শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২০ পূর্বাহ্ন

কৃষকের মুখে হাসি, কপালে চিন্তার ভাঁজ

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ৬ মে, ২০২৪

এফএনএস: কড়া রোদ অগ্রাহ্য করে মাঠে ছুটছেন কৃষক। হাতে কাস্তে, মুখে অমলিন হাসি। ভোর থেকে সন্ধ্যা অবধি ঘেমে-নেয়ে ধান কাটছেন তারা। ভীষণ গরমের মধ্যেই আগেভাগে ধান কাটার ধুম পড়েছে কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে। যেন নতুন ধানের নেশায় মাতোয়ারা সবাই। এতটাই ব্যস্ত যে একটু কথা বলার সময় পর্যন্ত নেই। আবহাওয়া ভালো থাকায় একরে শত মণ ধান হয়েছে। তবে হঠাৎ দাম কমে যাওয়ায় তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। এদিকে সূর্যের প্রখরতা যেন আগুনের হলকা। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে গায়ে ফোসকা পড়ার অবস্থা। এই আগুনে সূর্যের নিচে মাঠভরা বোরোধান। ৮০ ভাগ পাকলেই ধান কাটার তাগিদ ছিল কৃষি বিভাগের। এই কড়া রোদ উপেক্ষা করে সেই কাজটিও করে দেখিয়েছেন হাওরের কৃষক। গরমে কষ্ট হলেও আর কিছু দিন এমন রোদও চান তারা, যেন শতভাগ ধান গোলায় উঠাতে পারে। সোলেমান উদ্দিন (৬১) বাড়ির সামনে খড় শুকাচ্ছিলেন। জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার গুণধর ইউনিয়নের খয়রত গ্রামের এই কৃষকের চাষবাস বাড়ির সামনের বড় হাওরে। এ বছর কেমন ধান হলো? প্রশ্ন শুনেই কুঁচকানো মুখের রেখায় রেখায় ফুটে ওঠে হাসি। বলেন, ‘চিন্তাও করি নাই এমুন ধান অইব।’ তিনি দেড় একর জমিতে বোরোধান চাষ করেছিলেন। কয়েক ধরনের ব্রি ধান মাঠে আছে। এগুলো এখন কাটা প্রায় শেষের দিকে। সবমিলিয়ে দেড়শ মণ ধান হবে বলেও জানালেন তিনি। নিকলীর মজলিসপুরের কৃষক ইমান আলী (৫০)। ধান কাটার ফাঁকে রোদে দাঁড়িয়েই ঢক ঢক করে ছোট কলসি থেকে পানি পান করছিলেন। তিনিও বাম্পার ফলনের কথা বললেন। তবে ধানের দাম কিছুটা কমে গেছে বলে অভিযোগ তার। মোটা ধান ৮৫০ টাকা ও চিকন ধান ৯৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন তিনি। কয়েকদিন আগেও যা ছিল হাজারের ওপরে। তবু অভাবনীয় ফলন হওয়ায় খুশি এই কৃষক। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর জেলার হাওর উপজেলা ইটনার কয়রাকান্দা, কুনিয়ারকান্দা এবং করিমগঞ্জের সাগুলি, চংনোয়াগাঁও হাওরে গিয়ে দেখা গেছে, শ্রমিকরা ধান কাটার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অসহ্য গরম অগ্রাহ্য করে চলছে ধান কাটা। কোথাও আবার হারভেস্টার মেশিন দিয়ে কাটা হচ্ছে ধান। এগুলো আবার শুকানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ধানের খলায়। কয়রাকান্দা হাওরে ২০ জনের ধানকাটা শ্রমিকের একটি দল ধান কাটছিলেন। তাদের একজন কাফেল মিয়া (৩৫)। তিনি জানালেন, ১৬ কাঠা জমির ধান কাটলে তারা পাবেন ২০ মণ। মৌসুম শেষে এবার প্রত্যেকে ২৫ থেকে ৩০ মণ ধান বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন। তিনিও জানালেন, এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকরা জানান, ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যায় হাওরের বোরো ধান তলিয়ে গিয়েছিল। সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে আগেভাগে ধান কাটা হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব ধান কেটে ঘরে তুলতে চান তারা। এ কারণে হাওরে অন্যবারের চেয়ে ব্যস্ততা বেশি। ধান কাটার পাশাপাশি ধানের কেনাবেচাও শুরু হয়ে গেছে। ধান আসছে করিমগঞ্জের চামড়াঘাটের আড়তগুলোতে। সেখানে ইটনার ছিলনি গ্রামের আবদুল হক বলেন, ‘ধারকর্জ করে এবার চার একর জমিতে বোরো চাষ করেছেন। ভালো ধান হয়েছে। তবে প্রতিদিন দাম একটু করে কমছে। ঋণের টাকা পরিশোধ ও শ্রমিক খরচ মেটাতে শুরুতে কিছু ধান বেচতে হয় আমাদের। কিন্তু আড়ত মালিকরা এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দাম কম দিচ্ছেন। মোটা ধান বেচতে হচ্ছে ৮৫০ টাকা মণ দরে। অথচ এক মণ ধান চাষে খরচ হয়েছে এক হাজার টাকারও বেশি।’ এদিকে সেখানকার আড়তদার জামাল আহমেদ বলেন, ‘চামরাঘাট আড়তে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার ধান কেনাবেচা হচ্ছে। গতবারের চেয়ে এবার ধানের দাম বেশি পাচ্ছে কৃষক। মোটা ৮৫০ ও চিকন ধান ৯৫০ টাকা মণ দরে কেনা হচ্ছে।’ জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, কিশোরগঞ্জে এ মৌসুমে এক লাখ ৬৭ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে কেবল হাওরেই আবাদ হয়েছে এক লাখ তিন হাজার ৬২০ হেক্টর। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবদুস সাত্তার বললেন, এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। একরে শত মণ ফলনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো দ্রুত কাটা হচ্ছে। দিনরাত পরিশ্রম করে কৃষকরা ধান ঘরে তুলছেন। কম্বাইন্ড হারভেস্টারও নামানো হয়েছে। আবহাওয়া এখনও কৃষকের অনুকূলে আছে বলেই তারা রোদে কষ্ট হলেও আনন্দের সঙ্গে ধান কাটতে পারছেন। প্রায় ৮০ ভাগ ধান কাটা শেষ, আবহাওয়া আর কয়েকটা দিন ভালো থাকলে শতভাগ ধান কাটা শেষ হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com