শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১৫ পূর্বাহ্ন

কালের বিবর্তনে শ্যামনগর উপজেলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার শোভা বর্ধনকারী শিমুল গাছ

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

হাফিজুর রহমান কাশিমাড়ী থেকে ॥ শ্যামনগর উপজেলা থেকে কালের পরিবর্তনে সারা দেশের ন্যায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার শোভা বর্ধনকারী শিমুল গাছ। মনোমুগ্ধকর শিমুল ফুল নিয়ে রচিত হয়েছে গান, কবিতা ও নানা রকম গল্প।বর্তমান সময়ের অনেক শিশুই চিনেনা শিমুল ফুল।অতীতে গ্রামের মানুষ প্রাকৃতিকভাবে গজিয়ে উঠা শিমুলের তুলা দিয়ে লেপ, তোষক, বালিশ ইত্যাদি তৈরি করত। যা ছিল খুবই আরামদায়ক এবং স্বাস্থ্যসম্মত। শিমুল গাছ কমে যাওয়ার ফলে স্বাস্থ্যসম্মত তুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ। অপরদিকে শিমুল তুলা বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করতে পারতো কৃষক। এ ছাড়াও শিমুল গাছ গ্রামাঞ্চলে ঔষধি গাছ হিসাবে সু-পরিচিত। শিমুলের মূল বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ গাছের প্রায় সব অংশেরই রয়েছে ভেষজগুণ। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা এখনো নানা রোগের চিকিৎসায় এ গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে। শিমুল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম “বোমবাক্স সাইবা লিন”। এটি বোমবাকাসিয়াক পরিবারের উদ্ভিদ। বীজ ও কান্ডের মাধ্যমে এর বংশবিস্তার হয়। রোপণের ৫-৬ বছরের মধ্যে শিমুল গাছে ফুল ফোটে। ৯০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। সেই তুলনায় বেশ মোটাও হয়। নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে শিমুল গাছ দেড়শ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। শীতের শেষে পাতা ঝরে পড়ে। বসন্তের শুরুতেই গাছে ফুল ফোটে। আর এ ফুল থেকেই হয় ফল। চৈত্র মাসের শেষের দিকে ফল পুষ্ট হয়। বৈশাখ মাসের দিকে ফলগুলো পেকে শুকিয়ে গিয়ে বাতাসে আপনা আপনিই ফল ফেটে প্রাকৃতিকভাবে তুলার সাথে উড়ে উড়ে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়া বীজ থেকেই এর জন্ম হয়। অন্যান্য গাছের মত এ গাছ কেউ শখ করে লাগায় না। নেওয়া হয়না কোন যত্ন। অযত্ন আর অনাদরে প্রাকৃতিকভাবেই গাছ বেড়ে ওঠে। এ গাছের প্রায় সব অংশই কাজে লাগে। এর ছাল, পাতা ও ফুল গবাদিপশুর খুব প্রিয় খাদ্য। বালিশ, লেপ ও তোষক তৈরিতে শিমুল তুলার জুড়ি নেই। কিন্তু উপকারী এই গাছটি আজ বিলুপ্তির পথে। শিমুল গাছের চারা রোপণে কৃষকের উদাসীনতার পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি কোনো উদ্যোগ না থাকাকে বিলুপ্তির কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল। স্থানীয়রা জানান, প্রায় ০৮-১০ বছর আগেও বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশে বাড়ির আনাচে কানাচে চোখে পড়ত অসংখ্য শিমুল গাছ। আর এসব গাছে ফুটন্ত শিমুল ফুলের সমারোহই জানান দিত প্রাকৃতিতে বসন্ত এসেছে। প্রস্ফুটিত ফুলে পুরো এলাকা এক অপরূপ রূপে সজ্জিত হয়ে উঠতো। শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ী ইউনিয়নের কাশিমাড়ী গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি মোঃ আদম আলী মোল্লা বলেন, আগে গ্রামে অনেক শিমুল গাছ ছিল। শিমুল গাছটি ঔষধি গাছ হিসেবেও পরিচিত। গ্রামাঞ্চলের মানুষ বিষফোঁড়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে এ গাছের মূল ব্যবহার করত। তাছাড়াও একটি বড় ধরনের গাছ থেকে তুলা বিক্রি করে ১০-১২ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব হতো। আগের তুলনায় এখন শিমুলের তুলার দাম অনেক বেড়ে গেছে। এর পরও এই গাছ নিধন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। দিন দিন শিমুল গাছ কমে যাওয়ায় দেশি তুলা খুজে পাওয়া যায় না। ১০-১২ বছর পূর্বে প্রতি কেজি শিমুল তুলা বিক্রি হতো ৪০-৫০ টাকায়। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকায়। প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত বর্ধনশীল গাছের প্রতি মানুষ ঝুকে পড়ায় শিমুল গাছসহ বিভিন্ন উপকারী গাছ পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com