এ মৌনতা আমার চাই না
অশোক কুমার বিশ্বাস
—————————————–
ইদানীং কি যে হয়েছে আমার!
চোখ বুঝলেই মনি দু’টো বিদ্রোহী হয়ে উঠে ;
হাজার চেষ্টাতেও যেন বশে আনা যায়না
অবলীলায় সে নোনাজল বানিজ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়ে
চোখের অসুখ ভেবে ডাক্তারের পরামর্শে
মাঝে মাঝে টিয়ারফ্রেস তো দেই!
তবুও চোখ বাধা মানে না——
বলে— আখিঁজল পবিত্র, বিশুদ্ধ
মনের অকপট প্রস্রবণ—
আমারে অবহেলা করো না ;
আমাকে না শাসিয়ে নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করো।
মনের কাছে যেতে বড় ভয় ভয় লাগে আজকাল
মন মানেই তো সেই নষ্টালজিক
স্মৃতি-বিস্মৃতির মহাকাব্য
আনন্দ বেদনার চিরকালের অতীত;
যেথায় আমার পিতৃহারা শৈশব,
মায়ের এক সাগর ভালোবাসার এক দুরন্ত কৈশোর,
যৌবনের ঊষালগ্নে অবোধ প্রেমের লুকোচুরি খেলা ;
তারপর…
জীবনস্রোতে ভেসে চলা এক অতি
সাধারণ জীবনের গল্প ;
যে গল্পে মিশে আছে—
জীবনের হাজারো হাসি-আনন্দ বেদনার গান
ইন্দুলেখার সুখের সংসারে প্রাণের উৎসব
কল্পনার ভুবনে শ্রীলেখার আকস্মিক অন্তর্ধান
কিংবা সুগভীর মৌনতার আঁধারে
আমার নিত্যদিনের বিরহ-বাসর।
জীবনের এই প্রান্তসীমায়
চোখদু’টি প্রায়শঃই অবাধ্য আচরণ করে
মনের অবস্থাও তথৈবচ ;
কেউ আজ আর নিয়ন্ত্রণে নেই
কেউ আর কথা শুনতে চায় না
বাধ্য হয়েই আপনমনে মৌনতাকে বরন করি ;
তাতেও কি শান্তি আছে ?
সেও এক দুঃসহ যন্ত্রণা!
মৌনতার নিঃসীম আঁধারে
নিস্পৃহ উত্তেজনায় সমগ্র শরীর যখন কম্পমান
ঠোঁট দুটি আড়ষ্ট প্রায়
অবসন্ন দেহে হৃদক্রিয়া বন্ধ প্রায়
তখন নির্বাক সংলাপে আপনমনে চিৎকার করি—-
এ মৌনতা আমার চাই না
এই দুর্বোধ্য মন আমার চাই না
এই অবাধ্য আঁখিজল আমি চাই না
ফিরিয়ে দাও—
ফিরিয়ে দাও আমার মায়ের কোল
ফিরিয়ে দাও আমার কাদামাটির শৈশব
ফিরিয়ে দাও সেই দুরন্ত কৈশোর
ফিরিয়ে দাও আমার উনিশের অবুঝ প্রেম
ফিরিয়ে দাও আমার চিরচেনা অতীত।