শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২৩ পূর্বাহ্ন

কালিগঞ্জে বিলুপ্তির পথে বজ্রপাত প্রতিরোধক তালগাছ

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০২২

এসএম আহম্মাদ উল্যাহ বাচ্ছু কালিগঞ্জ প্রতিনিধি \ প্রাকৃতিক ভাবে ঝড় কিংবা টর্নেডো মোকাবেলায় এবং বজ্রপাত জনিত মৃত্যুর হার কমানোর প্রধান সহায়ক হলো তালগাছ। এছাড়াও কথায় আছে তালগাছ মানেই গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। আকাশ ছুঁই ছুঁই তালগাছ সেই আদিকাল থেকে গ্রাম বাংলার শোভা বৃদ্ধিতে অকৃত্রিম হিসেবে ভূমিকা রেখে চলছে। সারি সারি তালগাছ দেখে মানুষের মন জুড়িয়ে যেত। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য রক্ষায় ও শোভা বর্ধনে তালগাছের জুড়ি মেলা ভার। সেই তালগাছ আজ দিন দিন প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। অতীতে যে তালগাছ শোভা ছড়াতো, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করতো গ্রাম বাংলায়। আজ আর সেই প্রকৃতির চির চেনা রূপ এখন আর তেমন চোঁখে পড়েনা। বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রক্ষায় সরকারি বে-সরকারি পর্যায় নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহন চোখে পড়ার মত হলেও গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের বাহক আর নানা উপকারি এই তালগাছ রক্ষায় তেমন কোন পদক্ষেপ না থাকায় ক্রমেই এই গাছ কালের বিবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় কালিগঞ্জ উপজেলার প্রতিটা গ্রামের আনাচে কানাচে সড়ক মহাসড়কের পাশে সারি সারি তালগাছ শোভা পেতে দেখা গেলেও সেই চিরচেনা দৃশ্য আর চোখে পড়ে না। এখন হঠাৎ কোন কোন রুপসী গ্রাম বাংলায় দুচারটি তালগাছ চোঁখে পড়ে কিন্তু সে সব তালগাছ আবার কারো লাগানো নয় এমনিতেই এসব তালগাছ ঝোপ ঝাড়ে বা জঙ্গলে বেড়ে উঠেছে। কেউ তাল খেয়ে তালের বীজ ফেলে রেখে গেছে সেই বীজ থেকেই মূলত জন্ম হয়েছে এসব তাল গাছের। অতীতে অপরিচিত মানুষের বাড়ী, জমি, পুকুর, মাঠ, মসজিদ, মন্দির, মঠ, গির্জা, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন স্থান চেনানোর জন্য সেক্ষেত্রে বলা হত উচুঁ ঐ তালগাছটির পাশে। এমনকি সরকারি ও বেসরকারি কাজে নানান দিক নির্দেশনার ক্ষেত্রেও তালগাছের সহায়তা নেওয়া হত। তালের পিঠা, তালের গুড়, তালের রস আর তালের বড়া সব মানুষের নিকট প্রিয় এবং খুবই মজাদার খাবার। বিশেষ করে তালের পিঠা দিয়েই অতীতে জামাইয়ের বাড়ী, শ্বশুর বাড়ী, বেয়াই বাড়ী, মেয়ের শ্বশুর বাড়ী, ছেলের শ্বশুর বাড়ীসহ নানান আত্মীয়তার বন্ধন রচিত হত। অতীত সময় গুলোতে তালপিঠা ছাড়া গ্রাম বাংলায় আত্মীয়তা কল্পনাই করা যেতনা। এছাড়াও তালগাছের পাতায় তৈরি করা হয় নানা রংঙের বা ডিজাইনের হাত পাখা। কিন্তু গ্রাম বাংলা থেকে ক্রমেই তালগাছ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় গ্রামবাংলার পরিবার গুলোতে আর নেই সেই তালপাতার পাখা ও তাল পিঠা দিয়ে অতিথিয়তার নিয়ম। এ বিষয়ে উপজেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার রবিউল ইসলাম বলেন, সামনে বজ্রপাত ও ঝড়ের মৌসুম। বজ্রপাতের সময় করণীয় ও সতর্কতা বিষয়ে কিছু পরামর্শ। নিজে জানুন, পত্র পত্রিকার মাধ্যমে অন্যকে জানার সুযোগ করে দিন। ১. এপ্রিল-জুন মাসে বজ্রবৃষ্টি বেশি হয় এবং বজ্রপাতের সময়সীমা সাধারণত ৩০-৪৫ মিনিট স্থায়ী হয়। এ সময়টুকু ঘরে অবস্থান করুণ। ২. আকাশে ঘন কালো মেঘ দেখা দিলে ঘরের বাইরে যাবেন না। অতি জরুরী প্রয়োজনে রাবারের জুতা পরে বাইরে বের হতে পারেন। ৩. বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা, খোলা মাঠ অথবা উঁচু স্থানে থাকবেন না। ৪. বজ্রপাতের সময় ধানক্ষেত বা খোলার মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি পায়ের আঙ্গুলের উপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙ্গুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকুন। ৫. যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংইক্রটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন। টিনের চালা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। ৬. উঁচু গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তাঁর বা ধাতব খুটি, মোবাইলের টাওয়ার ইত্যাদি থেকে দূরে থাকুন। ৭. কালো মেঘ দেখা দিলে নদী, পুকুর, ডোবা বা জলাশয় থেকে দূরে থাকুন। ৮. বজ্রপাতের সময় গাড়ীর ভেতর অবস্থান করলে, গাড়ির ধাতব অংশের সাথে শরীরের সংযোগ ঘটাবেন না; সম্ভব হলে গাড়ীটি নিয়ে কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন। ৯. বজ্রপাতের সময় বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি ও বারান্দায় থাকবেন না। জানালা বন্ধ রাখুন এবং ঘরের ভিতরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকুন। ১০. বজ্রপাতের সময় মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ল্যান্ডফোন, টিভি, ফ্রিজসহ সকল বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন এবং এগুলো বন্ধ রাখুন। ১১. বজ্রপাতের সময় ধাতব হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করবেন না। জরুরী প্রয়োজনে প্লাস্টিক বা কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করবেন। ১২. বজ্রপাতের সময় শিশুদের খোলা মাঠে খেলাধুলা থেকে বিরত রাখুন এবং নিজেরাও বিরত থাকুন। ১৩. বজ্রপাতের সময় ছাউনি বিহীন নৌকায় মাছ ধরতে যাবেন না। তবে এ সময় সমুদ্র বা নদীতে থাকলে মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকার ছাউনির নিচে অবস্থান করুন। ১৪. বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির ধাতব রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করবেন না। ১৫. প্রতিটি বিল্ডিং-এ বজ্র নিরোধক দন্ড স্থাপন নিশ্চিত করুন। ১৬. খোলাস্থানে অনেকে একত্রে থাকাকালীন বজ্রপাত শুরু হলে প্রত্যেকে ৫০ থেকে ১০০ ফুট দুরে দুরে সরে যান। ১৭. কোন বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকে তাহলে সবাই এক কক্ষে না থেকে আলাদা আলাদা কক্ষে যান। ১৮. বজ্রপাতে কেউ আহত হলে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মত করেই চিকিৎসা করতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসককে ডাকতে হবে বা হাসপাতালে নিতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com