জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে ॥ অন টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) কান্ডে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ‘আষাঢ়ে গল্প’। বলছেন, তাদের লগিং ছাড়াই চলে আসছে তাদের ব্যক্তির ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে ওটিপি। এমন আজগুবি, ভূতুড়ে ও কাল্পনিক উদ্ভাবিত কল্প-কাহিনী শুনাচ্ছেন কর্মকর্তারা। যা শুনে বিব্রত ও অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি)। কিছুদিন ধরেই পুরনো ইস্যুটির পুনরাবৃত্তি ঘটনায় ‘হুলুস্থুল’ পড়েছে এনআইডিতে। দায় নিতে নারাজ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। বলছেন, তার অজান্তেই ঘটেছে এমন অদ্ভুদ ঘটনা। তবে, ইসির তথ্য-প্রযুক্তি শাখা বলছে, এমন হওয়া অসম্ভব। কারণ অন টাইম পাসওয়ার্ড, যা সাময়িক গোপন পিন কোড। কেবলমাত্র লগিং করার পর একবারের জন্য বৈধতার স্বীকৃতির জন্য আপনার ব্যক্তিগত নংটিতে আসবে। এটি বিশ্বের সব নামিদামি গবেষক ও বৈজ্ঞানিক দিয়ে তদন্ত করেও রহস্য ভেদ করা যাবে না। আরও বলছেন, আপনি আপনার মোবাইল কম্প্রোমাইজ করে রেখে দিবেন, সেই চোর আপনি ধরবেন কেমন করে। সম্ভব! বলেন, শুধু এটার ক্ষেত্রে না। বিকাশ, রকেট ও নগদ এটার ক্ষেত্রেও ওটিপি আসে। সেটা কিন্তু বলার সুযোগ নেই, – আসে নাই। কারণ প্রতিটি ইউজার আইডির জন্য থাকে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয়, যা নিজের যোগসাজস ছাড়া ভেদ করা অকাল্পনিক। ইসিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের এনআইডিতে কর্মরত একজন সহকারি পরিচালকের (মহিলা) ইউজার আইডি ব্যবহার করে ৩০০কিলোমিটার দূরে যশোরের শার্শা উপজেলায় সংশোধন না হওয়ার যোগ্য এমন এনআইডি তড়ৎি সংশোধন হয়ে যায়। একটি-দুটি নয়, একাধারে ৬৩টি আবেদন কর্মকর্তার অজ্ঞাতে নিষ্পত্তি হয়। অস্বাভাবিক এই ঘটনায় হইচই পড়ে যায়, প্রশ্ন উঠেছিল এনআইডির সুরক্ষিত তথ্য-ভান্ডার নিয়ে। পরে সেগুলোকে রোল-ব্যাক করে পূর্বের অবস্থায় নিয়ে লক করে দেয়া হয়। তদন্তে কর্মকর্তা নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও তদন্তে তার দায় এড়াতে না পারায় বর্তমানে বরখাস্ত রয়েছে। বলা যায়, চক্রকারে ঘটছে ঘটনাটি। ফলে ফের ’হুলুস্থুল’ পড়েছে এইআইডিতে। কারণ কুমিল্লার সাবেক আঞ্চলিক কর্মকর্তা (বর্তমান এনআইডির পরিচালক অপারেশন) ফরহাদ হোসেনের ব্যক্তিগত সেলফোনে ওটিপি আসে। তার দাবি লগিং করেননি, অথচ ওটিপি চলে এসেছে। ওই কর্মকর্তা তখন স্টেশনেও ছিলেন না। কিভাবে এই ওটিপি তার ব্যক্তিগত মোবাইলে এলো, তিনি নিজেও জানেন না। অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে প্রতিকার চেয়ে এনআইডিতে আবেদন করেন। কথা হয় এ কর্মকর্তার সঙ্গে। বলেন, আমি অফিসের প্রয়োজনে অন্য একটি স্টেশনে কর্মরত ছিলাম। ইউজার আইডি লগিং করেনি, অথচ ওটিপি দেখে হতবাক বয়ে যায়। এমটি হওয়ার কথা না। তাই বিষয়টির সুরাহ করার জন্য এনআইডি উইংয়ে ঘটনার বিবরণ দিয়ে আবেদন করেছি। শুনেছি তদন্ত চলছে। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটেছে, ফরিদপুরের সাবেক আঞ্চনিক কর্মকর্তা মো. দুলাল তালুকদার এর ক্ষেত্রে। তিনিও দায় এড়াতে এনআইডি উইংয়ে অপরাধী সনাক্তে অভিযোগ পেশ করেছেন। বলেছেন, ‘ওটিপি’ কান্ডে তিনি জড়িত নন। এ ঘটনার তদন্ত চলছে। মো. দুলাল তালুকদারকে কয়েক দফা ফোন করা হয়, রিং বাজলেও রিসিভ না করায় মন্তব্য সংযোজন করা সম্ভব হয়নি। কর্মকর্তারা বলছেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা ইউজার আইডি ব্যবহারকারীর অজ্ঞাতসারে একান্ত মোবাইলে চলে আসছে ওটিপি বা সাময়িক গোপন পিন কোডটি। নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে প্রতিকার চেয়ে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হচ্ছেন। এমন ভুতূড়ে কর্মকান্ডে বিব্রত ওই কর্মকর্তা। পুরনো ঘটনাটি ফিরে আসায় অস্বস্তি ও বিব্রত নির্বাচন কমিশন-ও। তবে ইভিএম তৈরির নেতৃত্বে থাকা বুয়েটের অধ্যাপক এস এম লুৎফুল কবির বলেন, নিজের অজান্তে ওটিপি আসার কথা না। কর্মকর্তা নিশ্চয়ই বিশ্বস্ত কারো কাছে এটি শেয়ার করেছেন, তা না হলে সম্ভব না। কর্মকর্তারা দায় এড়াতে মিথ্যা বলছেন। এমন আষাড়ে গল্প শুনিয়ে পার পাওয়ার সুযোগ নেই। শাস্তি পেতে পারেন, তদন্তে দোষী সাবস্ত্য হলে। ইসির একাধিক কর্মকবর্তা বলেন, একজনের সংশোধন আরেকজন করে ফেলছে, – এটা আমরা বলবো অসম্ভব। কারণ এর নাড়ি-নক্ষত্র হাজার গবেষণা করেও বের করা যাবে না। কারণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার একটি ইউজার আইডি থাকে এবং একটি পাসওয়ার্ড থাকে। এটি লগিং করার পর ব্যক্তিগত মোবাইলে ওটিপি ( ভেরিফিকেশন নম্বর) আসে। তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যক্তির অগত্যসারে হওয়া সম্ভব না। বলেন, পাসওয়ার্ডটি না হয়, তর্কের খাতিয়ে ধরেই নিলাম অসাধু চক্র জেনে ফেললো। কিন্তু ওটিপি’তো যখন আপনি একক্সেস করবেন বা লগিং করবেন ওই সময়ে আপনার পে-অফ শো করবে বা সতর্ক করবে। আর ওই মোবাইলটা আপনার ব্যক্তিগত। এই মোবাইল থেকে যদি ওটিসি লিক হয়, তাহলে এটা আপনার ব্যর্থতা। এটার আর কোনো বক্তব্য নেই। বলেন, আমার ঘরে সম্পদ আছে, ঘর যদি অরক্ষিত হয়, – এর দায় চোরের না; পুরো দায় আপনার। সবসময় চোরকে দায়ী করতে চাই না আমরা। বলেন, চোর সৃষ্টি করার জন্যই; কিন্তু আমরাই দায়ী। প্রথমে আপনার ঘর সুরক্ষিত রাখবেন। পরে বিচার করা হবে চোরের। এমন একটা ব্যবস্থা করা হয়েছে নিতান্তই আপনার, এই জিনিষ অন্য কারো না। আপনার মোবাইল ছাড়া অন্য কোথাও যাওয়া সম্ভব না। এটাই ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড। ইসির সিষ্টেম ম্যানেজার আশরাফ হোসেন বলেন, ওটিপি ছাড়া যেহেতু এনআইডি সংশোধন, নাম কর্তন, নাম অন্তভুক্তির রাস্তা নেই। অথচ সংশ্লিস্ট কর্মকর্তা সন্দেহ করছে যে অন্যকেউ একক্সেস করছে, এটা আবিস্কার করা, – কোন দিনই সম্ভব না। এটা ওনিই ভালো বলতে পারবেন। ওনার মোবাইল নিয়ে কে এক্সেস করে। দুনিয়াতে এই জিনিষ আপনি কেমনে বের করবেন। আপনি আপনার মোবাইল কম্প্রোমাইজ করে রেখে দিবেন, সেই চোর আপনি ধরবেন কেমন করে। সম্ভব! শুধু এটার ক্ষেত্রে না। বিকাশ, রকেট ও নগদ এটার ক্ষেত্রেও ওটিপি আসে। সেটা কিন্তু বলার সুযোগ নেই আসে নাই। এনআইডির সাবেক এই সিষ্টেম ম্যানেজার আরও বলেন, আর ওটিপি ছাড়া আপনি এনআইডির ডাটাবেইজে ঢুকতেই পারবেন না। তদন্ত যতই দিবে, – এসব তদন্তের সুরাহ করার ক্ষমতা আমাদের নেই। এটি কি সম্ভব; ওনিই ভালো বলতে পারবেন। আর যদি বলি, – ওনার ঘনিষ্টজন ছাড়া লিক হওয়ার সুযোগ নেই। আক্ষেপ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, যখন শুনি এনআইডি সংশোধন নিয়ে ঘুষ বাণিজ্য চলে, – তখন মনটাই খারাপ হয়ে যায়। অনেক পরিশ্রম করি স্বচ্ছতার জন্য। মনে চাই, -যদি আল্লাহ দুই হাতের পরিবর্তে দশটি হাত দিতেন, তাহলে মানুষকে ওই হাত দিয়েই সাহায্য করতাম। এর পরও যদি শুনি ওমুক জায়গায় পয়সা দিয়ে করতে হয়েছে তখন কষ্ট লাগে। কারণ এটি নিজেদের প্রতিষ্ঠান তো।