স্পোর্টস ডেস্ক \ ৩০৩ রানের বড় পুঁজি নিয়েও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পেরে উঠল না তামিম ইকবালের দল। প্রথম চার ব্যাটসম্যানের ফিফটিতে বড় সংগ্রহ গড়েও শেষরক্ষা হলো না বাংলাদেশের। ইনোসেন্ট কাইয়া ও সিকান্দার রাজার সেঞ্চুরি এবং তাদের দুর্দান্ত জুটির সৌজন্যে ৯ বছরের ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙল জিম্বাবুয়ে। ভাসল বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো তিনশ ছাড়ানো লক্ষ্য তাড়া করে জয়ের আনন্দে। প্রথম ওয়ানডে ৫ উইকেটে জিতে তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেছে জিম্বাবুয়ে। হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে শুক্রবার বাংলাদেশের ৩০৩ রান স্বাগতিকরা ছাড়িয়ে গেছে ১০ বল বাকি থাকতে। ওয়ানডেতে এ নিয়ে চতুর্থবার তিনশ ছাড়ানো লক্ষ্য তাড়ায় জিতল জিম্বাবুয়ে। তিনশ ছাড়ানো পুঁজি নিয়ে তৃতীয়বার হারল বাংলাদেশ। কাইয়া-রাজার সেঞ্চুরিতে থামল বাংলাদেশের জয়রথ : ২০১৩ সালের পর ওয়ানডেতে এটাই বাংলাদেশের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের প্রথম জয়। মাঝে তারা হেরেছিল টানা ১৯ ম্যাচ। ম্যাচের প্রথম অংশ ছিল সফরকারীদের। বাংলাদেশের প্রথম চার ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল, লিটন দাস, এনামুল হক ও মুশফিকুর রহিম পান পঞ্চাশের দেখা। ২০১৪ সালে প্রথমবার এমন কীর্তি গড়ার ম্যাচেও হেরেছিল বাংলাদেশ, পাকিস্তানের বিপক্ষে। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে ১২২ বলে ১১ চার ও ২ ছক্কায় ১১০ রান করেন ওপেনার কাইয়া। দলের জয় সঙ্গে নিয়ে মাঠ ছাড়েন চতুর্থ সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া রাজা। দারুণ ছন্দে থাকা এই অলরাউন্ডার ৬ ছক্কা ও ৮ চারে ১০৯ বলে করেন ১৩৫ রান। ছক্কায় ম্যাচ শেষ করে তিনি যে হুঙ্কার দিলেন, সেখানেই স্পষ্ট এই জয়ের অর্থ তাদের কাছে কী। বড় রান তাড়ায় শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি জিম্বাবুয়ের। ক্রেইগ আরভিনের অনুপস্থিতিতে নেতৃত্ব পাওয়া রেজিস চাকাভাকে প্রথম ওভারেই বোল্ড করে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। পরের ওভারে আরেক ওপেনার তারিসাই মুসাকান্দাকে থামান শরিফুল ইসলাম। ওয়েসলি মাধেভেরের সঙ্গে কাইয়ার জুটিতে শুরুর ধাক্কা সামাল দেয় জিম্বাবুয়ে। জমে যাওয়া ৫৬ রানের এই জুটি ভাঙে মাধেভেরের আত্মঘাতী রান আউটে। এরপরই ম্যাচে সেরা জুটি উপহার দেয় স্বাগতিকরা। ক্রিজে যাওয়ার একটু পরেই তাসকিন আহমেদের অফ স্টাম্পের বাইরের বল টেনে খেলার চেষ্টায় পায়ে আঘাত পান রাজা। বাকি সময় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে খেলেন তিনি। তবে পায়ের ব্যথা তাকে দমাতে পারেনি একটুও। শুরু থেকেই তিনি ছিলেন আক্রমণাত্মক। তাকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন কাইয়া। তাদের আগেভাগে বিচ্ছিন্ন করার একটি সুযোগ অবশ্য পেয়েছিলেন বদলি ফিল্ডার তাইজুল ইসলাম। তবে তাসকিনের বলে তিনি নিতে পারেননি রাজার সহজ ক্যাচ। সে সময় ৪৩ রানে ছিলেন জিম্বাবুয়ের অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার। পরে জমে যাওয়া জুটি ভাঙার সুযোগ হাতছাড়া করেন শরিফুল। তিনি নিতে পারেননি কাইয়ার জোরাল ফিরতি ক্যাচ। সে সময় স্বাগতিক ওপেনার ছিলেন ৭৬ রানে। এক জন বোলার কম নিয়ে বাংলাদেশ বুঝে উঠতে পারছিল না, কীভাবে বেঁধে রাখা যায় রানের গতি। রাজা ও কাইয়াকে খুব একটা ভাবাতে পারেননি কেউ। বারবার বোলার বদলেও সফল হননি তামিম। ঠিক লাইন ও লেংথও খুঁজে পাননি বোলাররা। হয় ফুল লেংথ ডেলিভারি দিয়েছেন, নয়তো বেশি শর্ট বল করেছেন। এই সুবিধা কাজে লাগিয়েছেন দুই ব্যাটসম্যান। একই ওভারে তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন তারা, কাইয়া ১১৫ বলে, রাজা স্রেফ ৮১ বলে। মোসাদ্দেক হোসেনকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় শরিফুলকে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় কাইয়ার ইনিংস। ভাঙে ১৭৬ বল স্থায়ী ১৯২ রানের জুটি। এর আগের বলেই স্টাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া করেন এনামুল। তবে জয় তখন জিম্বাবুয়ের নাগালে। লুক জঙ্গুয়েকে নিয়ে দলকে কক্ষপথে রাখেন রাজা। জঙ্গুয়ের বিদায়ের পর মিল্টন শুম্বাকে নিয়ে বাকিটা সারেন তিনিই। এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশকে ভালো শুরু এনে দেন তামিম ও লিটন। পাওয়ার প্লেতে আসে ৫১ রান। ফিল্ডিং ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেওয়ার পর কমে যায় তাদের রানের গতি। ২৪তম ওভারে দলের রান যায় তিন অঙ্কে। ৭৯ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে এগিয়ে যান তামিম। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে স্পর্শ করেন ৮ হাজার রানের মাইলফলক। এরপর অবশ্য যেতে পারেননি বেশিদূর। শুরুতে সময় নেওয়া তামিম কমিয়ে আনতে চেয়েছিলেন রান-বলের ব্যবধান। চড়াও হতে চেয়েছিলেন রাজার অফ স্পিনে। কিন্তু আর্ম বলে টাইমিং করতে পারেননি তিনি, ধরা পড়েন কাইয়ার হাতে। ভাঙে ১৫৪ বলে গড়া ১১৯ রানের জুটি। ৮৮ বলে ৯ চারে তামিম করেন ৬২। ৭৫ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে রানের গতি বাড়ান লিটন। লুক জঙ্গুয়ের ওভারে চারের পর ছক্কা মেরে আভাস দেন ঝড় তোলার। কিন্তু রান নেওয়ার চেষ্টায় পায়ে টান লাগায় মাঠ ছেড়ে যেতে হয় এই ওপেনারকে। ৮৯ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় তিনি করেন ৮১। পাওয়ার প্লের পর মন্থর ব্যাটিংয়ে ৩২তম ওভার পর্যন্ত বাংলাদেশের রান রেট ছিল পাঁচের নিচে। তিন বছর পর ওয়ানডে খেলতে নেমে এনামুলের শুরুটা ছিল মন্থর। প্রথম ২৭ বলে করেন মাত্র ১৮ রান। ব্যাটের কানায় লেগে চার পাওয়ার পর পুল করে ছক্কায় ওড়ান ভিক্টর নিয়াউচিকে। রানের গতি বাড়িয়ে ৪৭ বলে স্পর্শ করেন ফিফটি, ওয়ানডেতে চতুর্থ। ছুটি শেষে এই ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা মুশফিকও শুরুতে একটু সময় নেন। পরে তিনিও রানের গতি বাড়ানোর দিকে মন দেন। তবে তুলতে পারেননি প্রত্যাশিত ঝড়। ৪৬ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে একশর দিকে ছুটছিল জুটির রান। রিচার্ড এনগারাভার বলে ক্যাচ দিয়ে মাধেভেরের বিস্ময়কর ব্যর্থতায় ৭১ রানে বেঁচে যান এনামুল। তবে কাজে লাগাতে পারেননি সুযোগ। নিয়াউচিকে ওড়ানোর চেষ্টায় বিদায় নেন ক্যাচ দিয়ে। ভাঙে ৭৬ বল স্থায়ী ৯৬ রানের জুটি। ফেরার ম্যাচে ৬২ বলে ৩ ছক্কা ও ৬ চারে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন এনামুল। ক্রিজে গিয়েই প্রথম দুই বলে চার মারেন মাহমুদউল−াহ। আরেক প্রান্তে নিজের মতো করে খেলে যান মুশফিক। শেষ ওভারে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন তিনি, ৪৮ বলে। নির্ভরযোগ্য এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের ৪৯ বলে খেলা ৫২ রানের ইনিংস গড়া ৫ চারে। এই ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা মুশফিকের সঙ্গে ২৪ বল স্থায়ী ৩৪ রানের জুটিতে মাহমুদউল−াহর অবদান ১২ বলে ২০। দিন শেষে দলের জন্য যদিও যথেষ্ট হয়নি তাদের এই ব্যাটিং। আগামী রোববার একই মাঠে সিরিজ বাঁচানোর লক্ষ্েয মাঠে নামবে বাংলাদেশ। সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩০৩/২ (তামিম ৬২, লিটন ৮১ আহত অবসর, এনামুল ৭৩, মুশফিক ৫২*, মাহমুদউল−াহ ২০*; এনগারাভা ১০-১-৬১-০, নিয়াউচি ৯-১-৬৫-১, মাসাকাদজা ৫-০-৩১-০, জঙ্গুয়ে ১০-০-৫৬-০, বার্ল ১.১-০-৮-০, শুম্বা ৪.৫-০-২৭-০, রাজা ৯-০-৪৮-১, মাধেভেরে ১-০-৫-০)। জিম্বাবুয়ে: ৪৮.২ ওভারে ৩০৭/৫ (চাকাভা ২, মুসাকান্দা ৪, কাইয়া ১১০, মাধেভেরে ১৯, রাজা ১৩৫*, জঙ্গুয়ে ২৪, শুম্বা ১*; মুস্তাফিজ ৯-০-৫৭-১, শরিফুল ৮.৪-০-৫৭-১, তাসকিন ১০-১-৫২-০, মিরাজ ১০-০-৫৯-১, মোসাদ্দেক ৯.২-০-৬৭-১, মাহমুদউল−াহ ১.২-০-১২-০)। ফল: জিম্বাবুয়ে ৫ উইকেটে জয়ী। ম্যান অব দা ম্যাচ: সিকান্দার রাজা।