বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১৯ অপরাহ্ন

কাজীরহাট কলেজের প্রাক্তন ছাত্রী আসমা আক্তার হলেন ম্যাজিষ্ট্রেট

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৩ মে, ২০২২

কলারোয়া (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি \ সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহি কাজীরহাট ডিগ্রী কলেজের প্রাক্তন ছাত্রী আসমা আক্তার মিতা ৪০তম বিসিএস প্রসাশন ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি কলারোয়া উপজেলার ৮নং কেরালকাতা ইউনিয়নের কিসতম ইলিশপুর গ্রামের প্রয়াত আধ্যাত্মিক সাধক শাহ সুফি মারফতি ফকির ফজলুল হক এর পুতনি এবং সাধক দরবেশ মুহাঃ মোতাহার হোসেন মন্ডল ও মোছাঃ ঝর্না খাতুনের দ্বিতীয় কন্যা। আসমা প্রশাসন বিভাগে মেধাক্রমে সারাদেশের মধ্যে ৬০ তম স্থানে উত্তীর্ন হয়ে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন। আসমা আক্তার মিতা জানান, তিনি স্থানীয় ২৩নং ইলিশপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করে ২০১০ সালে পাশ্ববর্তী কে.কে.ই.পি সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাশ করেন। পরে ২০১২ সালে একই ইউনিয়নের কলারোয়া কাজীরহাট ডিগ্রী কলেজ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে পাশ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নৃবিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৩.৫৯ এ অনার্স এবং একই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিপিএ- ৩.৬০ পেয়ে মাস্টার্স পাশ করে ৪০তম বিসিএস প্রশাসন বিভাগে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন। আসমা আরো জানান, তিনি সাধক পরিবারের সন্তান। পারিবারিক অসচ্ছলতাকে হার মানিয়ে এই সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি। যেহেতু মারফতি সাধক অর্থ উপার্জনের পেছনে না ছুটে, ধর্ম প্রচারের কাজে সারাটা জীবন অতিবাহিত করে। যার জন্যই পারিবারিক অর্থনৈনিক অসচ্ছলতা ছিল তাদের। অর্থ অভাবে প্রাইভেট পড়তে না পারলেও তার চাচা গোলাম হোসেন মাস্টার এর কাছ থেকে তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেন। তার অদম্য ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। তাঁর জীবনে চাওয়া আছে মানুষের মতো মানুষ হয়ে দেশ ও জাতির স্বার্থে মানবতার কল্যানে নিবেদিত হয়ে কাজ করার। তাই হয়তো আল­াহর রহমতে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে তার। একান্ত সাক্ষাৎকারে আসমা আক্তার মিতার জীবনের গল্পের কিছু অনুভূতি ও ইচ্ছা গুলো বেরিয়ে এসেছে। তার প্রিয় রং কালো, প্রিয় খাবার গরুর মাংস, অবসর সময়ে বিভিন্ন ধরনের বই পড়তে ভালোবাসেন তিনি। তার এই সফলতার পেছনে পিতা-মাতা, চাচা, শিক্ষক, প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনরা অসাধারণ ভূমিকা পালন করছেন। কিন্তু সবচেয়ে অবদান রেখেছেন তার মরহুমা নানী জয়নুল বিবি। স্থানীয়রা জানান, এই পরিবারটি সাধক পরিবার। কিন্তু বংশানুক্রমে আওয়ামীলীগ পরিবার। আসমা আক্তারের বড় চাচা মরহুম আলহাজ্ব খাইবার হোসেন মাষ্টার কলারোয়া উপজেলা আ’লীগের সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি ছিলেন। এছাড়া তার চাচাতো ভাই শহীদ তোফায়েল হোসেন তুহিন ২০০২ সালে ২৬ জানুয়ারি এক রাজনৈতিক দলের কর্মীদের বোমা হামলায় শহীদ হন। আসমা আক্তার মিতার সফলতার খবর এলাকায় আনন্দের বন্যা বয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পৃথক পৃথক ভাবে তার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। আসমা আক্তার মিতার প্রতিবেশী রুমা খাতুনসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, আসমা আক্তার তাদের চোখের সামনে বড় হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই আসমা খুব মেধাবী ছিল, আসমার এমন সফলতায় এলাকায় মানুষ গর্বিত। আসমা আক্তার মিতার ১০৫ বছর বয়সী দাদী স্পষ্ট করে কথা বলতে না পারলেও তিনি ফিসফিস করে বলেন, মিতা খুব ভালো করেছে তার জন্য সকলে দোয়া করবেন। আসমা আক্তারের চাচা সাধক জাকির হোসেন বলেন, তাদের মেয়ে এলাকার সুনাম অর্জন করেছে। তারা সাধক পরিবার তাদের অর্থের প্রতি কোন মোহ নেই তাই মহান আল­াহর রহমতে তাদের মেয়ে আজ ম্যাজিস্ট্র্রেট হয়েছে। তিনি সকলের নিকট দোয়া প্রার্থনা করেন। আসমার পিতা সুফিবাদ তরিকার সাধক দরবেশ মুহাঃ মোতাহার হোসেন ও মাতা বলেন, কষ্ট করে মেয়েকে লেখাপড়া করিয়ে আজ আল­াহর রহমত ও সকলের দোয়ায় এই সফলতা পেয়েছি। তাদের মেয়ে যেন আরো বড় হয়ে এলাকার মুখ উজ্জ্বল করতে পারে। সাথে সাথে দেশের ও জনগনের কল্যানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন সে জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন। সদ্য সুপারিশ প্রাপ্ত প্রশাসন কর্মকর্তা ম্যাজিস্ট্রেট আসমা আক্তার মিতা জানান, তিনি মহান আল­াহ তায়ালার অশেষ রহমতে এই সফলতা অর্জন করেছেন। তিনি যেন কর্ম জীবনে নিজেকে সততার সাথে দেশের জন্য ও জনগনের কল্যানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন তার জন্য সকলের কাছে দোয়া কামনা করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com