মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৫৪ পূর্বাহ্ন

কুয়েট ছেড়েছেন ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

এফএনএস: ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতার কারণে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী হল ছেড়ে গেছেন। বাকি ১৫ শতাংশ নিরুপায় হয়ে আতঙ্কের মধ্যেও হলে রয়েছেন। এদিকে উপাচার্যের বাসভবনে গতকাল সোমবার পর্যন্ত ঝুলছিল তালা। গবেষণা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকদের কক্ষ ও গবেষণাকক্ষের তালা গত রোববার সন্ধ্যায় খুলে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ রয়েছে প্রশাসনিক কার্যক্রম। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। শিক্ষার্থীরা জানান, ১৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা অনিরাপদ ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার জন্য দৃশ্যমান কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীরা হল ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা জানান, কুয়েটের সকল শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে ভিসিকে বর্জন করা হয়েছে এবং অপসারণের জোর দাবি জানানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের অনতিবিলম্বে কঠোর শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানানো হচ্ছে। অভিভাবকহীন ও অনিরাপদ কুয়েট ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পুনরায় চলমান করার জন্য অতি দ্রুত নতুন ভিসি নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা গত রোববার প্রধান উপদেষ্টার বরাবর দেওয়া চিঠিতে কুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর অপসারণের জন্য আবেদন জানিয়ে লেখেন, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৩তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্মারক নং— খুপ্রবি/২৫৯/৬০ তাং—১১/০৮/২০২৪ ইং মোতাবেক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটের শিক্ষার্থীরা ছাত্রদলের ফরম বিতরণের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ মিছিলের ডাক দেয়। উক্ত মিছিলে কুয়েট ছাত্রদলের কর্মীরা হঠাৎ করে এসে ধাক্কা দিয়ে শিক্ষার্থীদের হুমকি দেয়। সেই প্রেক্ষিতে কুয়েট ছাত্রদল এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালায়। হামলায় কুয়েটের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয় এবং চার ঘণ্টা যাবৎ এই হামলা চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের কোনও ধরনের নিরাপত্তা দিতে পারেনি। এই মর্মে, আমরা সকল শিক্ষার্থী ভিসির পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি উত্থাপন করি। আলটিমেটাম দেওয়ার পরেও আমাদের দাবি পূরণ না হওয়ার কারণে ভিসির অপসারণের দাবি জানানো হচ্ছে। ভিসির অপসারণ দাবি করার যৌক্তিক কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে— রাজনীতি নিষিদ্ধ কুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনীতি অনুপ্রবেশের অপচেষ্টার সঙ্গে জড়িত, ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদলের সন্ত্রাসী কর্তৃক আক্রমণ থেকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়া, প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হওয়ার পরও ব্যর্থতার দায় নিতে অস্বীকার করা, যথোপযুক্ত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও চিহ্নিত কুয়েট ছাত্রদল এবং স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন কর্তৃক সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকে স্বীকার না করা, ভিসির কাছে উক্ত হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে প্রদানকৃত ৬ দফা দাবি পূরণের পর্যাপ্ত সময় দেওয়ার পরও ৬ দফা দাবি সম্পূর্ণরূপে মেনে না নেওয়া। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বরাবর দাবি—সংবলিত চিঠি দেওয়া হয়েছে। দাবিগুলো ইতিবাচক দৃষ্টিতে নিয়েছেন তিনি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন তার এপিএস। আমরা এখন যৌক্তিক সময় পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে চাই। এরপর আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় জানাবো। উল্লেখ্য, কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি ঘিরে ১৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া—পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অর্ধশত শিক্ষার্থী। তাদের অধিকাংশের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। আহতদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুয়েট মেডিকেল সেন্টারসহ আশপাশের বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ৫ জনকে আটক করা হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ছাত্ররা সংবাদ সম্মেলন করে উপাচার্যের পদত্যাগসহ ৫ দফা দাবি জানায়। পাশাপাশি দাবি না মানায় ১৯ ফেব্রুয়ারি বেলা দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক ভবনগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এদিকে ১৮ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টা থেকে কুয়েট উপাচার্যকে মেডিকেল সেন্টারে অবরুদ্ধ করা হয়। তিনি ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকাল সোয়া ৫টার দিকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পান। অবরুদ্ধ থাকা অবস্থাতেই তিনি ১৯ ফেব্রুয়ারির জরুরি সিন্ডিকেট সভায় অনলাইনে উপস্থিত থেকে সভাপতিত্ব করেন। শিক্ষার্থীরা ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার দিকে ভিসির বাসভবনের প্রধান ফটকে তালা দেয়া হয়, যা এখনও তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। এদিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। কুয়েটের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আগামী ১ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতরের ছুটি নির্ধারিত। এ হিসেবে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম ৭ এপ্রিল শুরুর দিন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত। এ অবস্থায় দীর্ঘ বন্ধের কবলে নিরাপত্তাহীনতার কারণে শিক্ষার্থীরা হল ও ক্যাম্পাস ছাড়তে শুরু করেন।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com