দৃষ্টিপাত রিপোর্ট \ জীবন রক্ষায় ঔষধের বিকল্প নেই। ঔষধই সর্বেসর্বা। বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক বাস্তবতা এবং প্রেক্ষাপটে দেশ ঔষধ শিল্পে অনেকদুর এগিয়েছে কিন্তু বাস্তবতা হলো দফায় দফায় লাগামহীন গতিতে বেড়েই চলেছে ঔষধের মূল্য। নিত্য দিন ঔষধ নির্ভর রোগী ও রোগী স্বজনরা এমনিতেই প্রতিনিয়ত ঔষধের টাকা যোগাড় করতে হিমসিম খাচ্ছে তার উপরে ক্রমবর্ধমান গতিতে ঔষধের মূল্যবৃদ্ধিতে চোখে অন্ধকার দেখছে। দেশের সরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসালয় গুলোতে বিনামূল্যে ঔষধ দিলেও তা সব রোগের নয় এবং ক্ষেত্রবিশেষ পর্যাপ্ত নয়। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করতে আসা আশরাফ আলী দীর্ঘদিন যাবৎ প্যারালাইসিস জনিত রোগে আক্রান্ত তিনি জানান, ঔষধের মূল্য বৃদ্ধির কারণে তার চিকিৎসা বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে বিধায় সরকারী ঔষধ প্রাপ্তির লক্ষ্যে হাসপাতালে এসেছেন। খোজ নিয়ে জানা গেছে জীবন রক্ষাকারী সহ সব ধরনের ঔষধের মূল্য ক্রমান্বয়ে বিনা নোটিশে এমনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে যে রোগীদের জন্য নাভিঃশ্বাসের কারণে পরিণত হয়েছে। ঔষধের মূল্যবৃদ্ধিতে চিকিৎসা ব্যয়ও দ্বিগুণ পরিমান ছাড়িয়েছে ঔষধের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি অপরাপর চিকিৎসা সরঞ্জামাদির মূল্য সমান তালে বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থপেটিকস সামগ্রী হাড়ভাঙ্গা, রোগ নির্ণয়, প্যাথলোজিক্যাল টেস্ট, বেসরকারী হাসপাতাল চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা সর্বত্র ছড়িয়েছে ঝাজ অপেক্ষাকৃত কম আয়ের লোকজনের জন্য ঔষধ সংগ্রহ এবং উন্নতমানের চিকিৎসা গ্রহণ কঠিন হতে কঠিনতর হয়ে পড়েছে। খোজ নিয়ে জানা গেছে এক শ্রেণির ঔষধ কোম্পানী এবং তাদের প্রতিনিধিরা ফার্মেসী মালিকদেরকে বিনা নোটিশে মোবাইলে খুদে বার্তা বা হোয়াটসঅ্যাপে ঔষধের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি জানান দিচ্ছে। দেশে ঔষধ প্রশাসন বিদ্যমান ঔষধের মূল্য বৃদ্ধি বা হ্রাসের ক্ষেত্রে ঔষধ প্রশাসনের সিদ্ধান্তই শেষ কথা কিন্তু বর্তমান সময়গুলোতে ঔষধ প্রস্তুতকারী কোম্পানী গুলোই মূল্য নির্ধারণ করছে যার প্রেক্ষাপটে অধিক অর্থ ব্যয় করে রোগীদের ঔষধ ক্রয় করতে হচ্ছে। খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে গত বছরের ৩০ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ঔষধের মূল্য নির্ধারণ কমিটির সভায় ৫৩টি ঔষধের পূর্বনির্ধারিত মূল্য অনুমোদন করা হয়। কিন্তু রাজধানী ঢাকা সহ দেশের সর্বত্র কোম্পানীগুলোর একাংশ ঔষধের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। সাতক্ষীরার বাস্তবতায় বেশি মূল্যে ঔষধ বিক্রয় হচ্ছে। এই জেলায় ঔষধ ব্যবস্থাপনায় মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি এক শ্রেণির ফার্মেসী মালিকরা নিজেরাই রেজিষ্ট্রাট চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ব্যতিত বিভিন্ন ধরনের রোগের ঔষধ বিক্রি করছে এক্ষেত্রে বেশী মূল্যসহ ডাক্তারীও করছে এমন দৃশ্য জেলা শহর হতে উপজেলা ভিত্তিক ফার্মেসী গুলোতে ঔষধের অনাকাক্সিক্ষত এবং লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধির কারণে এক শ্রেণির রোগী পরিবার বেশী মূল্যে ঔষধ ক্রয় করতে যেয়ে দারিদ্রসীমার নিচে পৌছাচ্ছে যে কারণে ঔষধ প্রয়োজন মেটাতে অনেকে আর্থিক কষ্টের শেষ প্রান্তে পৌছেছে। সব ধরনের ঔষধ এর মূল্য কেবল বৃদ্ধি পেয়েছে না নয় ফার্মেসী ব্যবসায়ীরা কোন কোন সময় ঔষধের প্যাকেটের মূল্যে যে মূল্য লেখা তা নিয়ে। জ্বরের ফাস্ট সিরাপ ৬০ মিলি ২০ টাকা হতে বাড়িয়ে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এভাবে চোখের আমেক্স ড্রপ ১১৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অ্যান্টিবায়োজিক কেমিক্লাভি প্রতি পিস ২৫০ এমজি ট্যাবলেট ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা, ৫০০ এমজি ট্যাবলেট ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উচ্চ রক্তচাপের ওরবাপিন ৫/৪০ ১৬ টাকা থকে ১৯ টাকা প্রতি পিস ন্যাপ্রোপ্লাস ৫০০ এমজি ৯ টাকা থেকে ১২ টাকা, ব্যথা উপশমের নিউগালিন ৭৫ ট্যাবলেটে প্রতি পিস ১৪ টাকা হতে ১৮ টাকা ৪৫ পয়সা করা হয়েছে মাথা ঠান্ডা রাখার ঔষধ লিমবিক্স ৫ টাকা হতে ৮ টাকা ঘুমের ট্যাবলেট টেনিল প্রতি পিস ৩ টাকা থেকে ৭ টাকা, ক্যালসিয়াম কোরালেক্স প্রতিপিস ১০ টাকা থেকে ১১ টাকা, কোষ্ঠকাঠিন্য চিকিৎসার ১০০ মিলির এভোল্যাক সিরাজ ১৪০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা করা হয়েছে। নাকের আফরিন ড্রপ ৪৫ টাকা হতে ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। শিশুদের কাশির ১০০ মিলি টোফেন সিরাপ ৬৫ টাকা হতে ৭৫ টাকায় করা হয়েছে। অ্যাসপিরিন ৭৫ মিলি এক পাতার ১০ পিসের ৫ টাকা হতে ৮ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। প্যারাসিটামল ৬৬৫ মিলি গ্রাম ১০ পিস ঔষধের মূল্য ১৫ টাকা হতে ২০ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। অ্যাসডেলাডিপাইন অ্যাটেনোলোল ৫ মিলিগ্রামের মূল্য ৬ টাকা হতে ৮ টাকা, ব্রোমাজিপাম ৩ মিলিগ্রামের মূল্য ৫ টাকা থেকে ৭ টাকায় করা হয়েছে। মন্টিলুকাস্ট প্রতি পিস ১৬ টাকা হতে ১৭ টাকা। অ্যাজিথ্রো মাইসিন প্রতি পিস ৩৫ টাকা হতে ৪০ টাকা, ভিটামিন বি ১ বি ৬ ও বি ১২ এর মূল্য ৭টাকা হতে ১০ টাকা করা হয়েছে। ইসমিপ্রাজল প্রতি পিসের মূল্য ৫ টাকা হতে ৭ টাকা, লোসারটান পটাশিয়াম ৫০ মিলিগ্রামের মূল্য ৮ টাকা হতে ১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঔষধ বাজারে মূল্য বৃদ্ধির কষাঘাত কেবল কম আয়ের মানুষের জন্য নংয় মধ্যবিত্তদেরকে কাহিল করেছে। কেবল ঔষধের মূল্যই একজন রোগীর ৬৪ ভাগ খরচ হচ্ছে এমনটি গবেষণায় দেখা গেছে। সাতক্ষীরার প্রেক্ষিতে ফার্মেসী মালিক সমিতি একাধিক সংগঠন মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারছে এমনটি দেখা যাচ্ছে না। সমিতি গরীব, দুঃস্থ রোগীদের অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে ঔষধ ক্রয়ের বিষয়ে ঔষধ কোম্পানী সহ তাদের প্রতিনিধিদের সাথে বসতে পারে। দরকসাকসি করতে পারেন আর এমনটি প্রত্যাশা করেন ঔষধ ক্রেতারা। ঔষধের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি একজন রোগীকে চিকিৎসকের ফি, প্যাথলজি টেস্ট সহ অন্যান্য খরচ করতে হয় কিন্তু পরিস্থিতি এমন সকলেই যেন ব্যবসায় নেমেছে জীবন বিপন্ন অসুস্থ রোগীর প্রতি সেবা বা সহযোগিতা কেবলই অন্ত:সার শুন্য।