রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১৫ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

কুমড়া ও ডালের বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত কয়রায় গায়ের বধুরা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২

শাহজাহান সিরাজ, কয়রা থেকে \ শীতকে স্বাগত জানিয়ে কুমড়ো ও ডালের বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত গায়ের গৃহবধুরা। কুমড়ো ডালের বড়ি দেখতে যেমন, খেতে তার চেয়ে বেশি সুস্বাদু। শীতের সকালে কুয়াশা ভেদ করে সূর্যের মিষ্টি রোদ উকি দিলেই গায়ের বধুরা বাড়ীর আঙিনায়, পুকুর পাড়ে অথবা ক্ষেতের পাশে রাতে ভেজানো কুমড়ো ডাউল মেশানো কাথা বা শুতার কাপড়ের উপর গুটি গুটি বড়ি দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অত্যান্ত সুস্বাদু এই বড়ি কাপড়ের উপর সাজিয়ে রাখায় প্রথমে সাদা দেখা গেলেও দিনের আলোয় ক্রমেই কিছুটা সোনালি রংয়ের মতে দেখা যায়। আর এই বড়ি কয়েকদিন পর সবজি বা মাছের সাথে রান্না করলেই অত্যান্ত সুস্বাদু হয়। আবার ডাল দিয়ে মূলা, ওলকপি, শালগম, লাউসহ বিভিন্ন সবজি দিয়ে এ ধরনের বড়ি তৈরি কাজে ব্যস্ত কয়রা উপজেলার প্রায় প্রতিিিট পাড়ায় পাড়ায়। তবে এ এলাকায় শীতের আগমনের সাথে সাথে ডাল দিয়ে বড়ি তৈরি প্রায় বাড়ীতে হওয়ায় বাজারে বিক্রি হতে তেমনটা দেখা যায় না। এ বিষয় সম্প্রতি কয়েকটি পাড়ায় ঘুরে দেখা গেছে সন্ধ্যার পর গায়ের বধুরা কুমড়ো, মূলা বা অন্যান্য সবজি ছিলে ডালের সাথে মিশাতে ব্যস্ত। যাহা রাত পোহালেই কাথার উপর গুটি গুটি এবং সারি বদ্ধভাবে দেখা যাবে। দিনের বেলায় কেউ কেউ মইয়ের উপর চিকন বাঁশের খিল দিয়ে তৈরি মাচায়, ঘরের ছাদে এবং ঘরের টিনের চালে ধবধবে সাদা কুমড়ো বড়ি শুকাতে দিচ্ছে। আবার গ্রামের গৃহবধুরা কেউ বা কুমড়ো বড়ি তৈরির কাজে ব্যস্ত আবার কেউবা শুকানো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। জানা গেছে, শীতের সময় এসব বড়ি রান্না শেষে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ পাওয়া যায়, যে কারনে যে পরিবারে যে সবজি ডালের বড়িতে স্বাদ পায় সে পরিবারে সেই সবজি ডালের বড়ি দিতে দেখা যাচ্ছে। এছাড়া এ ধরনের বড়ি ভাজা করে বিভিন্ন ভাবে রান্না সহ ভর্তা তৈরিতেও ব্যবহার করা হয়। সে জন্য যুগ যুগ ধরে এ ধরনের বড়ি শীতের আগমনের সাথে সাথে গায়ের বধুরা তৈরি করে আসছে, ফলে শীত মৌসুমে কুমড়া ডালের বড়ি তৈরির কাজে বাধা দেয় না বাড়ীর কর্তারা। এদিকে ডাল বড়ি তৈরি নিয়ে একাধিক গ্রামের বধুদের সাথে আলাপ করলে তারা জানায়, এই বড়ি তৈরি করতে উপকরণ লাগে ২ টি। মাসকলাইয়ের ডাল আর চাল কুমড়া বা কুমড়ো জাতীয় সবজি। গৃহবধুরা জানান, বড়ি রোদে শুকিয়ে নেওয়ার জন্য বড় চাটাই বা পাটি এবং পাতলা সুতি কাপড় ধুয়ে শুকিয়ে রাখতে হয়। বড়ি তৈরির আগের বিকালে ডাল ঝেড়ে, ধুয়ে ভিজিয়ে রাখেন তারা। সন্ধ্যায় চাল কুমড়া ছিলে ভেতরের নরম অংশ ফেলে মিহিকুচি করে রাখেন। এরপর কুমড়ো ভালভাবে ধুয়ে নেন, যেন এর টক ভাব না থাকে। ধোয়া হলে পরিস্কার পাতলা কাপড় বেঁধে সারারাত ঝুরিয়ে রাখেন। এতে কুমড়োর সব পানি বেরিয়ে ঝরঝরে হয়ে যায়। পরের দিন ভোরে ডালে পানি ছেঁকে, শিল-পাটায় ডাল খুব মিহি করে বেঁটে নেন অথবা এখন কেউ কেউ ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নেন। এরপর ডালের সঙ্গে তারা কুমড়ো মেশান। খুবই ভাল করে হাত দিয়ে দুটি উপকরণ মেশান যতক্ষণ না ডাল-কুমড়োর মিশ্রন হালকা হয়। তারপর একটি বাটিতে পানি নিয়ে তাতে বড়ির আকারে একটু ফেলে পরিক্ষা করে নেন। যদি দেখেন বড়ি ভেসে উঠছে এবং পানিতে ছড়িয়ে যাচ্ছে না তাহলে বুঝে নেন আর ফেটতে হবে না। আর ডুবে গেলে কিংবা ছড়িয়ে গেলে আরও ভাল করে মাখান। সবশেষে চড়া রোদে চাটি বা কাপড় বিছিয়ে বড়ির আকার দিয়ে একটু ফঁকা ফাঁকা করে বসিয়ে শুকাতে দেন। তিন থেকে চার দিন এভাবে রোদে শুকানোর পর শেষ দিন বড়ি উঠিয়ে কাপড়ে ঝুলিয়ে রাখেন। ভালভাবে বড়ি শুকানো হলে কাচের বোয়েমে ভরে রাখেন বেশি দিন ধরে রান্নায় ব্যবহার করার জন্য। মহারাজপুর গ্রামের গৃহবধু সালমা খাতুন জানান, শীত মৌসুমে কুমড়োর বড়ি দেয়াটা সকল পরিবারের মহিলারা একটা উৎসব মনে করে। কেননা প্রতিটি পরিবারের এটার জন্য আয়োজন থাকে। পূর্বে এ ডাল পিসা হতো ঢেঁকিতে। কিন্তু বর্তমানে যন্ত্র নির্ভর সময়ে এটা করা হচ্ছে না। ফলে শীতের রাত জেগে ঢেঁকিতে আর পাড় দিতে হবে না। রোকসানা খানম নামে এক গৃহিনী জানান, কুমড়ো বড়ি গৃহিনীদের জন্য শীতকালীন একটা যেন একটা রুটিন মাফিক কাজ। এ বড়ি নিয়ে গ্রাম্য সমাজে রয়েছে নানা কুসংস্কার। আবার কেউ কেউ বলেন, কুমড়ো বড়ি দিলে ওই দিন যদি কুয়াশায় সূর্যের দেখা না মেলে তাহলে অনেকে বলে থাকেন বড়ি দেয়া গৃহিনীর কারনে সূর্যের আলো মিলছে না। যদিও একথার সঙ্গে বাস্তবতার কোন মিল নেই। তবে শীত মৌসুমে গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়ীতে বড়ি দিয়ে তরকারি রান্না করতে দেখা গেলেও গরম পড়ার সাথে সাথে বড়ির চাহিদা কমে যায়। অন্যদিকে চলতি বছর ডালের দাম অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় বড়ি দেওয়ার পরিমাণ অনেকটা কমেছে বলে একাধিক গায়ের বধুরা জানিয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com