কেশবপুর প্রতিনিধি ॥ কেশবপুরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধান কাটা মৌসুমে ছ্রমিক সংকটের মধ্যে ধান সংগ্রহ শুরু করেছে কৃষক। ২ হাজার টাকা দিয়ও একটি ছ্রমিক মিলছে না। ১০ হাজার টাকা চুক্তিতে ধান সংগ্রহ করেছে তারা। এদিকে ঘেরের জলাবদ্ধতায় ১১ হাজার মেট্রিকটন ধান উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হয়েছে কৃষক। কেশবপুর উপজেলার ১ টি পৌর সভা ও ১১টি ইউনিয়নে চলতি বোরো মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকেরা। উপজেলায় কৃষকরা সোনালী ধান সংগ্রহ শুরু করেছে। প্রচন্ড তাপদাহের মধ্যে কৃষক ব্যাস্ত সময়ে পার করছেন। ছ্রমিক সংকটের ফলে একজন ছ্রমিক ২ হাজার টাকা দিয়ও পাওয়া যাচ্ছে না। বিঘা প্রতি ১০ হাজার টাকায় চুক্তিতে ধান সংগ্রহ করেছে। তবে ঘেরের পানির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ১ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ না হওয়ায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ হাজার ৭২৫ মেট্রিকটন ধান কম উৎপাদন হবে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। যার বাজার মূল্য ২ কোটি ৭৮ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। সারা দেশের মধ্যে ধান-চালসহ বিভিন্ন খাদ্যশস্য উৎপাদনের শ্রেষ্ঠ উপজেলা হিসেবে কেশবপুরের খ্যাতি দীর্ঘদিনের। বোরোধান মৌসুমে ধানের চাষ হয়েছে প্রচুর। ধান খেতের মাঠগুলো এখন সোনালী রঙের আভায় এক অপরূপ শোভা ছড়াচ্ছে। বোরো ধানের সোনালী শীষ দোল খাচ্ছে বাতাসে। সেচ, আগাছা পরিষ্কারসহ সকল কাজ সম্পন্ন করে এখন ধান ঘরে তোলার স্বপ্নে বিভোর এ উপজেলার হাজারো কৃষক। পুরো উপজেলায় এবার হাইব্রিড ছাড়াও উফশী ব্রি-ধান- ২৮, ব্রি-ধান- ৫০, ব্রি-ধান- ৬৩, ব্রি-ধান- ৭৪, ব্রি-ধান- ৮৮ ও ব্রি-ধান- ১০০ জাতের ধানের আবাদ হয়েছে সবচেয়ে বেশী। কৃষি অফিস দৈনিক দৃষ্টিপাতকে জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় ১৪ হাজার ৭‘শ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ধানের উৎপাদন ধরা হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩০৭ মেট্রিকটন। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলেও ঘেরের সৃষ্ট জলাবদ্ধার কারণে বিলের অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন সম্ভব না হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৪৩০ হেক্টর কম জমিতে ধানের চাষ হয়। এরমধ্যে হাইব্রিড- ৪ হাজার ১৭০ হেক্টর ও উফশী- ৮ হাজার ৯০০ হেক্টর জমি। ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় এবার ১০ হাজার ৭২৫ মেট্রিকটন ধান কম উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য ২ কোটি ৭৮ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। উপজেলার ব্যাসডাঙ্গা, মাগুরাডাঙ্গা, বাগডাঙ্গা, পাঁজিয়া, কালিচরণপুর, বিলখুকশিয়া, কাটাখালি, মনোহরনগর, নারায়নপুর ও হদ বিল এলাকার হাজারো কৃষক এবছর বোরো ধানের আবাদ করতে পারেনি। ব্যাসডাঙ্গা গ্রামের কৃষক রেজাউল ইসলাম, মাগুরাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ জানান, তাদের গরালিয়া বিলের জমি ঘের মালিক সেলিমুজ্জামান আসাদের কাছে লিজ দেয়া হয়েছে। ঘের মালিক মাছ চাষের জন্যে প্রতি শুষ্ক মৌসুমে ভূ-গর্ভস্থ পানি তুলে ঘের ভরাট করে। আবার ইরি বোরো মৌসুমে স্যালো মেশিন দিয়ে ঘেরের পানি নিষ্কাশন করলে কৃষকরা ধান আবাদ করে। এ বছর বোরো ধানের মৌসুমে জলাবদ্ধতার কারণে বিলের ১ হাজার বিঘা জমিতে এবার বোরো আবাদ হয়নি। উপজেলা কৃষি অফিসার মাহমুদা আক্তার দৈনিক দৃষ্টিপাতকে বলেন, পাউবো নদী খাল খনন করলেও শ্রীনদীর নাব্যতা না থাকায় তা আবারও ভরাট হয়ে গেছে। যে কারণে ঘেরের পানি নিষ্কাশন সম্ভব না হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৪৩০ হেক্টর কম জমিতে ধানের আবাদ হয়। কৃষকের চাহিদামত সার, বীজের কোনো ঘাটতি ছিল না, আবহাওয়াও ছিল অনুকুলে। যার কারণে বোরোধান মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতেমধ্যে উপজেলার অনেক এলাকায় ধান কাটা শুরু হয়েছে। ৮০ ভাগ জমির ধরনের গোড়া কেটে ফেলে রাখা হয়েছে। প্রচান্ড তাপদাহের মধ্যে ধান সংগ্রহে খুব ব্যাস্ত সময়ে পার করছেন কৃষক । ইতিমধ্যে ধান সংগ্রহে ছ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। প্রচন্ড তাপদাহের মধ্যে কৃষকের ২ হাজার টাকা দিয়েও একটি লেভার মিলছে না। এক বিঘা জমির ধান কেটে বাড়ি আনতে ১০ হাজার টাকা চুক্তি করে দিয়েছে বলে দেউলী গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান দৈনিক দৃষ্টিপাতকে জানান। সবকিছু ঠিক থাকলে খুব অল্প দিনের মধ্যে উপজেলার বোরো ধান মৌসুমে ধান সংগ্রহ শেষ হবে বলে আশা করছেন উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর