এফএনএস: বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বর্তমান সরকারের নানামুখী উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা। তারা বলছেন, এসব পদক্ষেপের কারণে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন। গতকাল সোমবার চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (কেইপিজেড) ভিজিট করার পর এসব কথা বলেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগ সম্মেলনে উপলক্ষে ৪০টি দেশের ৫০০ এর বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারী বাংলাদেশ সফরে করেছেন। তাদের মধ্যে বেজার উদ্যোগে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কেইপিজেড পরিদর্শনে গেছেন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, জাপান, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডসের প্রায় ৬০ জন বিনিয়োগকারী। এ সময় তারা কেইপিজেডে বিভিন্ন কারখানা সরেজমিন ঘুরে দেখেন। বিনিয়োগ বিষয়ে নানা খোঁজ—খবর নেন। পরিদর্শন শেষে তাদের অনেকেই বলেন, বাংলাদেশের বিগত সরকার বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে অনেক আলোচনা করেছিল। কিন্তু সেই তুলনায় বিনিয়োগ আসেনি। তবে বর্তমান সরকার বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে যেমনি কথা বলছে, তেমনি নানা উদ্যোগও নিচ্ছে। ফলে এখন বিনিয়োগ আসার ভালো সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। পরিদর্শন শেষে বিনিয়োগকারীদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন কেইপিজেড ও ইয়ংওয়ান কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাং। অন্য ইজেডের (ইকনোমিক জোন) তুলনায় কেইপিজেডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাড়তি কী সুবিধা রয়েছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে জমি ও অন্যান্য অবকাঠামো প্রস্তুত। বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে কোনো ঝামেলা নেই। ব্যবসায়িক সনদসহ যাবতীয় বিনিয়োগ সেবা পাওয়া যাবে দ্রুত। শ্রমিকদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল রয়েছে। দক্ষ কর্মী তৈরি করতে স্থাপন করা হয়েছে টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট। এভাবে বিনিয়োগবান্ধব অনেক সুযোগ—সুবিধা রয়েছে এ ইজেডে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সময় ব্যবসায়িক সনদ নেওয়ার ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা অনেক কমেছে। বিগত সরকারের বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে অনেক কথা বললেও বাস্তবিক পক্ষে বিনিয়োগ টানতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ ছিল কম। এখনকার সরকার সরাসরি নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। খুব তাড়াতাড়ি ব্যবসায়িক সনদসহ সব সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। এতে বিদেশি বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা বাড়ছে। বিনিয়োগকারী চীনের প্রতিষ্ঠান মেগা রিচ ইন্ডাস্ট্রিয়াল লিমিটেডের ম্যানেজিং পার্টনার কেভিন উ বলেন, নতুন অন্তর্বতীর্ সরকার বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করাসহ কিছু উদ্যোগ নিচ্ছে। এগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে বিনিয়োগ আসবে। চায়না বিনিয়োগকারীদের অনেক বিনিয়োগ আছে বাংলাদেশে। আরও অনেকেই চান বিনিয়োগ করতে। তবে এই সামিটে কী সুবিধা ঘোষণা করবে বাংলাদেশ সেটিও দেখার অপেক্ষায় বিদেশ বিনিয়োগকারীরা। অস্ট্রেলিয়ার শামিম গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. শামিম বলেন, আমরা প্যাকেজিং জাতীয় বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করি। বাংলাদেশে কোনো ইজেডে এসব পণ্য উৎপাদনের কারখানা করা যায় কি না তা পরিদর্শন করছি। ভারতের হায়দরাবাদের বিনিয়োগকারী কাপিতি ওভারসিজের ব্যবস্থা পরিচালক সুরেস কাপিতি জানান, বাংলাদেশে কমপ্লায়েন্ট ব্যাটারি রিসাইক্লিং প্ল্যান্টের জন্য অংশীদার ব্যবসায়ী খুঁজতে এই শীর্ষ বিনিয়োগ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, আমাদের ব্যবহৃত ব্যাটারির সাথে সরাসরি ডাম্পিং করা সবচেয়ে খারাপ কাজ। নন—কম্পায়েন্ট রিসাইক্লিংও বিপজ্জনক। ভারত এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে এবং কঠোর নিয়মের সাথে নিরাপদ পুনর্ব্যবহারের প্রযুক্তি সমস্যা সমাধানে সহায়তা করেছে। ন্যাদারল্যান্ডসের এক বিনিয়োগ জানিয়েছেন তার কৃষি খাতে ব্যবসা রয়েছে। উপযুক্ত ব্যবসায়িক পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত হলে তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়ে আগ্রহী। কেইপিজেড কতৃর্পক্ষ জানিয়েছে, এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৭০ লাখ বর্গফুটের বেশি আয়তনের ৪৮টি সবুজ শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর পাশাপাশি গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য ১০টি ডিজাইন ডেভেলপমেন্ট সেন্টার এখানে স্থাপন করা হয়েছে। দেশের আইসিটি খাতকে এগিয়ে নিতে ১০০ একর আয়তনের একটি আইটি পার্কও নির্মাণাধীন রয়েছে। কেইপিজেড সূত্রে জানা গেছে, এটি দক্ষিণ কোরিয়ান বেসরকারি শিল্প অঞ্চল। এখানে ২২টির মতো বিভিন্ন কারখানা রয়েছে। যেখানে শতভাগ রপ্তানিমুখি পণ্য উৎপাদন হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ইয়াং ওয়ান দ্বারা পরিচালিত। এটি বাংলাদেশের টেক্সটাইল এবং পোশাক খাতে প্রথম এবং বৃহত্তম বিদেশী বিনিয়োগ। কেইপিজেডের বিভিন্ন কারখানায় ৩০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, যাদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ নারী কর্মী। এই ইজেডে ইতোমধ্যে ৭০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করা হয়েছে। বিশেষ করে টেক্সটাইল, গার্মেন্টস, গার্মেন্টস এক্সেসরিজ পণ্য, জুতা এবং আইটি পরিষেবা খাতে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কর্ণফুলী টানেল হয়ে ১৫ মিনিটের দূরত্বে আনোয়ারায় কর্ণফুলী নদীর তীরে অবস্থিত। দুই হাজার ৪৯২ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই পরিবেশ—বান্ধব এলাকা দেশের একমাত্র বেসরকারি মালিকানাধীন রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল। জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধির জন্য কেইপিজেড বালুকাময় এই এলাকাকে একটি সবুজ শিল্প স্থানে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এখানে ৫২ শতাংশ স্থান সবুজ ও উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য ৩২টি জলাশয় তৈরি করা হয়েছে। এ জোনে নিরবচ্ছিন্ন পরিষেবা ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ জ্বালানী ব্যবস্থার জন্য ৪০ মেগাওয়াটের রুফটপ সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প চলমান রয়েছে, যা ৬০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে। এফ্লুয়েন্ট পরিশোধনের জন্য এই জোনে সিইটিপি নির্মাণ করা হয়। কর্মীদের জন্য জোনটিতে ক্যান্টিন, স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে একটি বিশ^মানের ফ্যাশন এবং টেক্সটাইল কলেজ। বেজার উদ্যোগে যাওয়া পরিদর্শন প্রতিনিধি দলে বেজার কর্মকর্তারা ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টার উপ—প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব প্রমুখ ছিলেন।