এফএনএস আন্তজার্তিক ডেস্ক: দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতিতে ফের একবার দুঃসময়ের ছায়া। সাবেক প্রেসিডেন্ট মুন জে—ইন—এর বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ এনে দুর্নীতির মামলার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেছে দেশটির প্রসিকিউটররা। অভিযোগ, প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় নিজের জামাতাকে একটি বিমান সংস্থায় উচ্চপদে চাকরি পাইয়ে দিতে বিপুল অঙ্কের ঘুষ গ্রহণ করেছিলেন তিনি।
চেওনজু জেলা প্রসিকিউটরদের মতে, ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ২১৭ মিলিয়ন ওন (প্রায় দেড় লাখ মার্কিন ডলার) ঘুষ নেওয়ার মাধ্যমে মুন এই অনৈতিক কাজটি করেছেন। এই অর্থ মুনের জামাতাকে বেতন ও অন্যান্য সুবিধা হিসেবে প্রদান করা হলেও তদন্তকারীদের দাবি, প্রকৃতপক্ষে এটি ‘ঘুষ’ হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।
এই মামলার ফলে এক অস্বস্তিকর বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। কারণ, বর্তমানে দুই সাবেক প্রেসিডেন্ট একসঙ্গে আইনের মুখোমুখি।
ক্স একজন মুন জে—ইন, যিনি ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন।
ক্স আরেকজন ইউন সুক ইওল, যিনি সাম্প্রতিক সামরিক আইন জারির ঘটনায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে বিচারের সম্মুখীন।
সাম্প্রতিক এক রাজনৈতিক নাটকে, ইউন সুক ইওল মাত্র ছয় ঘণ্টার জন্য মার্শাল ল বা সামরিক শাসন জারি করেন, যা তাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে জীবন কারাদণ্ড অথবা মৃত্যুদণ্ডের রায় আসতে পারে, যদিও দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৯৯৭ সালের পর থেকে কার্যত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়নি।
প্রসিকিউটরদের মতে, সাবেক প্রেসিডেন্ট মুন নিজের প্রভাব খাটিয়ে জামাতাকে “থাই ইস্টার জেট” নামক একটি স্বল্প—মূল্যের বিমান সংস্থায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেন। যদিও তার জামাতার এই পদে যোগ দেওয়ার মতো কোনো প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা কিংবা যোগ্যতা ছিল না। অভিযোগ অনুযায়ী, বিমান সংস্থাটি ছিল মুনের দলীয় এক সাবেক সংসদ সদস্যের নিয়ন্ত্রণাধীন, যারা প্রেসিডেন্টের আনুকূল্য লাভের আশায় এই নিয়োগ দেন।
এদিকে, সময়ের ব্যবধানে মুনের মেয়ে ও জামাতার মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। এতে ব্যক্তিগত সম্পর্কের প্রভাব ও তার অপব্যবহারের বিষয়টি ঘিরে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
মুন জে—ইন আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত ছিলেন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণকারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে। তার সময়েই উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন ও যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ঐতিহাসিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই শান্তিপ্রিয় ইমেজের বিপরীতে দুর্নীতির এমন অভিযোগ তার ভাবমূর্তি ও রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে বড় ধরনের দাগ ফেলতে পারে।
দেশটিতে আগামী ৩ জুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তার আগে এমন দুর্নীতির মামলা রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিরোধী দলগুলো এই অভিযোগকে বর্তমান সরকারব্যবস্থার দুর্বলতা হিসেবে দেখিয়ে নিজেদের অবস্থান জোরদার করার চেষ্টা চালাতে পারে।