মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২২ পূর্বাহ্ন

এলএনজি কিনতে অর্থের সংস্থান নিয়ে বিপাকে পেট্রোবাংলা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৭ জুলাই, ২০২২

এফএনএস : তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনতে পর্যাপ্ত অর্থের সংস্থান নিয়ে বিপাকে পেট্রোবাংলা। বিগত এক বছর ধরেই এলএনজির দাম পরিশোধে অর্থ বিভাগের কাছ থেকে পেট্রোবাংলা টাকা নিচ্ছে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী অর্থ বিভাগও পেট্রোবাংলাকে টাকা দিতে পারছে না। সর্বশেষ গত মে মাসে অর্থ বিভাগ গ্যাস উন্নয়ন তহবিল (জিডিএফ) থেকে পেট্রোবাংলাকে এলএনজি কেনার জন্য ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। শর্তসাপেক্ষে পেট্রোবাংলাকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ওই অর্থ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম ৪০ ডলার ছুঁইছুঁই। জ¦ালানি পণ্যটির দাম দুই সপ্তাহ ধরে আবারো ঊর্ধ্বমুখী ধারায়। তবে শুধু পণ্যটির উচ্চমূল্যই নয়, স্পট থেকে এলএনজি কিনতে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তারও সংস্থান করতে পারছে না পেট্রোবাংলা। এমন পরিস্থিতিতে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত থেকে জ¦ালানি বিভাগ আপাতত সরে এসেছে। সেক্ষেত্রে জ¦ালানি পণ্যটির দাম না কমা পর্যন্ত দেশীয় উৎস থেকেই চাহিদা পূরণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। জ¦ালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে অস্বাভাবিক হারে এলএনজির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় আগস্ট থেকে স্পট মার্কেটের এলএনজি আমদানি না করার সাময়িক সিদ্ধান্ত হয়েছে। এমন অবস্থায় জাতীয় গ্রিডে যে পরিমাণ গ্যাস ঘাটতি হবে তা দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে জোগান দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেজন্য বেশ কয়েকটি ক‚পে ওয়ার্কওভার করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ স্পট মার্কেট থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম কার্গো আমদানি করে। ওই সময় প্রতি এমএমবিটিইউ ৪-৫ ডলার দামে কেনা হয়। তখন এক কার্গো এলএনজি কিনতে ৩০০-৩৫০ কোটি টাকা খরচ হতো। কিন্তু বৈশ্বিকভাবে এলএনজির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে এক কার্গো এলএনজি কিনতে তিন-চার গুণ বেশি অর্থ গুনতে হচ্ছে। স্পট মার্কেটে জ¦ালানি পণ্যটির দামের অস্থিতিশীলতা প্রভাব পেট্রোবাংলার ওপরও পড়েছে। সেজন্যই এলএনজি কিনতে পর্যাপ্ত অর্থের সংস্থান করতে পারছে না পেট্রোবাংলা। সূত্র জানায়, বৈশ্বিক চাহিদার কারণে গত বছরের শেষার্ধে স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম বাড়তে থাকে। স্পট মার্কেট থেকে জ¦ালানি পণ্যটি আমদানিতে তখন পেট্রোবাংলার ব্যয় হয় প্রতি এমএমবিটিইউ ৩৫ ডলার ৮৯ সেন্ট। একপর্যায়ে স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম ৫৫ ডলারের ওপরে উঠে যায়। জ¦ালানি পণ্যটির দাম পরবর্তী সময়ে ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। স্পট মার্কেটে এলএনজির দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বজায় ছিল। যদিও তারপর দুই মাস ধরে জ¦ালানি পণ্যটির দাম ধারাবাহিকভাবে কমেছে। কিন্তু সর্বশেষ দুই সপ্তাহে এলএনজির দাম আবারো ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরেছে। এশিয়ার স্পট মার্কেটে গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে টওাত এমএমবিটিইউ এলএনজির গড় মূল্য ছিল ২২ ডলার ৪০ সেন্ট। বর্তমানে এশিয়ার বাজারে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজি ৩৮-৪০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। মে মাসের মাঝামাঝি সময়েও জ¦ালানি পণ্যটি ২৩ ডলারের কাছাকাছি দামে বিক্রি হয়েছিল। বাজারের এমন অস্থিতিশীলতা বজায় থাকলে জ¦ালানি পণ্যটির দাম আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সূত্র আরো জানায়, চলতি বছরের ফেব্র“য়ারির পর এলএনজির দাম কমতে থাকায় স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কার্গো কেনে পেট্রোবাংলা। তখন দামের পতন হওয়ায় পর পর কয়েক মাস এলএনজি ক্রয়ে পেট্রোবাংলার সাশ্রয়ীও হয়। তবে জুনের শেষ সপ্তাহে স্পট মার্কেটে ফের ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে। এ অবস্থায় স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি না কেনার সিদ্ধান্ত নেয় জ¦ালানি বিভাগ। মূলত দুটি কারণে বর্তমানে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি না কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার একটি আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, অন্যদিকে এলএনজি কেনার জন্য যে অর্থ তা পেট্রোবাংলার কাছে না থাকা। পরিস্থিতি এমন যে এক কার্গো এলএনজি কেনার মতো অর্থের সংস্থান হচ্ছে না। মূলত ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি জ¦ালানি তেল ও গ্যাসের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় আমদানিনির্ভর দেশগুলো চরম বিপাকে পড়েছে। ঠিকমতো পণ্য সরবরাহ, দামে অস্থিরতার কারণে আমদানিকারক দেশগুলো বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। বিশেষ করে জ¦ালানি পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় নিত্যপণ্যের দাম ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। যুদ্ধ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আগামীতে জ¦ালানির বাজার অস্থিরতা আরো বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে বৈশ্বিক জ¦ালানি বাজারের অস্থিরতায় দেশের জ¦ালানি খাতেও ক্রমেই চাপ তৈরি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ¦ালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে ডিজেল ও অকটেন বিক্রিতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) দৈনিক ১০০ কোটি টাকার বেশি লোকসান হচ্ছে। বœ এলএনজির দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী স্পট মার্কেট থেকে কেনা যাচ্ছে না এলএনজি। তার টওভাবও দেশের বিদ্যুৎ খাতে পড়েছে। দেশের গ্যাসের সংকট থাকায় প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। গত ২৮ জুন গ্যাস সরবরাহ সংকট থাকায় ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটের বেশি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ ছিল। ওসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবর্তে ব্যয়বহুল তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালিয়ে সামাল দেয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সংকটের কারণে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। আর সেটি কখনো কমবেশিও হচ্ছে। যে পরিমাণ গ্যাস সংকট থাকছে তা তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র চালিয়ে সরবরাহ ঠিক রাখা হচ্ছে। জ¦ালানি তেলের মূল্য বেশি হলেও পরিস্থিতি সামাল দেয়ার ক্ষেত্রে কিছু করার নেই। অন্যদিকে পেট্রোবাংলা দৈনিক গ্যাস উৎপাদন প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী স্থানীয় গ্যাস উৎপাদন ও এলএনজি মিলিয়ে দৈনিক প্রায় ৩০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হচ্ছে। গত ২৯ জুনের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের জাতীয় গ্রিডে মোট ২৯৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হয়েছে। াৎর মধ্যে ৬১ কোটি ঘনফুট এলএনজি। দৈনিক টও্য় ৩০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার পরেও আরো অসবদত ১৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের সংকট থাকছে। সেজন্য বন্ধ রাখতে হচ্ছে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। একই সঙ্গে শিল্প-কারখানায়ও রেশনিং করে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এ অবস্থায় যদি জাতীয় গ্রিডে স্পট এলএনজি সরবরাহ কমে যায় সেই সংকট কীভাবে সামাল দেয়া হবে তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পেট্রোবাংলার কাছে নেই। তবে পট্রোবাংলার সাময়িক পরিকল্পনা অনুযায়ী স্পট এলএনজির সংকট সামাল দিতে দেশীয় গ্যাসক‚পের ওয়ার্কওভার করা হবে দ্রুত। একই সঙ্গে আগামী নভেম্বরে শেভরনের বেশ কয়েকটি ক‚পে ওয়ার্কওভার করার কথা রয়েছে। ওসব মিলিয়ে গ্যাসের সরবরাহ কিছুটা বাড়ানো যাবে বলে প্রত্যাশা পেট্রোবাংলার। একই সঙ্গে বর্তমানে রাত ১০টার পর দোকানপাট ও শপিং মল বন্ধের ঘোষণা থাকায় বিদ্যুৎ ব্যবহার কিছুটা কমেছে। যে পরিমাণ বিদ্যুৎ কম ব্যবহার হচ্ছে তার জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হচ্ছে। মূলদ বৈশ্বিক জ¦ালানি পণ্যের মূল্য এখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এটিই বাস্তবতা। আমদানিনির্ভর দেশগুলোর সবাই এখন ভুক্তভোগী। এ,স পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নিজস্ব অনুসন্ধান বাড়াতে হবে।’ এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান জানান, ‘বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে এলএলজির দামে যে অস্থিরতা তাতে স্পট থেকে পণ্যটি আমদানির সুযোগ সীমিত হয়ে আসছে। যতটুকু আমদানি না করলেই নয়, সেই পরিমাণ এলএনজি আমদানি করা হবে। আগামীতে বিশ্ববাজারে মূল্য হ্রাস পেলে এলএনজির আমদানি বাড়ানো যাবে। গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য স্পট থেকে যে পরিমাণ এলএনজি আমরা আমদানি করা হচ্চে, সেই পরিমাণ গ্যাস দেশীয় উৎস থেকে পূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য এরই মধ্যে ৪৬টি ক‚প খননের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে এবং কয়েকটি ক‚প খননের কাজ শুনি হয়েছে। আশা করা যায় কয়েকটি ক‚প থেকে স্বল্পমেয়াদে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। াছাড়া দীর্ঘমেয়াদি গ্যাস অনুসন্ধানেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com