জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ এলোমেলো পদায়ন চলছে সাংবিধানিক সংস্থা নির্বাচন কমিশনে (ইসি)। মানা হচ্ছে না জ্যেষ্ঠতা। ফলে অসন্তোষ বাড়ছে ইসিতে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে টানা ১৫ বছরে বিএনপির তকমা দিয়ে যাদের দূরে ঠেলে রাখা হয়েছিল; বর্তমানেও সে অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। দু—একজন ভালো অবস্থানে থাকলেও বেশির ভাগ রয়েছেন বঞ্চিতদের তালিকায়। অতীরের মতো সব সময় সুবিধাভোগী ওই চক্রই ঘূরে ফিরে পাচ্ছেন ভালো পোস্টিং—পদায়ন। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের পর সু—শাসন ফেরার বদলে নির্বাচন কমিশনে চলছে এক রকমের সেচ্ছাচারিতা। দুই কর্মকর্তার শাসন এবং তাদের পরামর্শে পদায়ন ও পদোন্নতির ফাইল উঠানামা করায় প্রকৃত ত্যাগীরা ছিটকে পড়ছেন। সংশ্লিস্ট ওই কর্মকর্তাকে নানা নীতিহীন কাজে সহযোগিতা করছেন আরেকজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ—দুজনের আচরণে সদ্য বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) সাবেক ইসি সচিব শফিউল আজিম—ও ছিলেন ত্যক্ত—বিরক্ত। এ প্রতিবেদকের কাছে ক্ষোভের সঙ্গে ওই দু’জনের বিষয়ে সদ্য ওএসডি হওয়া ইসি সচিব নানা নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন। এদিকে, নতুন সচিব হিসেবে সম্প্রতি যোগদান করেছেন বিসিএস—৮২ ব্যাচের সাবেক কর্মকর্তা আখতার আহমেদ। সফল ও চৌকস কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবনে ওনার সুনাম রয়েছে বলে তার ব্যাচের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপে জানা গেছে। কিন্তু তাকে কিছুটা অন্ধকারে রেখে অফিসিয়াল কার্যক্রম সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জনের আগেই সুবিধাভোগী চক্রটি তাদের ফায়দা হাসিলে রয়েছেন তৎপর। বাড়তি সুবিধা নিয়ে কাকে কোন পদে বসাবেন এ নিয়ে ওই কর্মকর্তা সার্বক্ষণিক থাকেন ব্যস্ত। ফলে ত্যাগী কর্মকর্তাদের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা ও ক্ষোভ। সবাই তাকিয়ে আছেন নতুন সচিবের দিক—নিদের্শনামূলক সিদ্ধান্তের দিকে। খেঁাজ নিয়ে জানা যায়, সদ্য ওএসডি সচিব দায়িত্ব নেয়ার পর পরই চারজন কর্মকর্তাকে ওএসডি করেন। এরা হলেন মো. জিল্লুর রহমান, রবিউল ইসলাম, জাহাঙ্গীর হোসেন ও ফরহাদ হোসেন। এদের মধ্যে বিগত সরকারের রোষানলে পড়া কর্মকর্তাও ছিলেন। পরবর্তীতে তাদের পদায়ন না করলেও খড়গ উঠিয়ে সংযুক্তি করা হয়েছে। এছাড়া ২০২০ সালে পদোন্নতি দেয়া হয় মো মোশাররফ হোসেন নামে এক কর্মকর্তাকে। বিগত চার বছরে ওই কর্মকর্তার ভাগ্যে জোটেনি ডেস্ক ও পদায়ন। এখনও ইসিতে সংযুক্তি হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন ওই কর্মকর্তা। তাছাড়া সিলেট ও নরসিংদী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার পদও শূন্য। এই পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে দায়সারাভাবে চালিয়ে নেয়া হচ্ছে কাজ। জনশ্রম্নতি রয়েছে মৌলভীবাজারের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে সিলেট জেলায় পদায়ন করার জন্য অন্য কাউকে পদায়ন করা হচ্ছে না। এ নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের মধ্যে। সূত্র জানিয়েছে, ইসির ৬৪টি জেলা নির্বাচন অফিসের মধ্যে ১৯টি জেলা (যেমন— ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, কুমিল্লা, রংপুর, রাজশাহী, বরিশাল ও চট্টগ্রাম) অফিসে উপ—সচিব এবং সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হয়। বাকি ৪৫টি জেলায় পদায়ন করা হয় জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা অথবা সিনিয়র সহকারী সচিবদের মধ্য থেকে। কিন্তু ঢাকা জেলায় পদায়ন করা হয়েছে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে জুনিয়র এক কর্মকর্তাকে। প্রথমে কৌশলে তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয় পরে পদায়ন করে পুরো দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অথচ ওই ব্যাচে তার মেধাক্রম—৮২। একই ভাবে, চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা করা হয়েছে জুনিয়র আরেক কর্মকর্তা বশির আহমেদকে। এ কর্মকর্তার তার ব্যাচে অবস্থান ১০০ এর নিচে। এই কর্মকর্তার প্রাইজ পোস্টিং পাওয়ার নেপথ্যে পদস্থ কর্মকর্তাকে একটি দামী স্মার্টফোন উপহার দেয়া। অথচ চট্টগ্রাম ও ঢাকায় উপ—সচিব ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের মধ্যে যোগ্যদের পদায়ন করার কথা। এক কর্মকর্তার কতৃর্ত্ব ও তাকে জি হুজুর জি হুজুর করবেন এমন আওয়ামী দোসরদের নিয়ম ও নীতির তোয়াক্কা না করে উচ্চপদে পদায়ন করা হচ্ছে। এই বিতর্কিত পদায়ন নিয়ে নানা ট্রল চলছে ইসিতে। এমনকি এনআইডি অপারেশনে মাঠ পর্যায়ে চাকরিরত একজন কর্মকর্তাকে বসানোর জন্য তৎপর রয়েছে চক্রটি। ২০০৫ ব্যাচের দু’জন কর্মকর্তা সাবেক একজন আমলার নাম ভাঙিয়ে সব অনৈতিক কাজকে বৈধ করার চেষ্টায় তৎপর রয়েছে। এর ফলে ইসি সচিবালয়সহ মাঠ অফিসে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সিনিয়র কর্মকর্তাদের ডিঙিয়ে জুনিয়রদের গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর জেলায় পদায়ন করা হচ্ছে, — এতে নিয়মের ব্যত্যয় হচ্ছে কি না জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব কে, এম, আলী নেওয়াজ বলেন, আপনি কি এ বিষয়ে কথা বলতে আসছেন। যাই করছি নিয়ম মেনেই করছি। এমনকি আমি ইসির অতিরিক্ত সচিব কোন জেলায় সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে পদায়ন প্রয়োজন সেটা আমি জানি। ঢাকা ও চট্টগ্রামে যাদেরকে পদায়ন করা হচ্ছে সবাইকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হচ্ছে, যোগ করেন প্রশাসন সার্ভিসের এই কর্মকর্তা। কমিশনের মাঠ অফিসের সঙ্গে ইসির প্রথম সভা আজ : প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধিন কমিশনের সঙ্গে তার অধীনস্থ মাঠ অফিসের (আঞ্চলিক ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা) কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রথম মতবিনিময় সভা আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে এই মতবিনিময় সভায় দু’পক্ষই তাদের কর্মকান্ড তুলে ধরবেন। সভায় ইসি সচিবসহ উপ—সচিব পদ মর্যাদার কর্মকর্তারা মতবিনিময় সভায় উপস্থিত থাকার বিষয়ে নোর্টিশ জারি করা হয়েছে। আগামী এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে একটা দিক—নিদের্শনা দেয়া হতে পারে। কারণ তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মাদ ইউনূস নির্বাচন বিষয়ে মন্তব্য করার পর পরই ইসির মাঠ অফিসের সঙ্গে কমিশনের মতবিনিময় তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা।