মাছুদুর জামান সুমন \ আমাদের দেশের কৃষকরা বৃষ্টিতে ভিজে, রৌদ্রে পুড়ে সোনার ফসল উৎপাদন করে। রৌদ্র, বৃষ্টি, কাদা আর পানিতে অবস্থান পরবর্তি ধান সহ অপরাপর কৃষি বীজ রোপন করতে যেন সামান্যতম কষ্ট অনুভব হয় না। আনন্দে, উৎফুলে আর খোশ মেজাজে তারা ফসল রোপন করেন। বাংলাদেশের ঋতু বৈচিত্র্যের চিরায়ত প্রথানুযায়ী আষাঢ়, শ্রাবন আর মধ্যভাদ্র মাসে আমন ধান রোপন করে। আর এই আমন ধান রোপনের একমাত্র অবলম্বন বৃষ্টির পানি। কিন্তু বাস্তবতা হলো কাঙ্খিত বৃষ্টিপাত নেই। আজ ভাদ্র মাসের ১৩ তারিখ এখনও পর্যন্ত কৃষকরা বৃষ্টির অপেক্ষায়। যে সময় গুলোতে মাঠ ঘাট পানিতে পূর্ণ থাকে, মাঠে মাঠে কৃষকের ফসল বপনের উৎসব চলে সেই সময়ে (বর্তমান) মাঠ ঘাট দৃশ্যত খরার ভাব। বৃষ্টিহীনতায় কৃষকরা বাধ্য হয়ে সেচযন্ত্র ব্যবহার করছে আর এখানেও নেই স্বস্তি কারন বিদ্যুতের অনুপস্থিতি। দিগন্ত বিস্তৃত মাঠে সবুজের সমারোহের পরিবর্তে কোন কোন অংশ সবুজে হলুদাভাব আবার কোন কোন এলাকা ফেটে চৌচির। দুশ্চিন্তা আর হতাশায় কৃষককূল, কাঙ্খিত আমন উৎপাদনে শঙ্কা এবং অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সাতক্ষীরা সর্বত্র আমন চাষের মন্থরগতি বলেই দিচ্ছে আমন উৎপাদনে ছন্দ পতন ঘটবে। সাতক্ষীরার কৃষকদের একটি বড় অংশ আক্ষেপের সাথে উচ্চারন করছেন সেচ যন্ত্রেও কাজ হচ্ছে না পানি স্তর নিচে নেমে গেছে। সাতক্ষীরা বরাবরই শস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত বর্তমান সময়ের বৃষ্টিহীনতার কঠিন এবং অনিশ্চিত পরিস্থিতি ভর করেছে বীজতলায় ধানের পাতার বয়স বেশী হচ্ছে অথচ বৃষ্টির অভাবে পা তুলে রোপন করা যাচ্ছে না, একদিকে কৃষক ধান রোপন করতে পারছে না অন্যদিকে ধান রোপন শ্রমিকরা অলস সময় অতিক্রম করছে। কৃষকরা জানান সেচ যন্ত্রের সাহায্যে আমন ধান রোপন করলে খরচ বেশী সেক্ষেত্রে লাভবান হওয়া দুষ্কর পাশাপাশি সারের মূল্য কেজি প্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে ৬ টাকা। সাতক্ষীরা কৃষি দপ্তর জানায় বর্তমান ২০২২-২৩ আমন মৌসুমে জেলায় আমন চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ৮৯ হাজার ৯১০ হেক্টর পরিমান জমি। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১৯ হাজার ৩০০ হেক্টর, কলারোয়া উপজেলায় ১১ হাজার ৯০০ হেক্টর, তালা উপজেলায় ৯ হাজার ৬০৫ হেক্টর, দেবহাটা উপজেলায় ৫ হাজার ৫০৫ হেক্টর, কালিগঞ্জ উপজেলায় ১৭ হাজার ৫০০ হেক্টর, আশাশুনিতে ৯ হাজার ২৬০ হেক্টর এবং শ্যামনগর উপজেলায় ১৬ হাজার ৮০০ হেক্টর জমি। সাতক্ষীরা বরাবরই দুর্যোগ প্রবন জেলা হিসেবে পরিচিত পেলেও শস্য উৎপাদনে জেলার সুখ্যাতি ও কৃতিত্ব সর্বাধিক। জেলায় জ্বলোচ্ছ¡াস, আকস্মিক বন্যা, ঝড় অসম বৃষ্টিপাত, মিষ্টি পানির অভাব, লবনাক্ততা পানির উপস্থিতি, বর্ধিষ্ণ তাপমাত্রা সহ বহুবিধ সমস্যা এই জেলাকে আক্রান্ত করলেও ফসল উৎপাদনে গতি সঞ্চার সামান্য হ্রাস পাইনি, এই মৌসুমে বৃষ্টির পানির অভাব হেতু উৎপাদনে গতি হ্রাস হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে যে কারনে খাদ্য ঘাটতির বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সাতক্ষীরার বিপুল পরিমান জমিতে চিংড়ী চাষের কারনে ফসলি জমির পরিমান অতীতের যে কোন সময় অপেক্ষা হ্রাস পেয়েছে যে কারনে ও শস্য উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। বৃষ্টির অভাবে কেবল আমন চাষে অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে তা নয় রবি শস্য তথা বিভিন্ন ধরনের তৈলবীজ চাষ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষকরা জানান আগামী দুই তিন দিন যদি এমন খরা ভাব, বৃষ্টিপাতহীন পরিস্থিতি থাকে তাহলে আমন চাষে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দেবে। এই মুহুর্তে কৃষকের একমাত্র প্রত্যাশা বৃষ্টিপাত, আকাশের পানিই একমাত্র ভরসা।