মোঃ মাসুদ রায়হান \ যশোরের কেশবপুরে মতিউর রহমান (২৮) নামের এক শিক্ষিত যুবক চলতি মৌসুমে লাউ চাষ করে সাফল্যে হওয়ার পাশাপাশি এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। তিনি ২০১৪ সালে যশোর এম এম কলেজ থেকে মাস্টার্স পাশ করার পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও চাকরি না পেয়ে কৃষি কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এরপর পরের জমি বর্গা নিয়ে লাউ চাষ শুরু করে সে। তার সঠিক পরিচর্যায় ক্ষেতে প্রচুর পরিমাণ লাউ ধরা দেখে এলাকাবাসীর অনেকেই ওই শিক্ষিত যুবককে সাধুবাদ ও লাউ চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। উপজেলার পাঁচপোতা গ্রামের মোঃ শহিদুল ইসলাম মধু মোলার ছেলে মতিউর রহমান সুজন মাস্টার্স পাশ করে দীর্ঘদিন ধরেও চাকরি না পেয়ে নিজেকে স্বাবলম্বী করার আশায় পরের এক বিঘা জমি বছরে ৩০ হাজার টাকা বর্গা নিয়ে উন্নত মানের লাউ চাষ শুরু করেন। বীজ রোপণের ৪০ দিন পরেই লাউ ধরতে শুরু করে। বাম্পার ফলন হওয়ায় প্রতিদিন ১৫০ শত থেকে ২০০ শত লাউ তুলে আঠারোমাইল বাজারে পাইকারি প্রতিটি লাউ ২৮ থেকে ৩০ দরে বিক্রি করেন। তাতে করে প্রতিমাসে সব খরচ বাদ দিয়ে ৩০ থেকে ৩৫’হাজার টাকা আয় হয়। এখনো জমিতে যে পরিমাণ লাউ রয়েছে তাতে আরো প্রায় ২’লক্ষ টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করেছেন তিনি। সরেজমিনে বুধবার বিকেলে উপজেলার পাঁচপোতা গ্রামে লাউ ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, সবুজের সমারোহ ও মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। শিক্ষিত মতিউর রহমান এবং দিনমজুর আজহারুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম মনোযোগ সহকারে ক্ষেত পরিচর্যা করছেন। ভিতরে প্রবেশ করে দেখি গাছে শতশত লাউ ঝুলে আছে। ওই সময় দিনমজুর আজহারুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম এর সাথে কথা হলে তারা বলেন, আমরা প্রতিদিন এই ক্ষেতে কাজ করে থাকি। প্রতিমাসে ১২’হাজার টাকা করে আমাদের মজুরি দেয়। গাছে প্রচুর পরিমাণ লাউ দেখে খুবই ভালো লাগে। এছাড়াও এলাকার অনেকেই ক্ষেত দেখতে আসেন এবং অনেক চাষী আগামীতে লাউ চাষ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। মঙ্গলকোট গ্রামের নুরুল ইসলাম নামের এক কৃষক বলেন, গাছে এত পরিমাণ লাউ ধরা দেখে আমি মুগ্ধ। এই দৃশ্য দেখে নিজেই উদ্যোগ নিয়েছি আগামীতে লাউ চাষ করবো। সেজন্য ওই ক্ষেত মালিককে বীজ দেওয়ার কথাও বলে রেখেছি। শিক্ষিত লাউ চাষী মতিউর রহমান এঁর সাফল্য ও লেখাপড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০০৩ সালে মঙ্গলকোট মাধ্যমিক স্কুল থেকে এসএসসি পাশ, ২০০৬ সালে শহীদ ক্যাপ্টেন মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ এবং ২০১২ সালে যশোর এমএম কলেজ থেকে পলিটিক্যাল সাইন্স নিয়ে অনার্স এবং ২০১৪ সালে মাস্টার্স পাশ করি। পাশ করার পর সরকারি কোন চাকরি না পেয়ে কিছুটা হতাশায় পড়ি। কৃষকের ছেলে হয়ে কি আর করবো নিজেকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে পেশা হিসেবে কৃষি কাজকেই বেছে নিয়েছি। কৃষিকাজে মনোযোগী হয়ে পরের জমি বর্গা নিয়ে লাউ চাষ শুরু করি। ২০শতক জমিতে বাঁশের মাচা, সুতা, বীজ, স্যার ও অন্যান্য খরচ বাবদ ৩০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। লাউ বিক্রির শুরু করে এই পর্যন্ত প্রায় দেড় লক্ষ টাকা বিক্রি করছি। এছাড়াও পরিবারের সবজির চাহিদা মিটানো ও অর্থনৈতিকভাবে বেশ লাভবান হচ্ছি। আগামীতে আরো বেশি বর্গা নিয়ে জমিতে লাউ চাষ করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি আরও জানান, স্থানীয় কৃষি অফিস কর্তৃক যেকোন পরামর্শ বা সহযোগিতা পাই, তাহলে আগামীতে সবজি চাষ করে আরো বেশি সাফল্য অর্জন করতে পারবো বলে মনে করছি।