এফএনএস আন্তার্জাতিক ডেস্ক: কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্র পহেলগামে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় অন্তত ২৬ জন নিরীহ পর্যটক প্রাণ হারিয়েছেন। এই মর্মান্তিক হামলায় আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সম্প্রতি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সংঘটিত এ হামলাকে সবচেয়ে ভয়াবহ বলে আখ্যা দিয়েছে প্রশাসন।
ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার বিকেলে, পহেলগামের কাছাকাছি পাহাড়ি অঞ্চল বাইসারান এলাকায়। স্থানীয় ট্যুর গাইড ওয়াহিদ জানান, গুলির শব্দ শুনে তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং সেখানে মাটিতে পড়ে থাকা রক্তাক্ত দেহ দেখতে পান। “দেখে মনে হচ্ছিল, তারা আর বেঁচে নেই,”বলেন তিনি। আহতদের অনেকে ঘোড়ায় চাপিয়ে সরিয়ে নিতে দেখা গেছে।
এ হামলার সবচেয়ে ভয়াবহ দিকটি তুলে ধরেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাদের ভাষ্যমতে, বন্দুকধারীরা পুরুষ ও নারী পর্যটকদের আলাদা করে কেবল পুরুষদের লক্ষ্য করেই গুলি চালাচ্ছিল। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানায়, এক নারী যাত্রীর স্বামী মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “জঙ্গিরা গুলির ঝড় বইয়ে দিয়েছিল, স্পষ্টভাবে পুরুষদের লক্ষ্য করে।”
হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সন্দেহভাজন চার ব্যক্তির স্কেচ ও নাম প্রকাশ করেছে ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো। এদের মধ্যে রয়েছে আসিফ ফুজি, সুলেমান শাহ, আবু তালহা এবং আদিল। গোয়েন্দারা আরও জানান, হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিল ‘সাইফুল্লাহ কাসুরি’, যিনি ‘খালিদ’ নামেও পরিচিত। তার নেতৃত্বেই হামলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
প্রমাণ হিসেবে হামলাকারীদের সঙ্গে শুকনো খাবার, ওষুধ এবং ক্যাম্পিং সরঞ্জাম পাওয়া গেছে, যা তাদের দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্তুতির ইঙ্গিত দেয়।
ঘটনার পরপরই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কাশ্মীরে পৌঁছান। তিনি রাজ্যের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহর সঙ্গে বৈঠক করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ দেওয়া বার্তায় তিনি বলেন, “ভারত সন্ত্রাসবাদের কাছে কখনো মাথা নত করবে না। কাপুরুষোচিত এই হামলার দায়ীদের শাস্তি হবেই।”
হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সৌদি সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসেন এবং এই ঘৃণ্য কাজের তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, “এই হামলার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মোদির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং ভারতের পাশে থাকার আশ^াস দেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একযোগে এই হামলার নিন্দা জানিয়ে একে ‘বর্বরোচিত ও জঘন্য অপরাধ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
এই হামলার পর দিল্লি থেকে শুরু করে কাশ্মীর উপত্যকা পর্যন্ত কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দিল্লি শহরের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র ও সীমান্ত এলাকায় বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে সড়কে ও যানবাহনে। পহেলগামের আশপাশে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত সেনা ও আধাসামরিক বাহিনী।
কাশ্মীরের বহু এলাকায় এই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভের ছবি ও ভিডিও। মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করছেন, কেন পর্যটকদের মতো নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের নিশানা করা হলো।
এনডিটিভি ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার (এলইটি) ছায়া সংগঠন ‘দ্য রেজিট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। যদিও ভারতের সরকারিভাবে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়নি।