মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:০২ অপরাহ্ন

কনকনে শীতে কাঁপছে জনজীবন

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ৬ জানুয়ারী, ২০২৫

কয়রা প্রতিনিধি \ “এই সব শীতের রাতে আমার হ্নদয়ে মৃত্যু আসে; বাইরে হয়তো শিশির ঝরছে, কিংবা পাতা, কিংবা প্যাচার গান; সেও শিশিরের মতো, হলুদ পাতার মতো। শীত রাত কবিতায় এভাবেই শীতের রুপ তুলে ধরেছেন কবি জীবনানন্দ দাশ। ঘড়িতে বেলা সাড়ে ১১টা। তখনো আকাশে দেখা নেই সূর্যের। ঘন কুয়াশায় মোড়া আজ কয়রা উপজেলা। সড়কে থাকা যানবাহনগুলো চলছে হেডলাইট জ¦ালিয়ে। একটু উষ্ণতার খোঁজে সড়কের পাশে আগুন জ¦ালিয়ে উষ্ণতা খুঁজছেন শীতে কাহিল মানুষজন। আজ রবিবার কয়রায় বিগত দিনের তুলনায় শীতের তীব্রতা বেশি দেখা গেছে। সাড়ে ১১ টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ২ দিন ধরে দেখা মিলছে না আকাশের পূর্ব দিগন্তে সূর্যের। স্বরুপে ফিরেছে শীতকাল। বইছে হিমেল হাওয়া। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে চারপাশ। কনকনে ঠান্ডায় কাঁপছে প্রকৃতি ও জনজীবন। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্ম। নিদারুন কষ্টে রয়েছেন খেটে খাওয়া নিম্ম আয়ের মানুষ। তাদের অনেকের পর্যাপ্ত গরম কাপড় নেই। উপজেলায় গত কয়েক দিন ধরেই শীত পড়ছে। শীতে বেশি বিপাকে পড়েছে বয়স্ক ও শিশুরা। ঠাণ্ডার কবল থেকে বাঁচতে খড়কুটোয় আগুন দিয়ে আগুন পোহায়ে একটু স্বস্তি খুঁজছেন অনেকে। কেউ কেউ চটের বস্তা গায়ে জড়িয়েছেন। পৌষের শীতে সবাই গরমের পোশাকে জবুথুবু। সকাল সন্ধ্যায় বাড়ির আঙিনায় ও রাস্তার পাশে আগুন পোহানোর দৃশ্য দেখা যায়। প্রচণ্ড শীতে আগুন পোহানোর দৃশ্যটি সবার কাছে পরিচিত, সেটা হলো শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে আগুন পোহানো। এমন চিত্র শুধু গ্রামেই দৃশ্যমান। রবিবার সকালে কয়রায় মহারাজপুর ও কালনা তিন রাস্তায় হাবিবুল্লাহর দোকানের পাশে খড়—কুটো দিয়ে আগুন ধরিয়ে চারপাশে ৮—১০ জন মত আগুন পোহাতে দেখতে পাওয়া যায়। কেউ দাড়িয়ে কেউ বসে, যে যেভাবে পারছেন আগুনের তাপ পোহাচ্ছেন। হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডায় সবাই জবুথবু শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার একই হাল। শীত থেকে বাঁচার সাধ্য কারও নেই। ঘন কুয়াশার কারনে দৃষ্টিসীমা সঙ্কুচিত হয়ে পড়ায় সড়কে যান চলাচল ঝঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এদিকে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কয়রায় বেড়েছে শীতের পোশাক কেনাবেচা। ক্রেতা—বিক্রেতাদের হাঁকডাকে জমজমাট হয়ে উঠেছে ফুটপাত। কয়রায় অফিস কর্মকর্তা হাসানুল হক বান্না বলেন, শুক্রবার তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ রবিবার ১২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আকাশ মেঘলা থাকায় শুক্রবারের তুলনায় তাপমাত্রা একটু বেড়েছে। সামনে আরও শীত বাড়বে। জানুয়ারি মাস জুড়েই শীতের প্রকোপ থাকবে খুলনায় কয়রায়। কাজের খেঁাজে সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন, ৬৫ বছর বয়সের আঃ খালেক সরদার। তিনি বলেন, আমাগো আবার কিসের শীত। যত শীতই নামুক কাজ তো করতেই হবে। পেটের ক্ষুধা মেটাতে হবে। একদিন কাজ না করলে খাবার বন্ধ থাকবে। তাই ততই শীত পড়–ক ভোরেই কাজে বের হতে হবে। একটা ভ্যান গাড়ির জন্য দাড়িয়ে আছি। শীতের কারনে মানুষ বাইরে বের হয় না কেউ কাজও সে রকম করায় না। কথা হয় ভ্যান চালক আকবর মোড়লের সাথে রাস্তার পাশে খড়—কুটো দিয়ে আগুন জ¦ালিয়ে বসে আছেন তিনি। সঙ্গে আরও কয়েকজন কে দেখা গেল। তিনি বলেন, আগে সকাল সাড়ে ৬ টায় ভ্যান নিয়ে বের হতেন। ঠান্ডা বেড়ে যাওয়ায় আজ বের হয়েছেন ১০ টায়্ আগুন পোহাতে পোহাতে কুয়াশা কমার অপেক্ষা করছেন তিনি। আসছে শীত, বাড়ছে রোগব্যাধি : শীতের কারনে বাড়তে শুরু করেছে বিভিন্ন শীতজনিত রোগব্যাধি। এরই মধ্যে উপজেলার হাসপাতালের আউটডোরে ঠান্ডাজনিত রোগী বাড়তে শুরু করেছে। চিকিৎসার পাশাপশি শীত জনিত রোগ থেকে নিরাময় থাকতে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিরনময় ঢালী বলেন, শীতে আগুন পোহাতে বেশি দেখা যায় গ্রামাঞ্চলে। এটা নতুন কিছু নয় পূর্বে থেকেই। তবে আগুন পোহানো থেকে বিরত থাকাই ভালো। তীব্র শীতে শিশু বৃদ্ধরা নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কাইটিস, জ¦র সর্দি কাশি ও শ^াসকষ্টসহ ঠান্ডাজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com