এফএনএস : করোনাকালে বাংলাদেশ থেকে আশাতীতভাবে ওষুধ রফতানি বেড়েছে। বর্তমানে দেশের চাহিদার ৯৮ ভাগ মিটিয়ে বাংলাদেশের প্রায় ৬০টি প্রতিষ্ঠানের তৈরি ওষুধ বিদেশে রফতানি হচ্ছে। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশেই বাংলাদেশের ওষুধের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে করোনা মহামারিতে তা আরো বেড়েছে। কারণ করোনায় বিশ্বজুড়েই ওষুধের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এদেশের তৈরি ওষুধের রফতানিও বেড়েই চলছে। বিশেষ করে করোনা প্রতিরোধী ওষুধের রফতানি বেড়েছে। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভির এবং ফ্যাভিপিরাভির চালান বেশি বেড়েছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিদেশে বর্তমানে বাংলাদেশী ওষুধের চাহিদা বাড়ায় ওই সুযোগ এদেশের রফতানিকারকরা কাজে লাগাচ্ছে। বর্তমানে বেক্সিমকো, এসকেএফ, ইনসেপ্টা, বিকন, স্কয়ার, পপুলার, অপসোনিন, এসিআই, রেনাটা এবং জিসকা ফার্মাসিউটিক্যালসের মতো প্রায় ২০টি কোম্পানি বিশ্বব্যাপী করোনার ওষুধ রফতানি করে। যদিও শুধু করোনা প্রতিরোধী ওষুধই নয়; মান উন্নয়ন ও নীতি সহায়তার কারণে এদেশ থেকে সব ধরনের ওষুধের রফতানিই বেড়েছে। তার মধ্যে উচ্চমূল্যের ওষুধও রয়েছে। ওষুধ শিল্প থেকে মোট রফতানি আয়ের প্রায় ২০ শতাংশই অনকোলজি বা ক্যান্সারের ওষুধ। সূত্র জানায়, বাংলাদেশের ওষুধ আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখছে। পাশাপাশি এদেশের ওষুধের দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় অনেক দেশই তা নিতে আগ্রহী। ফলে প্রতি বছরই ওষুধ রফতানির পরিমাণ ও দেশের সংখ্যা বাড়ছে। দেশের অনেক কোম্পানিই এখন আন্তর্জাতিক মানের ওষুধ তৈরি করছে। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর সার্টিফিকেশন সনদও পেয়েছে। ফলে ওসব দেশসহ অন্যান্য দেশে ওষুধ রফতানি পর্যায়ক্রমে বাড়ছে। আর করোনাকালে তা আরো বেড়েছে। বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধের মেধাস্বত্বে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ছাড়ের সুযোগ রয়েছে। তা কাজে লাগাতে সরকারের পক্ষ থেকেও ওষুধশিল্প বিকাশে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা আর বিশ্ববাজারের সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে ওষুধ রফতানিতে এশিয়ার শীর্ষে উঠে আসবে বাংলাদেশ। তবে অনেক ওষুধের কাঁচামাল ও মালবাহী পণ্যের ব্যয় অতিরিক্ত ভাড়াকে বর্তমানে এ খাতের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সূত্র আরো জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ওষুধ শিল্প খাতে রফতানির পরিমাণ ১০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২২ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি। তাছাড়া আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে রফতানি আয় বেড়েছে প্রায় ২ কোটি ডলার। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১০ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের ওষুধ রফতানি হয়েছে। যা গেল অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। মূলত করোনা মহামারিতে অন্য সব খাত যখন বিপর্যস্ত, তখন রফতানির ক্ষেত্রে চাঙ্গাভাব ধরে রেখেছে দেশের সম্ভাবনাময় ওষুধশিল্প। তবে কাঁচামাল আমদানিতে কিছুটা প্রভাব পড়লেও অভ্যন্তরীণ ও বিশ্ববাজারে বেড়েছে ওষুধের চাহিদা। বিশেষ করে করোনাসংক্রান্ত ওষুধের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির তথ্য মতে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ২৬৯টিরও বেশি ছোট-বড় ওষুধ কারখানা রয়েছে। এদিকে ওষুধ খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশ থেকে মূলত ম্যালেরিয়া, য²া, ক্যান্সার, কুষ্ঠ, অ্যান্টি-হেপাটিক, পেনিসিলিন, স্ট্রেপটোমাইসিন, কিডনি ডায়ালাইসিস, হোমিওপ্যাথিক, বায়োকেমিক্যাল, আয়ুর্বেদিক ও হাইড্রোসিলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওষুধ রফতানি হয়ে থাকে। গত অর্থবছরে ওই তালিকায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধক ওষুধ যুক্ত হয়। ফলে ওই শিল্পে রফতানি আয়ের পরিমাণ আরো বেড়েছে। কারণ মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ থেকে রেমডেসিভির ও ফ্যাভিপিরাভিরের জেনেরিক সংস্করণটি আমদানি করছে। ভারতে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর গত এপ্রিলে দেশটি রেমডেসিভির ও এর উপকরণ রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। ফলে ওষুধ রফতানিতে বাংলাদেশের আরো সুযোগ বেড়েছে। যদিও স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশে ওষুধ প্রাপ্তি আমদানির ওপর নির্ভরশীল ছিল। মানুষ তখন অনেক উচ্চ মূল্যে ওষুধ ক্রয় করতো। বর্তমানে দেশের চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ স্থানীয় উৎপাদনের মাধ্যমে মিটাতে সক্ষম। যদিও এখনো কিছু অসাধু কোম্পানি দেশের মধ্যে ভেজাল ওষুধ বিপণন করছে। অন্যদিকে এ বিষয়ে ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এসএম সফিউজ্জামান জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের রফতানির ওষুধ পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে ওষুধ তৈরি করছে। ভবিষ্যতে এদেশের ওষুধশিল্প রফতানির শীর্ষে থাকবে।