মোস্তাফিজুর রহমান, আশাশুনি থেকে \ করোনা ও ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতের ক্ষতির ধাক্কা কাটিয়ে উঠার আগেই পানের বাজার দরে মারাত্মক ধ্বশের কারনে আশাশুনি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের পান চাষিরা পড়েছে চরম বিপাকে। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তান্ডবে উপজেলার অধিকাংশ পান বরজ লন্ডভন্ড হয়ে যায়। সে সময় বরজ গুলো ভেঙে পান গাছ গুলো মাটির উপরে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। বিঘা প্রতি প্রায় ৪০হাজার টাকা খরজ করে পানের বরজ গুলো পুনরায় দাড় করায় এলাকার পান চাষিরা। তৎকালিন করোনার প্রকোপে পানের বিক্রি কমে বাজার দাম কমে যাওয়ার পাশাপাশি আম্ফানের ক্ষতি আর পুশিয়ে নিতে সক্ষম হয়নি চাষিরা। দাম কমতে কমতে বর্তমান সময়ে পানের দাম নেই বললেই চলে। দাম কমার পাশাপাশি কম বৃষ্টির কারনে পানের উৎপাদন কমে যাওয়ায় সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে উপজেলার পান চাষিরা। পান চাষ লাভ জনক হলেও চলতি বছর পান চাষ করে লাভের পরিবর্তে বিঘা প্রতি বড় অংকের লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের। উপজেলার প্রায় ৪০ হেক্টর জমিতে পান চাষে নিয়োজিত থাকা প্রায় ১৫০চাষির মধ্যে অনেকেই এ পেশা থেকে বেরিয়ে আসার চিন্তা ভাবনা করছেন বলে জানা গেছে। উপজেলার বুধহাটা ও খাজরা ইউনিয়নে উপজেলার উৎপাদিত পানের সিংহ ভাগ পান চাষ হয়ে থাকে। এ এলাকায় উৎপাদিত পান সরাসরি ঢাকাও পাটকেলঘাটা বাজার হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে সরবরাহ হয়ে থাকে। পানের বাজার দর অনেক কম থাকায় এলাকার পান বাহিরে দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে চাষীরা। উপজেলার মোট উৎপাদিত পানের ৮০ ভাগ পান উৎপাদনকারী বুধহাটা ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, বিগত ২বছর ধরে অধিকাংশ পান চাষিরা লাভের হিসেব তো দুরের কথা লোকসানের হিসেব মিলাতে গিয়ে এনজিওর লোনের পাশাপাশি স্বার্ণালংকার খোয়ানো এমনকি কেউ কেউ চড়া সুদে জড়িয়ে নিঃশ্ব হতে বসেছে। বিভিন্ন এলাকার একাধিক পান চাষী জানান, পূর্বে যে পান ১পোনের (৮০টি) দাম ছিলো ২০০টাকা, এখন সেটা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৮০-৯০ টাকায়। পূর্বে যে পান ৪০টাকা বিক্রি হতো এখন সেই পান বিক্রি হচ্ছে প্রতি পোন ৫-১০ টাকায়। উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়নের বেউলা গ্রামের পান চাষি প্রবীর মন্ডল জানান, ঘূর্ণিঝড়ে তার ১ বিঘা পানের বরজ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সেটি দাঁড় করাতে প্রায় ৪০হাজার টাকা খরজ হয়। এ টাকাটা তার জন্য ছিলো অতিরিক্ত খরজ। বর্তমানে বরজে কাজের লোকের মুজরী বেশি এবং পানের দাম কম থাকায় তিনি আর সেই ক্ষতি পুশিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেননি। পানের বাজার দর এমন থাকলে ভবিষ্যতে এ পেশা থেকে বেরিয়ে আসা ছাড়া উপায় দেখছেন না বলে তিনি আক্ষেপ করে বলেন। ইউনিয়নের পাইথালী গ্রামের পান চাষি ও পান ব্যবসায়ী নিমাই নন্দী জানান, হঠাৎ করে পানের বাজার দর একদম কমে যাওয়ায় ঋন ও জন-মজুরীর টাকা কি ভাবে শোধ করবেন তার উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। এভাবে চলতে থাকলে পান চাষ থেকে সরে অন্য পেশায় নিজেকে নিয়োজিত হওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। আম্ফানে অধিকাংশ চাষী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, করোনাকালিন সময়ে বিক্রি কমে যাওয়া, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামে উদ্ধগতী, দিন-মজুরের মুজরী বেশি, চলতি বছরে বৃষ্টি কম হওয়ায় উৎপাদন কমে যাওয়া, পানের দামে ধ্বশসহ নানাবিধ কারনে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পান চাষিরা এমনটি ধারণা করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। স্থায়ী ভাবে পানের দাম কম থাকলে পান চাষীরা পান চাষের আগ্রহ হারাবে বলে ধারণা করছেন তারা। বর্তমানে পরিস্থিতিতে পানের বাজার স্বাভাবিক ভাবে পরিচালিত করাসহ চাষিদের সরকারি সহায়তার জন্য যথাযথ উদ্ধতন কতৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন উপজেলার পান চাষিরা।