জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে ॥ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনের জন্য এক স্ট্যাম্প প্যাড কিনতেই কাহিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অধিক স্বচ্ছতা দেখাতে গিয়েই ইসির ওই অবস্থা। সর্বন্মিন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়েই বিপাকে। যথাসময়ে মালামাল সরবরাহ না করায় ১৫ লাখ টাকা জরিমানা দিয়েছে ‘এ অ্যান্ড এ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে। আরও চারটি প্রতিষ্ঠান বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় ফেল করেছে। এর আগে আরও আটটি প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হয়েছিল। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, একটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার জন্য ১১ ধরণের নির্বাচনী সামগ্রী লাগে। এর মধ্যে স্ট্যাম্প প্যাড, লাল গালা, মনোনয়ন ফরম, অফিসিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাস সিল, অমোচনীয় কালির কলম, গানি ব্যাগ, হেসিয়ান ব্যাগ (বড়), হেসিয়ান ব্যাগ (ছোট) ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের লক। ইসি সূত্র বলছে, এক স্ট্যাম্প প্যাড কিনতেই গলধঘর্ম ইসির। অধিক স্বচ্ছতাই মূল কারণ। কারণ এই পণ্যটির ইসির চাহিদা বা স্পেসিপিকেশন অনুযায়ী বাজারদর ৬৯ টাকা। সংসদ নির্বাচনের জন্য দরকার ৮ লাখ ১৫ হাজার। দেখা যাচ্ছে, দেশের কিছু কিছু দরদাতা প্রতিষ্ঠান বাস্তব দাম যাচাই না করে কাজটি পেতে সর্বনিম্ন দাম দরপত্রে উল্লেখ করে টেন্ডার ড্রপস করেন। দরপত্র উন্মুক্ত হওয়ার পর সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেকে কাজটি পেয়ে যাচ্ছে এ ধরণের মূল্য সংযোজন করা প্রতিষ্ঠানটি। নির্বাচন কমিশন বলছে, বাস্তবতার নিরিখে এটা সম্ভব নয়; আমরাও জানি। কিন্তু যেনো দূর্নাম গাঁয়ে না মাখতে হয়, – তাই কাজটি ওই প্রতিষ্ঠাকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু যখন পণ্য সরবরাহের সময় ঘনিয়ে আসে তখন এ ধরণের প্রতিষ্ঠানগুলো নানা বাহনায় আমাদের পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এমন একটি প্রতিষ্ঠানের নাম হচ্ছে ‘এ অ্যান্ড এ’। এই প্রতিষ্ঠানটি ১৫ লাখ টাকা জামানাতের শর্তে সর্বনিম্ন দরদাতা হন। তার সরবরাহ করা পণ্যের নাম ছিল স্ট্যাম্প প্যাড। তিনি প্রতিটি স্ট্যাম্প প্যাড ইসিকে সরবরাহের জন্য মূল্য দিয়েছিল মাত্র ২৫ টাকা। কাজে নেমে জানতে পারেন তাদের দেয়া দরমূল্যের সঙ্গে বাজারের প্রকৃত ওই পণ্যের বিস্তর তফাত। এক পর্যায়ে ওই প্রতিষ্ঠানটি বাজার বিশ্লেষণ করে জানতে পারেন তাদের পণ্যটি সরবরাহ করলে লাভের বদলে অতিরিক্ত ৩৩ লাখ টাকা আর্থিক ক্ষতি হবে। তাই পণ্যটি সরবরাহ না করার বিষয়ে ইসিকে জানালে তাদের দেয়া চুক্তির জামানত রাখা অর্থ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। যার পরিমাণ ১৫ লাখ টাকা। একই ভাবে, এই স্ট্যাম্প প্যাড সরবরাহের জন্য আরও চারটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহী হন। পরে তাদের আগাম নমূনা পাঠাতে ইসির থেকে নিদের্শনা দেয়া হয়। তাদের দেয়া নমূনা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডাড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। পরীক্ষায় চারটি প্রতিষ্ঠানের দেয়া পণ্যের নমূনা ইসির স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী হয়নি অর্থাৎ পরীক্ষায় অযোগ্য হয়। প্রতিষ্ঠান চারটি হচ্ছে, ডিজাইন ডেভেলপার, আইকন ইলেকট্রনিক লিমিটেড, সফট্ বাংলা ও এম/এস বেলার অ্যান্ড ব্রাদার্স। এর আগে আরও আটটি প্রতিষ্ঠান তাদের দেয়া নমূনা বিএসটিআই এর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে এ আশঙ্কায় কমিশন তথ্যটি গোপন রেখেছে। জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের সামগ্রী আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে কেনাকাটা সম্পন্ন করতে হবে। আগামী দু’মাসের কম সময়ের মধ্যে এগুলোর কাজ ও প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার জন্য নির্বাচনী পথনকশায় (রোডম্যাপ) নিদের্শনা রয়েছে। কিন্তু এক স্ট্যাম্প প্যাড কিনতেই গলধঘর্ম অবস্থা ইসির। এখন নতুন দরপত্রের মাধ্যমে ওই পণ্যটি কিভাবে কেনা যায় সেজন্য নানা পথে এগোচ্ছে ইসি। ইসি সচিব মন্তব্য না করলেও অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, কেনাকাটায় শতভাগ স্বচ্ছতা বজার রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তুস্ট্যাম্প প্যাড কিনতে গিয়েই কাহিল অবস্থা। উল্লেখ্য আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান নিশ্চিত করেছেন। আর মধ্য নভেম্বরের পর এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করা হবে।