জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে ॥ চরম ঝুঁকিতে ভোটার জাতীয় তথ্যভান্ডারে সংরক্ষিত থাকা প্রায় ১২ কোটি নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য। বলা হচ্ছে, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এর ঝুঁকি কমেনি; বরং বেড়েছে। এ নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগের মধ্যে দেশের তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। বলছেন, এই থ্রেট বা হুমকি কমাতে দরকার তৃতীয় পক্ষ (থার্ড পার্টি) দিয়ে সার্ভারকে তদারকি বা মনিটরিং বাড়ানো। একই সঙ্গে এনআইডির সিস্টেমকে আবশ্যিকভাবে ভার্নারাবিলিটি অ্যাসেসমেন্ট পিনেট্রেশন টেস্ট (ভিএপিটি) করানোর দাবি জোরদার করার তাগিদ দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) বিশেষজ্ঞদের মতামতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেনি। তবে তাদের দাবী, নির্বাচন কমিশনের ডাটাবেজ ফিজিক্যালি এবং লজিক্যালি সিকিউরিটি দ্বারা সুরক্ষিত। এখানে প্রায় সকল ধরণের সিকিউরিটি মেইনটেন্ট করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত অভ্যন্তরীণভাবে চেক করা হয়েছে, তথ্য ভান্ডারের কোন দুর্বলতা পাওয়া যায়নি। ভোটার তথ্য ভান্ডারের সার্ভার সুরক্ষিত। এদিকে, নাগরিকের তথ্য ফাঁস নিয়ে সম্প্রতি দেশজুড়ে হইচই পড়ে যায়। তবে, আইটি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডাটা ফাঁস হওয়ার ঘটনাটি মূলত হ্যাকার ইনসিডেন্ট নয়; এটি সিস্টেমের দুর্বলতা (উইকনেস)। এর পরও সাইবার আক্রমন ঠেকাতে বর্তমান সরকারকে সতর্ক থেকে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে। তথ্য ফাঁস নিয়ে দেশের প্রতিথযশা তথ্য প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে মত-বিনিময় সভার কার্যবিবরণিতে এসব আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে। কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলমের সভাপতিত্বে গত আগস্টে এ সভাটি আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। তথ্য ভান্ডার ঝুঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম হুমায়ূন কবীর মন্তব্য না করে আইডিয়া প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ব্রি. জে. আবুল হাসনাত মো সায়েম এর সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। তবে কয়েকদফা তার সেলফোনে কথা বলার চেষ্টা করা হয় প্রতিদিনের সংবাদের পক্ষ থেকে। তবে তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে এনআইডির সিস্টেম ম্যানেজার মো. আশরাফ হোসেন বলেন, ভোটার তথ্য-ভান্ডার নিয়ে কোনো ঝুঁকি নেই। এটি সম্পূর্ণ সুরক্ষিত। আর ব্যক্তির গোপনীয় তথ্য ফাঁস হওয়া নিয়ে আমরা স্টেকহোন্ডারদের সর্তক করেছ্।ি ইসির তথ্যমতে, ২০০৭ সালে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বে এবং সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ছবিসহ ভোটার তালিকার কাজ শুরু হয়। তখন আট কোটি ১০ লাখ ভোটারকে তালিকাভুক্ত করা হয়। বর্তমানে ইসির ডাটাবেজে ভোটার সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি। তবে নাগরিকের তথ্য সুরক্ষিত নয়। দেশের আইটি এক্সপার্টদের বক্তব্যের মধ্যে সেটা ফুটেও উঠেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউভার্সির্টির ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ২০০৭-০৮ সালে যখন ইসির এই ডাটাবেজ গড়ে ওঠে, তখন নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট ছিল না। কিন্তু কালের বিবর্তনে ডাটাবেজের এক্সপানসন হয়েছে এবং পার্টনার সার্ভিসের কারণে এই ডাটাবেজ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ডাটাবেজের সঙ্গে একভূত করা হয়েছে। সুতরাং তথ্য ভান্ডারের ঝুঁকি কমেনি; বরং অনেকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ডা. অনিন্দ্য ইকবাল বলেন, ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান যখন সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে সফটওয়্যার হস্তান্তর করে, তখন তারা সঠিকভাবে কাজটি বুঝে নিতে পারে না। এটা ইসির দুর্বলতা। আবার সিকিউরিটটি কমপ্লায়িন্স মান্থলি বা পিরিওডিক্যালী সমন্বয় করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানা হয় না। ওয়েবসাইট যদি এইচটিটিপিএস হয়, সেটি বার্ষিক নবায়ন করার প্রয়োজন হয়, সেটি করা হচ্ছে কি না সেদিকে নজর দিতে হবে। একই সঙ্গে এনআইডির প্রযুক্তিটিকে আবশ্যিকভাবে ভার্নারেবিলিটি এসেসমেন্ট পিনেট্রেটিশন টেস্ট করার উপরে জোর দেন এই বিশেজ্ঞ। তিনি বলেন, এসব পদ্ধতিগুলো সঠিকভাবে তদারকি না করা যায়, তাহলে জাতীয় পরিচয়পত্রের গোপনীয়তা ক্ষুন্ন হবে বলে আশঙ্ক প্রকাশ করেন এই এক্সপার্ট। দুর্বলতার দিক না গিয়ে ইসির ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটি বাংলাদেশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক নাজমুল হুদা বলেন, কমিশনের ডাটাবেজ ফিজিক্যালি এবং লজিক্যাল সিকিউরিটি দ্বারা সুরক্ষিত। এখানে প্রায় সকল ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করা হয়। জানান, ইতিমধ্যে অভ্যন্তরীণভাবে ডাটাবেজ চেক করা হয়েছে, কোন দুর্বলতা পাওয়া যায়নি।