শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:১৭ পূর্বাহ্ন

কলারোয়ায় লাইসেন্স বিহীন হাফিজা ক্লিনিকের পরিচালক তদন্ত কমিটিকে মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগ

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৩ মার্চ, ২০২৩

কলারোয়া (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি \ সাতক্ষীরার কলারোয়ায় সেই বিতর্কিত ও লাইসেন্স বিহীন হাফিজা ক্লিনিকের বিরুদ্ধে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্তপূর্বক সুস্পষ্ট মতামতসহ প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ১৪ ফেব্রæয়ারী-২৩তারিখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর (হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমুহ) ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা: শেখ দাউদ আদনান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ আদেশ দেয়া হয়েছে। এই আদেশ পাওয়ার পরে জেলা সিভিল সার্জন ডা: সবিজুর রহমান ৩সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এই কমিটির সভাপতি হলেন-সাতক্ষীরা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, সদস্য সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ও সদস্য সচিব হলেন-কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর আবাসিক মেডিকেল অফিসার। স¤প্রতি এই তদন্ত কমিটি ওই ক্লিনিকে আসার আগে তারা জানতে পেরে তাদের ক্লিনিকে দুইটি রোগীকে অন্য স্থানে সরিয়ে রাখেন। পরে ক্লিনিক পরিচালনা কমিটির পরিচালক ডা: দিনেশ কুমার ওরফে ডিকে সমদ্দার ও ডা: তরিকুল ইসলাম তদন্ত কমিটির কাছে বলেন-তারা এখানে আর ক্লিনিক পরিচালনা করবেন না। অথচ এই ক্লিনিকে আবারও দুটি সিজার করা হয়েছে। বর্তমানে রোগী ওই ক্লিনিকে ভর্তি রয়েছে। আসলে তারা তদন্ত কমিটিকে মিথ্যা বলে হাফিজা ক্লিনিক পরিচালনা করে যাচ্ছেন। এদিকে এই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ কারী প্রভাষক মামুন বলেন-জনবসতি এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এই ক্লিনিক করা হয়েছে। তিনি ক্লিনিক বন্ধের দাবী জানান। উল্লেখ্য-এর আগে (৩১অক্টোবর-২০২১) রোববার বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে পৌর সদরের হাফিজা ক্লিনিকে সরকারি নির্দেশনা অমান্য ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরন না করার অপরাধে ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার জিয়াউর রহমান। আদালতের কাজে সহায়তা করেন সহকারী আব্দুল মান্নানসহ পুলিশ সদস্যবৃন্দ। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জুবায়ের হোসেন চৌধুরী জানান, মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় কোনভাবে সরকারী নির্দেশনা অমান্যকারী ও স্বাস্থ্যবিধি পালন না করলে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এছাড়া ওই হাফিজা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভুল অপারেশনে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন সোমা রাণী নামের এক প্রসূতি। বর্তমানে তিনি সাতক্ষীরা শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ডা.শরিফুল ইসলামের তত্ত¡বাবধানে চিকিৎসাধীন রয়েছে। দরিদ্র পরিবারের মেয়ে সোমা চিকিৎসার ব্যয়ভার নিয়ে দুঃচিন্তায় তার পরিবার। সোমা রাণী কলারোয়া পৌর সদরের ঝিকরা গ্রামের বাসিন্দা বৈদ্য গোলদারের মেয়ে। সোমার মা চম্পা রাণী বলেন, আমার মেয়ে সোমা গর্ভবতী থাকাবস্থায় কলারোয়া সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য রওনা হই। হাসপাতালে যাওয়ার আগেই দালালের খপ্পরে পড়ে হাসপাতালের সামনে হাফিজা ক্লিনিকে নিয়ে গেলে সেখানকার ক্লিনিক ম্যানেজার রনজিৎ পাল ও ডা. দিনেশ কুমার বলেন-আপনার মেয়ের যে অবস্থা এখনই সিজার করতে হবে। তাদের কথায় মেয়েকে গত ২৪জুলাই হাফিজা ক্লিনিকে ভর্তি করি। তিনি আরও বলেন, সেখানে সিজার করতে ১২হাজার টাকা নেয় ওই ক্লিনিক। আর ওষুধ কিনতে লাগে আরও ১০ হাজার টাকা। গত ২৯জুলাই সোমাকে ক্লিনিক থেকে ছাড়পত্র দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বাড়িতে এসে সোমার অবস্থা দিন দিন খারাপ হয়ে পড়ে। পরে আবার সোমাকে নিয়ে যাওয়া হয় ওই হাফিজা ক্লিনিকে। সেখানে ক্লিনিক ম্যানেজার রনজিৎ পাল ও ডা. দিনেশ কুমার বলেন, সোমার পেট কেটে দেখতে হবে কী হয়েছে। তবে ৩হাজার টাকা লাগবে। তখন ৩হাজার টাকা নিয়ে সোমার পেট কাটেন তারা। সেখানেও প্রায় ১২হাজার টাকার ওষুধ লাগে। এর পরেও সোমা শরীরের কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় ক্লিনিক ম্যানেজার বলেন ভালো চিকিৎসা করতে হলে সাতক্ষীরা মেডিকেলে নিয়ে যান। চম্পা বলেন, সোমার শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় আমরা তাকে দ্রæত সাতক্ষীরার বুশরা হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি। সেখানকার কর্মরত চিকিৎসক শরিফুল ইসলাম সঙ্গে সঙ্গে সোমাকে অপারেশন করেন। ডাক্তার জানান, ঠিকমতো সিজার করা না হওয়ায় পেটের মধ্যে পয়ঃনিষ্কাশনের নাড়িতে ঘা হয়ে পচন ধরেছে। বর্তমানে পাইপ লাইনের মাধ্যমে বাথরুম করানো হচ্ছে। পেটের ঘা শুকাতে ও সুস্থ হতে প্রায় ৩ মাস লাগবে। এতে প্রায় ১লাখ টাকা খরচ হতে পারে। হাফিজা ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তিনি বলেন, কলারোয়া সরকারি হাসপাতালে তারা যেতে দিল না। জোর করে নিয়ে ভর্তি করাল হাফিজা ক্লিনিকে। সেখানে ডা. আসিফ কাইসারকে দিয়ে তার মেয়েকে সিজার অপারেশন করায়। ভুল চিকিৎসায় আমার মেয়ে এখন মৃত্যুর পথযাত্রী। টাকার অভাবে তার চিকিৎসা ও ওষুধ কিনতে পারছি না। তারপর ৩মাসের শিশুটির জন্য দুধও কিনতে পারছি না। মেয়ের জীবন বাঁচাতে জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারসহ হৃদয়বান মানুষের সহায়তা কামনা করেছেন তারা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com