ভোরের আলো ফুটবে ফুটবে করছে
আর আমি বসে আছি টুকরী হাতে
কোদাল নিয়ে বড় রাস্তার ধারে।
মনে ক্ষণিকের আশা – আজ যদি
কোন কাজ পাওয়া যায়!
পরিচয়টা দিয়ে নিই আগে
আমি ফজর আলী
পেশায় দিনমজুর
শ্রমের নামে রক্ত ফেরি করি!
ঘরে সারা বছর অসুস্থ থাকা স্ত্রী
কেবল স্কুলগামী ছেলে
আর বিয়ের উপযুক্ত মেয়ে।
বোঝেন তাহলে কি অবস্থা আমার
ঝড়ে পড়া কাকের মতো
দিশাহীন, জবুথবু
মরার মতো নির্জীব হয়ে
জীবন নামক পথ চলছি
অন্ধকারে।
আজকের মতো কাজ পেয়েছি
ঘরে ফেরার পথে হাতে করে
কিছু কিনে নিতে পারবো হয়তো।
তবুও কি দুশ্চিন্তা যায়!
আজ না হয় কাজ পেলাম
কাল কি হবে?
এ এমন কাজ
রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে
শুধু অমানুষিক কষ্ট
আর দিন শেষে
খান কয়েক খুচরা নোট।
তা দিয়ে পেটের জ্বালা মিটাবো
নাকি নানাবিধ সমস্যা মিটাবো
সেটা ভাবতেই
কাগজের নোটগুলো
ফাঁকি দিয়ে চলে যায়
অন্যের হাতে!
দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা কাজ করে
দুপুরের খাওয়ার সময় এখন
সকালের খাওয়া তো
কোনদিনই জোটে না।
রাতের বাসি পান্তা, একটু লবণ
ভাগ্য ভালো থাকলে কাঁচা মরিচ
পেঁয়াজের চিন্তা করতেও ভয় লাগে
ভাবি, চিন্তা করতেও যদি টাকা লাগে!
গায়ের ঘাম শুকায়ে গায়েই বসে গেছে
সাথের সঙ্গী সাথীরা বিড়ি ফুঁকে
গল্প রসিকতায় মত্ত।
আমি ভাবতে থাকি –
মেয়েটার বিয়ের বয়স হয়েছে
অথচ বিয়ের কতো খরচ
ধার দেনা করে আর কতো?
ছেলেটার আবদার একটা সাইকেলের
তার স্কুলের জামায় কয়েকটা সেলায়
পড়ে গেছে, পুরানো প্যান্ট আর
পরনে হতে চায় না।
বউকে ভালো ডাক্তার না দেখালে
ঘুষঘুষে জ্বর আর খুশখুশে কাশি নিয়ে
কেউ আর বাসা বাড়ির কাজ দিতে চায় না।
ঘরের টিন নড়ে বড়ে হয়ে গেছে
ফুটো দিয়ে অনর্গল বৃষ্টি ঝরে
ঝড় বাদলে উড়ে না গেলে হয়!
খেতে পারি আর না পারি
মাস শেষে কিস্তি দিতেই হবে!
পানি তোলা নিয়ে ঝগড়া হওয়ায়
রাগ করে কিস্তি তুলে
পানির কল পুঁতেছি।
সেই কিস্তির টাকা যেন
আজন্মের ঋণ
কিছুতেই শেষ হয় না।
আসল শোধ হলেও
সুদের রেশ শেষ হওয়ার নয়।
চিন্তার জগতে হারানো আমার
চারিদিকে শুধু নেই নেই
অসহায় আমি একটু শ্বাস নিতে
আকাশের দিকে তাকাই
আশ্রয় চাই আলাহর কাছে।
সীমাহীন আকাশের মতো
আমার দূর্দশারও সীমা নেই।
তবুও অপলক দৃষ্টিতে
তাকিয়ে থাকি আকাশের দিকেই..