জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ আগামী ২৫ এপ্রিল তফসিল ঘোষনা করা হবে কুমিলা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের তফসিল। এ উপলক্ষ্যে ওই দিন কমিশন সভা আহবান করা হয়েছে। তফসিল অনুযায়ী ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৮ জুন। এ নির্বাচনটির মধ্যে দিয়ে নির্বাচন কমিশন প্রবেশ করবে নির্বাচনী কর্মযজ্ঞে। নিরপেক্ষতা প্রমাণের জন্য তাই এই নির্বাচনটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের জন্য ‘এসিড টেস্ট’। এ ছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ প্রায় একশ’র মতো পৌরসভা ও স্থগিতসহ বেশ কিছু ইউনিয়ন পরিষদের তফসিল দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটের দিনক্ষণ একদিনই রাখার চিন্তা ইসির। ইসি সূত্রমতে, কুমিলা সিটি নির্বাচন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) করার চিন্তা করছে ইসি। এর আগে দুটি নির্বাচনও ইভিএমে হয়। এ লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। আগামী ২৫ এপ্রিল নতুন কমিশনের দ্বিতীয় কমিশন সভা আহবান করা হচ্ছে বলে স্বীকার করেন অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। তিনি বলেন, এ সভায় কুমিলা সিটিসহ স্থানীয় সরকারের আরও বেশকিছু নির্বাচন ইস্যুতে এজেন্ডা নথির্ভুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির এক কর্মকর্তা বলেন, কমিশনের কমিশন সভায় কুসিক সিটির তফসিল ঘোষণা করা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিলা সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া শুরু হয় আরও অগে থেকে। কিন্তু কুমিলা সদর দক্ষিণের সীমানা বিন্যাস ইস্যুতে মামলা হয়। এটা নিষ্পত্তি করতেই সময়ক্ষেপন হয়। ফলে আগামী ১৬ মে’র মধ্যে এ সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা সত্তে¡ও মেয়াদোর্ত্তীণ হওয়ার পর নির্বাচন করতে হচ্ছে ইসিকে। এর আগে কমিশন সচিবালয়ের সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেছিলেন, ১৬ জুনের মধ্যে নির্বাচন করা হবে। আগামী ২৫ এপ্রিল তফসিল ঘোষণার মধ্যে কমিশনের দেওয়া প্রতিশ্র“তি রক্ষা হচ্ছে। নতুন সিটি গঠন থেকে দু’বার নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরাজিত হয়েছে। এই পরাজয়ের জন্য দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলই দায়ী বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দাবী। তাই দলটির জন্য এবার সিটিতে জয় পেতে মরিয়া হয়ে উঠবে। কারণ তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। এতে নতুন কমিশনের প্রতি বাড়তি চাপ তৈরি হতে পারে। কারণ প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল বিএনপির প্রার্থীর জনপ্রীয়তা অনেক। তাই প্রধান দু’রাজনৈতিক দলের জয়ী হওয়ার প্রচেষ্টায় কমিশন নিরপেক্ষ না থাকলে তাদের জন্য বদনাম হয়ে যেতে পারে এ নির্বাচনটি। এর প্রভাব আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ এবং মেয়াদ পর্যন্ত থাকতে পারে। এই নির্বাচনের পর রংপুর সিটি নির্বাচন করতে বেশ সময় পাবে এই কমিশন। আগামী বছরের ২৩ ফেব্র“য়ারির মধ্যে এ নির্বাচন করতে হবে। এ হিসেবে মেয়াদ শুরু হবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে। কারণ এ নির্বাচনটি হয়েছিল ২০১৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর। এদিকে, গত ২০১৭ সালের ৩০মার্চ কুমিলা সিটির ভোট হয়। ওই বছরের ১৭মে প্রথম সভা বসে। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ এর ধারা ৩৪ অনুযায়ী গত বছরের ১৬ নভেম্বর থেকে আগামী ১৬ মে তারিখের মধ্যে অর্থাৎ মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে এ সিটি নির্বাচনের আইনি বাধ্যবাধকতা আছে। এটাকে ভিত্তি ধরে কমিশন তাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছিল। সীমানা সংক্রান্ত জটিলতায় নির্বাচন থেকে বিরত থাকতে হয় ইসিকে। উলেখ্য কুমিলা সিটির সাধারণ ওয়ার্ড ২৭টি, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ০৯টি, ভোটকেন্দ্র ১০৩টি এবং ভোটকক্ষ ৬২৮টি। এছাড়া মোট ভোটার সংখ্যা ২লাখ ৭ হাজার ৫৬৬জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২ হাজার ৪৪৭জন এবং মহিলা ১ লাখ ৫ হাজার ১১৯জন। তবে পুরুষ ভোটারের চেয়ে প্রায় ৩ হাজার মহিলা ভোটার বেশি এ সিটিতে । গত দুটি সিটি নির্বাচন ইভিএমে হলেও এবার ব্যালট না ইভিএমে হবে সে সিদ্ধান্ত দেবেন নতুন কমিশন। তবে ইসি সচিবালয় চাই ইভিএমে ভোটটি হোক। এদিকে, ইসির সংলাপে অংশ নিয়েছে শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও প্রিন্ট-ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকরা। প্রত্যেকেই নিরপেক্ষতা বজায় রেখে নির্বাচন আয়োজনে ইসিকে তাগিদ দিয়েছেন। কারো দিকে না তাকিয়ে শপথ ও নির্বাচনী বিধি-বিধানের আলোকে দায়িত্ব পালনের পরামর্শ দিয়েছেন। তাই ইসির জন্য কুসিক সিটির নির্বাচনটি প্রথম পরীক্ষা। অনেকেই এসিড টেস্ট বলেছেন। পাশাপাশি মেয়াদোর্ত্তীণ পৌরসভা নির্বাচন করবে ইসি। এর সংখ্যা ৭০-৮০টির মতো। এর মধ্যে মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় কিছু নির্বাচন স্থগিত হতে পারে। আর স্থগিত কিছু ইউপির নির্বাচন হবে কুমিলা সিটির সঙ্গে।