আহম্মাদ উল্যাহ বাচ্চু \ সাদা সোনা খ্যাত বাগদা চিংড়ি চাষে কালিগঞ্জে মারাত্মকভাবে মড়ক দেখা দিয়েছে। যা উদ্বেগজনক সামাজিক এবং দেশের অর্থনীতির উপর চাপ বাড়বে। ইতিমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মৎস্য ঘেরগুলোতে চিংড়ি মাছ মরার ফলে চাষীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। মৌসুমের শুরুতে হঠাৎ করে চিংড়ির এই অনাকাঙি্ক্ষত পরিস্থিতির কারণে মৎস্য চাষীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সেই সাথে তারা সমাধানের পথও খুঁজে পাচ্ছেনা। একদিকে বাগদা চিংড়ির মৃত্যুর ঘটনা, অপরদিকে বিভিন্ন ধরণের ব্যবহৃত ওষুধগুলোও সঠিক ভাবে কাজ করছেনা। ঘের গুলো বর্তমানে প্রায় পানি শূন্য ও দুর্গন্ধযুক্ত হওয়ায় সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে। উপজেলার সব ইউনিয়ন ঘুরে একই ধরণের চিত্র দেখা গেছে। মৎস্য অফিসের সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে প্রায় ১৫ হাজার মৎস্য ঘেরের ১৬০০ হেক্টর জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষ নির্ধারণ করা হয়। উৎপাদন ও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। হেক্টর প্রতি ৪০০ কেজির উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তা অর্জন করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। তারালী ইউনিয়নের আমিয়ান বিলের মৎস্য ঘেরের মালিক বাবুল খান, গোলখালী বিলের মনিরুল ইসলাম মনি, বাথুয়াডাঙ্গা বিলের জিন্নাত আলী খান, শওকত মোড়ল, রফিকুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ, দক্ষিণশ্রীপুর ইউনিয়নের বেড়াখালী গ্রামের শাহাদাৎ হোসেন ও নূরুল আমিনসহ একাধিক মৎস্য ঘের মালিক জানান, বাগদা চিংড়ি ৬০ পিস কেজি সাইজে পেঁৗছানোর সাথে সাথে হঠাৎ মারতে শুরু করেছে। অনেক চাষী সমিতির থেকে ঋণ নিয়ে মৎস্য ঘের শুরু করে ছিলেন। ইতোমধ্যে ঘের মালিকরা জমির হারি, রেনু পোনা ও খাবারের জন্য মোটা অংকের টাকা খরচ করে ফেলেছেন। কিন্তু সেই পুঁজি ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা এখন নেই বললেই চলে। কেউ কেউ নতুন করে ঘের শুকিয়ে চাষের উপযোগী করার চেষ্টা করছেন, তবে তাতে খরচ আর শ্রম দুটোই বাড়ছে। শ্রীকলা গ্রামের শরিফুল ইসলাম বলেন, ঘেরের দুই কোটা মাছ ইতোমধ্যে মরে পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌকির আহমেদ—এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মৎস্য চাষীদের নিকট থেকে চিংড়ি মাছ মরার তথ্য পেয়েছি। আমি ঘেরগুলো সরেজমিনে পরিদর্শনে যাবো। তবে স্থানীয় মার্কেট থেকে পোনা সংগ্রহ এবং পানি পরিবর্তনের সময় শোধন না করার কারণে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। ভাইরাসের জন্য কোনও এন্টিবায়োটিক ঔষধ নেই, এজন্য কোন ধরণের চিকিৎসা কার্যকর হচ্ছে না। মৎস্য চাষীরা আগ্রহী হলেও নতুন করে মৎস্য ঘের গুলি শুকিয়ে চাষের উপযোগি করতে পারেন। তবে এতে করে খরচ ও শ্রম উভয়ই বাড়বে। তারা চাইলে ঘেরে পানি ও মাটি পরীক্ষার জন্য উপজেলা মৎস্য অফিসে নিয়ে আসলে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও পরামর্শ দেওয়া হবে।