কলারোয়া (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি \ সাতক্ষীরার কলারোয়ায় দিজলা ফাউন্ডেশান নামের একটি এনজিও এর প্রধান কার্যালয় দেখিয়ে কয়েক হাজার গ্রাহকদের নিকট থেকে কয়েক কোটি টাকা নিয়ে আতœসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার গোপীনাথপুরে প্রতিষ্ঠিত ক্ষুদ্র ঋণ ও সঞ্চয় আদায়কারী প্রতিষ্ঠানটি উপজেলার অসহায় ও দরিদ্র গ্রাহকদের সঞ্চয়ের টাকা ও এফডিআরের টাকা ফেরৎ না দিয়ে আত্মসাৎ করার চেষ্টায় গ্রাহকদের সাথে বিভিন্নভাবে তালবাহানা শুরু করেছে ওই ফাউন্ডেশানের চেয়ারম্যান মাও: আবু জাফর ও শাখা ম্যানেজার আজিজুল ইসলাম। অথচ তাদের এসব টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিলো ২০২০ সাল থেকে। সেই থেকে গ্রাহকদের টাকা ফেরত না দিয়ে অফিসের কাগজপত্র নিয়ে ম্যানেজার পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে সকল মাঠ কর্মীরা চাকুরী ছেড়ে গাঁ ঢাঁকা দিয়েছেন। তাছাড়া এখনও পর্যন্ত বিভিন্নভাবে প্রতারণা করে বিভিন্ন লোকজনের নিকট থেকে সঞ্চয় ও এফডিয়ারের নাম করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। সোমবার (১১ এপ্রিল) সরেজমিনে গেলে, বন্ধ থাকা অফিসের সামনে দাড়িয়ে থাকা গ্রাহক সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঘোনা গ্রামের আ: গফ্ফার মোলার ছেলে খায়রুল ইসলাম বলেন, আমার মাসে লাখে ১১০০ টাকা দেবে বলে ৭ লক্ষ টাকা কয়েক মাস আগে নিয়েছে। এক মাস লাভের টাকা দেওয়ার পর তাদের আর কোন খবর পাচ্ছি না। অফিসে এসে কাউকে পাওয়া যায় না। আমি এই টাকা না পাওয়ার কারণে আমার মেয়েটা বিয়ে দিতে পারছি না। এদিকে লাখে মাসে ১২০০ টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে একইভাবে উপজেলার দেয়াড়া গ্রামের বজলে সানার নিকট থেকে ৮ লক্ষ টাকা, লালবানুর নিকট থেকে ৩ লক্ষ টাকা, আ: মমিনের ছেলে কামরুলের নিকট থেকে ৫ লক্ষ টাকা, একই ইউনিয়নের পিছলাপুর গ্রামের মৃত: আজিজার রহমানের মেয়ের নিকট থেকে ৪ লক্ষ টাকা, কদবানুর নিকট থেকে ১ লক্ষ টাকা, নাজেমের স্ত্রী শাহিদার নিকট থেকে ২ লক্ষ টাকা, জালালাবাদ ইউণিয়নের ফয়জুলাহপুর গ্রামের আ: বারীর নিকট থেকে ২ লক্ষ টাকা ও বাঁটরা গ্রামের থেকে ২০ লক্ষ টাকা কেরালকাতা ইউণিয়নের নাকিলা গ্রামের মাষ্টার আ: আলীমের নিকট থেকে ১ লক্ষ টাকা, কয়লা ইউণিয়নের কয়লা গ্রামের আরিজুলের স্ত্রী পারুলের নিকট থেকে ৩ লক্ষ টাকা। এভাবে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গ্রাহকদের নিকট থেকে কয়েক কোটি টাকা আতœসাৎ করেছেন ভুক্তভোগিরা জানান। তুজুলপুর গ্রামের মৃত সোহারাব আলী মোড়লের ছেলে জিয়ারুল বলেন, ছয় বছর পূর্বে মাসে ২শত টাকা করে ডিপিএস এর টাকা বাড়ি গিয়ে নিয়ে আসতো ওই ফাউন্ডেশনের লোকজন এবং আমি নিজে অফিসে গিয়ে ৯ হাজার টাকা সঞ্চয় রেখে ছিলাম। তিনি আরও বলেন, আমার সঞ্চয়ের টাকা ছয় বছর পরে ফেরৎ দিতে চেয়ে সঞ্চয়ের হিসাব বহিঃ নিয়ে আসতে বলেন কর্মী। এর পরে তিনি পাশ বহিঃ বা জমাকৃত সঞ্চয় এবং ডিপিএসএর টাকা ফেরৎ পাননি বলে অভিয়োগ করেন। গ্রাহকরা বলেন, টাকা ফেরৎ দেয়ার কথা মুখে বলে কিন্তু আমাদের টাকা ফেরৎ দিচ্ছেনা। তাদের অফিস বন্ধ থাকে এবং কিস্তির টাকা আদায়কারী কেউ আর ভয়তে আমাদের বাড়ী যায় না। আমরা অফিসে আসলে তাঁরা বিভিন্ন তাল বাহানা করে। এখন আর অফিসে কাউকে পাওয়া যায় না। দিজলা ফাউন্ডেশান এর শাখা ম্যানেজার আজিজুল ইসলাম বলেন, আমাদের করোনা কালে বেতন দেয়না। তাই অফিস তালা বদ্ধ ছিল। আর মালিক পক্ষ টাকা ফেরৎ না দিলে আমরা কোথা থেকে দিবো। দিজলা ফাউন্ডেশানের চেয়ারম্যান মাও: আবু জাফরের কাছে জানতে চাইলে, তিনি বলেন, যাদের নিকট থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। তাদের কিছুকিছু লোকের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। অন্যদেরও পর্যায়ক্রমে টাকা ফেরত দেওয়া হবে। তবে করোনার কারণে আমরা একটু সমস্যায় ছিলাম। বর্তমানে এ সমস্যা কাঠিয়ে উঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।