কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি ॥ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরই কেশবপুরে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের দেখা মিলছে না। বিশেষ করে পৌরসভা থেকে ইউনিয়ন পরিষদের অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি আত্মগোপনে চলে গেছেন। এতে স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সেবা-পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জনগণ। ব্যহত হচ্ছে নাগরিক সেবা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগপন্থী চেয়ারম্যানদের অনেকেই ক্ষমতার পালাবদলের কারণে নিজেদের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের রোষানল থেকে বাঁচতে ইউনিয়ন পরিষদে আসছেন না। ফলে পরিষদের সেবাগ্রহীতারা বিভিন্ন সনদের আবেদন করেও চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর না থাকায় প্রয়োজনীয় সনদ পাচ্ছেন না। এতে জরুরি প্রয়োজনীয় অফিসিয়াল কাজ করতে পারছেন না ভূক্তভোগীরা। স্থানীয়রা জানান, নিজেদের বিভিন্ন অপকর্ম ঢাকতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যানরা অফিসে না এসে গা ঢাকা দিয়েছেন। স্বাক্ষর নিতে চেয়ারম্যানের কার্যালয়, বাড়ি কিংবা মোবাইল ফোনে খোঁজ করে পাওয়া যাচ্ছে না। মৃত্যুসনদ, ওয়ারিশ সার্টিফিকেট, নাগরিক সনদপত্র, ট্রেড লাইসেন্সসহ বিভিন্ন সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। দায়িত্ব পালনে ভয় পেলে চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে প্যানেল চেয়ারম্যানদের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়ার দাবি জানান তারা। তবে আত্মগোপনে থাকা জনপ্রতিনিধিদের স্বজনরা দাবি করছেন, নিরাপত্তাহীনতার কারণেই অনেকে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে যেমন সাহস পাচ্ছে না তেমনি কর্মস্থলেও যেতে পারছেন না। এদিকে, এক সপ্তাহ পার হলেও পৌর মেয়র কার্যালয়ে না আসায় ভোগান্তিতে পড়েছেন পৌরসভার বাসিন্দারা। পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম কেশবপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি। সরেজমিন পৌর ভবনে গিয়ে দেখা যায়, গত ৪ আগস্ট আগুনে পুড়ে রয়েছে পৌরসভার সবকটি কক্ষ। গুরুত্বপূর্ন ডকুমেন্ট পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার একজন কর্মচারী জানান, ৫ আগস্টের পর থেকে মেয়র পৌরসভায় আসছেন না। প্যানেল মেয়রেরও দেখা মিলছে না। কিছু কিছু সেবা আছে যা পৌর মেয়র ছাড়া দেওয়া সম্ভব নয়। এ সময় সেবা নিতে আসা ফারুক হোসেন বলেন, ‘জমির ওয়ারিশনামা দরকার। কয়েকদিন ধরে পৌরসভায় ঘুরছি। পৌর মেয়র নেই। এ অবস্থায় আমার সমস্যার সমাধান হচ্ছে না’। আরেক সেবাপ্রার্থী কানিজ ফাতেমা বলেন, ‘ছেলের জন্মসনদ সংশোধন করার জন্য কয়েকদিন ধরে ঘুরছি। কিন্তু সমাধান পাচ্ছি না’। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌর শহরের একাধিক ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, কেশবপুরে গত পৌরসভার নির্বাচন যেভাবে হয়েছে তা ন্যক্কারজনক। পৌরসভা সৃষ্টির পর এমন নির্বাচন দেখেননি তারা। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে দেয়নি। জোর খাটিয়ে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। এখন সরকার পতনের পরপরই পালিয়েছেন’। সাবেক এমপি শাহীন চাকলাদারের আমলে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি করে চাদাবাজি, হুমকি, জবর দখল ও বিএনপি সমর্থিত ব্যক্তিদের মারপিট করে গুরুতর আহত করা হয়। ভয়ে অনেকে মামলা করার সাহস পাইনি। এবিষয়ে একাধিক জনপ্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে দ্রুত নিজ নিজ দপ্তরে মেয়র-চেয়ারম্যানদের তাদের কার্যালয়ে যোগদানের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।