এফএনএস : কলেজ শিক্ষায় মান বাড়াতে নতুন কৌশলপত্র তৈরি করা হচ্ছে। ওই কৌশলপত্রে অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে বেসরকারি কলেজের ডিগ্রি স্তরে চালু করা হবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা। সেজন্য সৃষ্টি করা হবে নতুন নতুন পদ। গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে কলেজগুলোতে চালু করা হবে পর্যাপ্ত ল্যাব, অনলাইন ক্যাম্পাস নেটওয়ার্ক ও ই-লাইব্রেরির সুবিধা। তাছাড়া দরিদ্র ছাত্রছাত্রীরা বৃত্তি পাবে এবং ক্ষেত্রবিশেষে বিনামূল্যে পাঠদানের ব্যবস্থা থাকবে। শিক্ষার্থীরা কম সুদে ঋণও পাবে। তাছাড়া কলেজ পরিচালনার ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আনা হবে এবং শিক্ষাবিদরাই হবেন কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (সিইডিপি) থেকে কৌশলপত্রের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। কলেজ শিক্ষার নতুন কৌশলপত্রের খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলো পরিচালনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি নীতিমালা তৈরি করা হবে। ইতোমধ্যে সিইডিপি এ বিষয়ে দেশের কয়েকটি স্থানে ও জাতীয় পর্যায়ে ওয়ার্কশপের আয়োজন করেছে। শিগগির আরো বড় আকারে কর্মশালা করে শিক্ষামন্ত্রীসহ শিক্ষাবিদদের মতামত নেয়া হবে। তারপরই কৌশলপত্র চ‚ড়ান্ত করা হবে। নতুন কৌশলপত্রে কলেজগুলোতে গবেষণা, গবেষণার ফল কাজে লাগানো এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনা গড়তে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মধ্যে ঘনিষ্ঠ কর্মসম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেজন্য উভয় প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। সূত্র জানায়, নতুন কৌশলপত্র অনুযায়ী বেসরকারি কলেজগুলোর পরিচালনা পর্ষদ বা গভর্নিং বডির (জিবি) চেয়ারম্যান হবেন একজন শিক্ষাবিদ। আর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও মেধা অনুযায়ী সদস্যরা মনোনীত হবে। সদস্য সংখ্যা বর্তমানে যা আছে তার চেয়ে কমানো হবে এবং তাদের কাজ করার ক্ষেত্রও নির্ধারণ করে নেয়া হবে। জিবির অ্যাডহক ও অ্যাকাডেমিক কমিটিতে সদস্যদের যোগ্যতা ও সদস্য কমানোর জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা সংশোধন করা হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী বোর্ড অব ডিরেক্টর এবং বোর্ড অব স্টাডিজ গঠন করা হবে। বোর্ডগুলো তাদের নির্দিষ্ট পরিসরে দায়িত্ব পালন করবে। আর বোর্ডের কর্মকাÐ তদারকিতে নজরদারি বাড়ানো হবে। তাছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি ও বেসরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষার মানোন্নয়নে আরো বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে কোচিং-নির্ভরতা কমানো, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ঋণের ব্যবস্থা করা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাছাড়া শিক্ষকদের পাঠদানের দক্ষতা বাড়াতে তাদের তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মানোন্নম্নয়নসহ ধারাবাহিকভাবে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বাড়ানো হবে। তথ্যপ্রযুক্তির ওপর শিক্ষকদের নিয়মিত ওয়ার্কশপ হবে। অনলাইনে গবেষণা বাড়ানো হবে। শিক্ষকরা বিভিন্ন বিষয় এখানে যুক্ত করবেন এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে তা বিতরণ করবেন। কলেজ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্মমুখী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করবেন, যাতে শিক্ষার্থীরা সেখানে গিয়ে হাতেকলমে শিখতে পারেন। সূত্র আরো জানায়, কৌশলপত্রের খসড়ায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক পাঠদান বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আর্থিক সংকটে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় আর্থিক সহযোগিতা দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বৃত্তি ও উপবৃত্তির আওতায় অথবা বেসরকারি কলেজগুলোতে বিনামূল্যে পাঠদানের ব্যবস্থা রাখা হবে। কলেজগুলোতে এ বিষয়ে ডিগ্রি প্রোগ্রামের সক্ষমতা বাড়ানো হবে; সেখানে পর্যাপ্ত ল্যাব, ক্যাম্পাস নেটওয়ার্ক ও ই-লাইব্রেরির সুবিধা থাকবে। সেজন্য দক্ষ লোক নিয়োগ দেয়া হবে। সব কলেজের শিক্ষকদের জন্য দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। তাছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করে তুলতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে বিশেষ বিবেচনায় প্রোগ্রাম চালু করা হবে। বলা হয়েছে, শিক্ষার্থী ভর্তিতে লিঙ্গ এবং ধর্মভিত্তিক সমতা আনা হবে। শিক্ষার্থীদের স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ভাতা প্রদান করা হবে। রেজিস্ট্রেশন করা শিক্ষার্থীদের অনলাইনে পাঠদানের ব্যবস্থা রাখা হবে। প্রাইভেট ও কোচিংয়ের ওপর নির্ভরতা কমানো নিশ্চিত করতে প্রতিদিন যথাযথ ক্লাস নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের কম সুদে শিক্ষা ঋণের ব্যবস্থা করা হবে। ঋণের জন্য নতুন নতুন সংস্থা ও তহবিলের ব্যবস্থা করা হবে। প্রয়োজনে দানভিত্তিক তহবিলও গড়ে তোলা যেতে পারে। এদিকে এ প্রসঙ্গে সিইডিপি প্রোগ্রাম অফিসার (পরিকল্পনা) ড. এ কে এম খলিলুর রহমান জানান, এসডিজি বাস্তবায়নের সঙ্গে সমন্বয় রেখে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষার মান বাড়াতে বিশিষ্টজনের গবেষণার মাধ্যমে খসড়া কৌশলপত্র তৈরি করা হয়েছে। তাতে কলেজ পরিচালনার ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে।