জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ কুমিলা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচন দিয়েই গতকাল রবিবার শপথ নেয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্েযর কমিশনের প্রথম পরীক্ষা শুরু হবে। এই পরীক্ষা নিরপেক্ষতার মধ্যে উতরে গেলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করা এই কমিশনের জন্য স্বস্তির হবে বলে মনে করছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আগামী এপ্রিল মাসের দিকে এই নির্বাচন করতে প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রাপ্ত তথ্যমতে, নতুন কমিশন দায়িত্বে বসার পর সর্বশেষ ধাপের অনুষ্ঠিত নির্বাচনের অনিষ্পন্ন গেজেট জারি নিয়ে সিদ্ধান্ত দিতে হবে তাদের। ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত মন্তব্য সহকারে নথি চূড়ান্ত করে রাখা হয়েছে, যাতে কাজটি মতামত ও পরামর্শ দ্রুত দিতে সহজ হয়। এর পর কুমিলা সিটির নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত দিতে হবে সদ্য নিয়োগ পাওয়া এই কমিশনকে। একই সঙ্গে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণী বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে তাদের । এ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনার সঙ্গে রংপুর সিটি ও জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে ভাবতে হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গত সপ্তাহে কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, কুমিলা সিটি নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি আমরা বিদায়ী কমিশনের সময় থেকে শুরু করেছিলাম। কারণ গত নভেম্বর মাস থেকে এ সিটি নির্বাচনের ক্ষণণননা শুরু হয়েছিল। নির্বাচনটি করার ইচ্ছে পোষণ করেছিল বিদায়ী কমিশন। তবে করোনাসহ নানা জটিলতা ও সময় স্বল্পতায় সম্পন্ন করতে পারেননি। তিনি বলেন, নতুন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর ধীরে সুস্থে নির্বাচনটির কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। কারণ স্থানীয় সরকার সিটি নির্বাচনের মেয়াদ পূর্ণের আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার আইনি বাধ্যবাকতা আছে। তাই এপ্রিলের দিকে ভোট করা হলেও সমস্যা নেই। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিলা সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া হলেও সদর দক্ষিণের একটি ওয়ার্ডে সীমানা বিন্যাস নিয়ে মামলা আছে। এটি নিষ্পত্তির জন্য ইসির আইন শাখায় নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা শাখা থেকে মতামত জানতে নথি উৎথাপন করা হয়েছে। আইনি মতামত ইতিবাচক হলে নির্বাচন সম্পন্ন করার পথ উন্মুক্ত হয়ে যাবে। এটি সমাধানে জটিলতা থাকলে একটু বিলম্বে নির্বাচন করতে হবে কমিশনকে। কারণ কুমিলা সিটি নির্বাচন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য এবার চ্যালেঞ্ছ। কারণ সরকার ক্ষমতাই থেকেই দুবার বিএনপির প্রার্থী মেয়র হয়েছেন এ সিটিতে। এই পরাজয়ের জন্য দলীয় কোন্দল দায়ী বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দাবী। আগামী দ্বাদশ সংসদ গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমৃলক হলে কুসিক নির্বাচনে জয়ে মরিয়া হয়ে উঠতে পারে আওয়ামী লীগ। এতে নতুন কমিশনের প্রতি বাড়তি চাপ তৈরি হতে পারে। কারণ প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল বিএনপির প্রার্থীর জনপ্রীয়তা অনেক। তাই প্রধান দু’রাজনৈতিক দলের জয়ী হওয়ার প্রচেষ্টায় কমিশন নিরপেক্ষ না থাকলে তাদের জন্য বদনাম হয়ে যেতে পারে এ নির্বাচনটি। এর প্রভাব আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ এবং মেয়াদ পর্যন্ত থাকতে পারে। এই নির্বাচনের পর রংপুর সিটি নির্বাচন করতে বেশ সময় পাবে এই কমিশন। আগামী বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ নির্বাচন করতে হবে। এ হিসেবে মেয়াদ শুরু হবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে। কারণ এ নির্বাচনটি হয়েছিল ২০১৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর। এদিকে, গত ২০১৭ সালের ৩০মার্চ কুমিলা সিটির ভোট হয়। ওই বছরের ১৭মে প্রথম সভা বসে। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন,২০০৯ এর ধারা ৩৪ অনুযায়ী গত বছরের ১৬ নভেম্বর থেকে আগামী ১৬ মে তারিখের মধ্যে অর্থাৎ মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে এ সিটি নির্বাচনের আইনি বাধ্যবাধকতা আছে। এটাকে ভিত্তি ধরে কমিশন তাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখন সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা না থাকলে দ্রুতই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে নতুন কমিশনকে। উলেখ্য কুমিলা সিটির সাধারণ ওয়ার্ড ২৭টি, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ০৯টি, ভোটকেন্দ্র ১০৩টি এবং ভোটকক্ষ ৬২৮টি। এছাড়া মোট ভোটার সংখ্যা ২লাখ ৭ হাজার ৫৬৬জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২ হাজার ৪৪৭জন এবং মহিলা ১ লাখ ৫ হাজার ১১৯জন। তবে পুরুষ ভোটারের চেয়ে প্রায় ৩ হাজার মহিলা ভোটার বেশি এ সিটিতে । গত দুটি সিটি নির্বাচন ইভিএমে হলেও এবার ব্যালট না ইভিএমে হবে সে সিদ্ধান্ত দেবেন নতুন কমিশন। তবে ইসি সচিবালয় চাই ইভিএমে ভোটটি হোক। এদিকে, নতুন কমিশনের নিয়োগে সচিবালয়ে কর্মরত অনেকেই একটু দুংচিন্তায় নতুন পোষ্টিং নিয়ে। ইতিমধ্যে বিদায়ী পাঁচজন কমিশনের সমসংখ্যক একান্ত সচিবের (পিএস) মধ্যে তিনজনকে বদলির অর্ডার প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু এসব প্রত্েযক কর্মকর্তাই যোগ্য ও নিষ্ঠাবান বলে তাদের সহকর্মীরা জানিয়েছেন। নতুন কমিশনকে কাজে ধারণা পেতে কিছু সময় দিয়ে বদলি করলে নতুন কমিশনের জন্য ভালো হতো এমনিই মন্তব্য পিএস নন কয়েকজন কর্মকর্তা। উলেখ্য ইসি গঠনে এই প্রথম আইনি প্রক্রিয়ায় নতুন কমিশন নিয়োগ করা হয়েছে। সার্চ কমিটির সুপারিশকৃত ১০ সদস্েযর নাম থেকে পাঁচজনকে নিয়োগ দিয়েছে রাষ্ট্রপতি। এই কমিশনের অধীন আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। গতকাল ইসি কমিশনার হিসেবে শপথ নিয়েছেন আজ প্রথম অফিস করবেন তারা। তবে বিগত দুটি কমিশনের চেয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত নতুন কমিশনের আগমন নিয়ে সন্তুষ্ট বেশিরভাগ কর্মকর্তা কর্মচারী। এছাড়া নতুন সিইসির রুমে নামফলক বসানো হয়েছে। গতকাল শপথ অনুষ্ঠানে ইসির উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আর নতুন কমিশন দায়িত্বে এসে ভোটার দিবস উদযাপনে শামিল হতে হবে। আগামী ২মার্চ ইসির ভোটার দিবস। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন।