রাখুন। খালি পেটে অথবা ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস পানি, মাঝে মাঝে ডাবের পানি, লেবু পানি, চিড়ার পানি বা ওরস্যালাইন খান। তবে অতিরিক্ত ঠান্ডা বা বরফ দেওয়া পানি এড়িয়ে চলুন। হঠাৎ শরীর ঠান্ডা হয়ে গিয়ে জ্বর—গলাব্যথা হতে পারে।

হালকা খাবার খান
গরমে ভারী খাবার খেলে শরীর আরও গরম হয়ে ওঠে। ফলে বাড়ে ক্লান্তি ও অস্বস্তি। ভাতের সঙ্গে টক ডাল, শাকসবজি, টক দই, বেশি করে ফল (তরমুজ, বাঙ্গি, পেঁপে, শসা), ভাজাপোড়া, ঝাল—মশলা এড়িয়ে চলুন।

ত্বক ও চুলের যত্ন
গরমে শুধু শরীর নয়, ত্বক ও চুলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই বাইরে গেলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। দিনে অন্তত দুবার মুখ ধুয়ে নিন। হালকা অয়েল বা অ্যালোভেরা জেল চুলে ব্যবহার করুন। রোদ থেকে ফিরে ঠান্ডা পানিতে মুখ—চুল ধুয়ে নিন।

পোশাকে হোক আরাম ও স্বস্তির
গরমে স্বস্তি পেতে সুতির হালকা জামাকাপড় পরুন। গাঢ় রঙের পরিবর্তে হালকা রঙ বেছে নিন। খোলামেলা পোশাক শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

ঘুমে ছাড় নয়
অতিরিক্ত গরমে ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে, ফলে মেজাজ খারাপ, ক্লান্তি, মাথাব্যথা সব কিছুই আসে। তাই হালকা খাবার খেয়ে শুতে যান। ঘুমানোর আগে ঘরে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করুন। ঘর ঠান্ডা হলে ভালো ঘুম হবে।

মনকে রাখুন ঠান্ডা
শুধু শরীর ঠান্ডা করলেই হবে না, মনও শান্ত রাখা জরুরি। দিনে ৫—১০ মিনিট চোখ বন্ধ করে গভীর নিঃশ^াস নিন। বাইরে জরুরি কাজ না থাকলে রোদে বের না হওয়া ভালো। বিকেলে হাঁটাহাঁটি বা ছাদে বসে কিছুক্ষণ প্রকৃতিকে দেখুন।

গরমে যা এড়িয়ে চলা জরুরি
সোডা, কোল্ড ড্রিংক, মসলাদার ফাস্টফুড, অতিরিক্ত কফি/চা, প্লাস্টিক বোতলে গরম পানি রেখে পান করা।

ছবি:০৫
তীব্র গরমে হঠাৎ অসুস্থ হলে যা করবেন
তাপমাত্রা বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে হিট স্ট্রোক, হিট এক্সহউশনসহ নানা ধরনের সমস্যা। অতিরিক্ত গরমে ত্বকের নিচের ধমনীগুলো যখন খুলে যেতে থাকে, তখন রক্তচাপ কমে যায় এবং হৃদপিণ্ডের কাজ বাড়িয়ে দেয়। সারা শরীরের রক্ত পৌঁছানোর জন্য হৃদপিণ্ডকে দ্রুত পাম্প করতে হয়। ফলে শরীরে হালকা র্যাশ বা দানা দেখা দিতে পারে, যা চুলকাতে পারে। অথবা কারো পা ফুলে যেতে পারে। এমনকি রক্তচাপ বেশি কমে গেলে হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত হতে পারে।

একই সঙ্গে বেশি ঘামের কারণে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়তে পারে। ফলে দেখা দিতে মাথাঘোরা, অজ্ঞান হয়ে পড়া, বমি ভাব, মাংসপেশিতে খিচ ধরা, মাথাব্যথা, ক্লান্তি, অবসাদ এবং মনে দ্বিধার ভাব হওয়া। এসব থেকে বাঁচার জন্য সচেতনতা বেশি জরুরি। চলুন জেনে নেই তীব্র গরমে হঠাৎ অসুস্থ হলে কী করা উচিত—

তীব্র গরমে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে কী করা উচিত সে বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছে ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।

>> তীব্র গরমে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে যত দ্রুত সম্ভব তাকে ঠাণ্ডা জায়গায় নিয়ে শুইয়ে দিতে হবে, এবং তার পা কিছুটা ওপরে তুলে দিতে হবে।

>> প্রচুর পানি বা পানীয় খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে, পানিশূন্যতা দূর করার পানীয় দেয়া যেতে পারে।

>> আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বক ঠান্ডা করার ব্যবস্থা করতে হবে, ভেজা কাপড় বা স্পঞ্জ দিয়ে মুছে দেয়া যেতে পারে শরীর। বগলের নিচে এবং ঘাড়ে গলায় ঠাণ্ডা পানি দেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

>> তবে আধা ঘণ্টার মধ্যে যদি সুস্থ না হয়, তাহলে ঐ ব্যক্তির হিট স্ট্রোক হবার আশঙ্কা রয়েছে। কালক্ষেপণ না করে তক্ষুনি চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। হিটস্ট্রোক হলে মানুষের ঘেমে যাওয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে ঐ ব্যক্তি।

কাদের ঝুঁকি বেশি?

>> গরমে স্বাস্থ্যবান মানুষের হিট স্ট্রোক হবার আশঙ্কা কম। কিন্তু কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ার মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছেন। বিশেষ করে বৃদ্ধ এবং যাদের আগে থেকেই অসুস্থতা রয়েছে তাদের অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি।

>> যাদের ডায়াবেটিস টাইপ ওয়ান বা টু, রয়েছে তাদের শরীর দ্রুত পানি শূন্য হয়ে পড়ে এবং কিছু জটিলতা দেখা দেয়।

>> বেশি গরমে বাচ্চাদের খুব কষ্ট হয়। অনেক সময় তারা নিজেদের অস্বস্তির কথা বুঝিয়ে বলতে পারে না, যে কারণে মা—বাবারা সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিতে পারে না।

তাপদাহের সময় কী করা উচিত?

>> ঠাণ্ডা থাকুন আর শরীরকে পানিশূন্য হতে দেবেন না।

>> গরমে রোদের মধ্যে কাজ না করা এবং বেশি পরিশ্রমের কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।

>> দিনের বেলায় ঘরে পর্দা টেনে দিন। প্রচুর পানি এবং দুধ পান করুন।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

দিনটা শুরু হবে চায়ে, না কফিতে? জানুন কোনটা ভালো সকালের শুরুটা কেমন হয়, পুরো দিনের ওপর তার একটা ছাপ পড়ে। কেউ সকালে উঠে চায়ের কাপ হাতে না পেলে যেন দিনই শুরু করতে পারেন না, আবার কেউ আছেন কফির তীব্র গন্ধ ছাড়া সকাল কল্পনাই করতে পারেন না। এই দুটি পানীয় শুধু স্বাদের জন্য নয়, বরং অভ্যাস, সংস্কৃতি এবং মানসিক প্রশান্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—সকালের জন্য কোনটা ভালো? চা নাকি কফি? এই নিয়ে নানান জনের নানান মত। চাপ্রেমীরা বলবেন চায়ের কথা তেমনি কফিপ্রেমীদের ভোট থাকবে কফিতে। আসুন জেনে নেই আসলে স্বাস্থ্যকর দিক থেকে কোনটি সবচেয়ে ভালো। বিশ^জুড়ে কোটি কোটি মানুষ দিনের শুরু করে এক কাপ চা দিয়ে। বিশেষ করে উপমহাদেশে চা শুধু পানীয় নয়, এক ধরনের সংস্কৃতি। আমাদের দেশে সকালে বাসার বারান্দায় বসে কড়া লাল চা কিংবা দুধ চা পান করার অভ্যাস অনেক পুরোনো। চায়ে উপস্থিত থাকে ক্যাফেইন, তবে তা কফির তুলনায় অনেক কম। এজন্য চা ধীরে ধীরে কাজ করে, মাথা ঠান্ডা রাখে এবং এক ধরনের প্রশান্তি দেয়। এতে থাকা এল—থিয়ানিন নামক অ্যামিনো অ্যাসিড মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং মনোযোগ বাড়ায়। যাদের সকালে অতিরিক্ত উত্তেজনা বা নাড়া—চাড়া একদম পছন্দ নয়, তাদের জন্য চা একটি আদর্শ পানীয় হতে পারে। অন্যদিকে কফি হচ্ছে সকালের সেই পানীয়, যা অনেকের চোখ খুলে দেয়। যাদের সকালে কাজে নেমে পড়তে হয় দ্রুত, তাদের কাছে কফি যেন এক অলৌকিক শক্তির উৎস। এতে থাকা বেশি পরিমাণ ক্যাফেইন খুব দ্রুত কাজ করে, মনোযোগ বাড়ায়, ক্লান্তি দূর করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এক কাপ ব্ল্যাক কফি সকালবেলা শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে এবং ফ্যাট বার্নিংয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখে। তাই যারা স্বাস্থ্য সচেতন, তাদের অনেকেই সকালে কফিকেই বেছে নেন। কোনটা বেশি স্বাস্থ্যকর? চা এবং কফি—দু’টোর মধ্যেই রয়েছে স্বাস্থ্য উপকারিতা। চায়ে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন ক্যাটেচিন এবং ফ্ল্যাভোনয়েডস হৃদরোগ, ক্যানসারসহ নানা জটিল রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। গ্রিন টি তো একেবারে স্বাস্থ্য সচেতনদের প্রিয়। অন্যদিকে কফির মধ্যেও রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং নানা উপকারী উপাদান যা টাইপ—২ ডায়াবেটিস, পারকিনসনস ডিজিজ এবং অ্যালজাইমার্স প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। তবে একটা বড় পার্থক্য হলো—কফির অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণে উদ্বেগ, ঘুমের সমস্যা, হৃদকম্পন ইত্যাদি হতে পারে। অন্যদিকে চা তুলনামূলকভাবে বেশি সহনীয় এবং দীর্ঘমেয়াদে কম পাশ^র্প্রতিক্রিয়ামূলক। জীবনধারা ও অভ্যাস নির্ভর সকালে চা ভালো, না কফি—এই প্রশ্নের উত্তর অনেকাংশেই নির্ভর করে ব্যক্তির জীবনধারা ও স্বাস্থ্যের ওপর। কেউ যদি খুব সকালে উঠে ধীরে ধীরে দিন শুরু করেন, কিছুক্ষণ বই পড়ে, প্রার্থনা করেন বা নিজেকে সময় দেন—তাদের জন্য চা একটি উপযুক্ত সঙ্গী। আবার অফিস শুরু হতেই যদি ছুটতে হয়, মাথা ঠান্ডা রাখতে না পারলে সমস্যা হয়, তবে এক কাপ কফি প্রয়োজনীয় জ্বালানির মতো কাজ করে। অনেকেই আবার দুটোই পছন্দ করেন—সকালে কফি, বিকেলে চা। এতে শরীর ও মন দুটোকেই যথাযথভাবে সাড়া দেওয়া যায়।চা বনাম কফি, এই লড়াইয়ে নির্দিষ্ট করে জেতার কেউ নেই। বরং আপনার শারীরিক চাহিদা, মানসিক অবস্থা, এবং সকালের অভ্যাস—এই তিনটাই ঠিক করে দেবে কোনটা আপনার জন্য উপযুক্ত। কেউ হয়তো সকালে এক কাপ লাল চা নিয়ে প্রকৃতির শব্দে মুগ্ধ হন, আবার কেউ কফির তীব্রতায় জেগে উঠে নতুন দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত হন। দিনের শুরুটা হোক যেভাবেই চা বা কফি, দুটোই যদি আপনাকে ইতিবাচকতায় ভরিয়ে তোলে, তবে সেটাই আপনার জন্য সেরা সকাল।

© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com