কালিগঞ্জ প্রতিনিধি \ কালিগঞ্জে ভারত—বাংলাদেশ সীমান্তের কালিন্দী, ইছামতি ও যমুনা নদীর ত্রিমোহনার পোর্ট বসন্তপুরে বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই পোর্ট বসন্তপুর এলাকার বলরামের চর ওয়াপদার বেড়িবাঁধের উপর পিচের রাস্তার অর্ধেক ধসে পড়েছে। দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা না করলে জোয়ারের পানিতে অন্তত ৫—৬টি গ্রাম ডুবে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়াও ঐ এলাকার আরো ৪টি স্থান চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এতে করে বসতভিটা, ফসলি জমি ও মাছের ঘের নষ্ট হবে এবং হাজার হাজার মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করবে। স্থানীয় বসবাসকারী ব্যাক্তিরা বলেন, পোর্ট বসন্তপুরে নদীর ভাঙ্গন সৃষ্টি হলে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির নিয়মিত চলাচলও ব্যাহত হবে। নিয়মিত চলাচলকারী সাধারণ মানুষও চরম দুর্ভোগে পড়বে। সেই ঝুঁকির মধ্যে থাকবে বসন্তপুর তহশীল অফিস, একাধিক মসজিদ, হযরত বুলা সৈয়েদ দরবার শরীফসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং হাজার পরিবার। নদীতে মাছ ধরতে আশা রোকেয়া, খাদিজা ও মনিরুল ইসলাম বলেন, ওয়াপদার বেড়িবাঁধের অবস্থা এখন অত্যন্ত নাজুক। দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামত না করলে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে এলাকার মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা ফজলুর রহমান জানান, আমার বাড়ির সামনে থেকেই ভাঙন শুরু হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে ঝুকির মধ্যে রয়েছি। বর্তমানে বেড়িবাধেঁর রাস্তার পাশে ঘর বেঁধে কোনোমতে টিকে আছি। সেই রাস্তাটিও এখন ভাঙনের মুখে। বেলাল হোসেন নামের এক যুবক জানান, আমি বাইক চালিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ সামনের চাকা ভাঙা গর্তে পড়ে গিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি। পথচারী আল আমিন বলেন, নদীর কিনার ঘেঁষে ওয়াপদার পাঁকা সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করি। যদি ভাঙন আরও বাড়ে, তাহলে আমাদের চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। বিকেল বেলা রিভার ড্রাইভ ইকোপার্কে হাজার হাজার মানুষ বেড়াতে আসে সকলের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হবে। ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম বলেন, গত দুই বছর ধরে এই এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমরা ওয়াপদার পাইপ বন্ধ করে দিয়েছিলাম, কিন্তু যে কেউ সেই পাইপ সচল করে দিয়েছে। মাত্র ১০ গজের ব্যবধানে দুটি পাইপ বসানো অত্যন্ত দুঃখজনক। বর্ষা মৌসুমের আগেই অবৈধ পাইপ অপসারণ ও বাঁধের পূর্ণাঙ্গ সংস্কার না হলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। কালিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ—বিভাগীয় প্রকৌশলী শুভেন্দু বিশ^াস জানান, বেড়িবাঁধের ভাঙ্গনের খবর পেয়ে আমার ঘটনাস্থলে যেয়ে আমরা জরুরি ভিত্তিতে মেরামত কাজ করেছি। আগামি আমাবশ্যার আগেই আমরা স্থায়ী ভাবে কাজ করবো। পাশাপাশি অবৈধ পাইপ অপসারণের ব্যবস্থা নিয়েছি। ভাঙন পরিস্থিতির সার্বিক বিষয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। খবর পেয়ে রবিবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মণ্ডল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরের কর্মকতার্দের দ্রুত সময়ের মধ্যে ভেড়িবাঁধ মেরামতের নির্দেশ দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অমিত কুমার বিশ্বাস, ৫ নং পোল্ডারের এসও রনিত হোসেন মনি, ইউপি সদস্য আরিজুল ইসলাম, সংরক্ষিত ইউপি সদস্য জাহানারা বেগম, সাংবাদিক সুকুমার দাশ বাচ্চু, এম. হাফিজুর রহমান শিমুলসহ জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।