এফএনএস স্পোর্টস: অনলাইন বেটিং সাইট বেটউইনারের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সাকিব আল হাসানের চুক্তি নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। সাফ জানিয়ে দিলেন, চুক্তি থেকে সরে না এলে এই অলরাউন্ডারের সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সম্পর্ক চুকে যাবে পুরোপুরি। কোনোভাবেই এই চুক্তি মেনে নেওয়া হবে না জানিয়ে বোর্ড প্রধান সিদ্ধান্তের ভার ছেড়ে দিলেন সাকিবের ওপরই। এই চুক্তি নিয়ে সাকিবকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে এখনও জবাব পায়নি বিসিবি। এশিয়া কাপের দল ঘোষণাও তাই থমকে আছে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে তার জবাব পাওয়া যাবে বলে আশা করছে বোর্ড। সেক্ষেত্রে শুক্রবার-শনিবারের মধ্যে দল ঘোষণা করা হবে বলে জানালেন বিসিবি সভাপতি। এশিয়া কাপের জন্য দল ঘোষণার শেষ সময় ছিল গত সোমবার। তবে সাকিবকে নিয়ে দোলাচলের কারণে বিসিবি দল ঘোষণার জন্য বাড়তি তিন দিন সময় নেয়। সেই সময়ের শেষ দিনেও দল ঘোষণা করতে পারছে না তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নিজের পেশাগত কার্যালয় বেক্সিমকোতে সংবাদ সম্মেলনে নাজমুল হাসান বলেন, সাকিবের জবাব পাওয়ার পর তারা দল ঘোষণা করবেন। “সাকিবের ব্যাপার নিয়ে দ্বিতীয় চিন্তা করার সুযোগ নেই। বিসিবির অবস্থান প্রথম থেকে যা ছিল, এখনও সেটাই। বিসিবিতে প্রথম আসার পরই আমি বলেছিলাম এসব ব্যাপারে (বেটিং সংশ্লিষ্ট কিছু) আমাদের ‘জিরো টলারেন্স।’ যে যেভাবে ব্যাখ্যা করুক না কেন, আমাদের কাছে এসবের কোনো সুযোগই নেই। এজন্য তখন আশরাফুলের মতো ক্রিকেটারকে বাদ দিতে হয়েছে।” “এখন এটা পুরোপুরি তার (সাকিবের) ওপর। আমরা একটা চিঠি দিয়েছি, সেটার উত্তর আজকের মধ্যে পাওয়ার কথা। কালকের মধ্যেই পাওয়ার কথা ছিল। পরে শুনেছি সে বলেছে আজকের মধ্যে দেবে। আজকে পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নেব সে থাকবে কী থাকবে না।” সাকিব শেষ পর্যন্ত চিঠিতে যে ব্যাখ্যাই দিন না কেন, বিসিবি নিজেদের ভাবনায় অটল। সাকিবের এই চুক্তি বিসিবি কোনোভাবেই মানবে না এবং চুক্তি থেকে সরে না এলে তাকে দলে রাখা হবে না। “যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা হাতে লিখিত কাগজ না পাব, আমরা যে চিঠি দিয়েছি, সেটার জবাব না পাব এবং সেটা সন্তোষজনক না হওয়া পর্যন্ত আমরা ওকে দলে নেওয়ার সুযোগ দেখি না।” “(বেটিং সাইটের সঙ্গে) কোনোরকম সম্পৃক্ততা থাকলে সম্ভব নয়। সম্পূর্ণভাবে ওখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। নইলে আমাদের দলেই থাকবে না, অধিনায়কত্ব তো পরের ব্যাপার। দলে থাকারই সুযোগ নেই। এটা নিয়ে কোনো আলোচনারই সুযোগ নাই। সিদ্ধান্ত আগে থেকেই নেওয়া এবং আমাদের ভাবনায় আমরা পরিষ্কার।” ‘দলে না থাকা’ মানে ¯্রফে এশিয়া কাপের দলই নয়, বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে তার সম্পর্ক থাকবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন নাজমুল হাসান। “বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গেই কোনো সম্পর্ক থাকবে না (সাকিবের)। বেটিংয়ের সঙ্গে যার কোনোরকম সম্পর্ক আছে, এরকম কারও বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকার প্রশ্নই ওঠে না।” গত ২ অগাস্ট সাকিবের অফিসিয়াল ফেইসবুক পাতা থেকে বেটউইনার নিউজের প্রচার করা হয়। সেখানে বেটউইনার নিউজের জার্সি পরা ছবি দিয়ে তিনি লেখেন, “বেটউইনার নিউজের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক অংশীদারীত্বে আমি গর্বিত।” বেটউইনার নিউজ যদিও একটি অনলাইন পোর্টাল, তবে তারা অনলাইন বেটিং সাইটেরই অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। বিসিবি সভাপতিরও কোনো সংশয় নেই যে দুটি প্রতিষ্ঠান আসলে একই। “আমাদের কাছে কোনো সন্দেহ নেই যে এটা সারোগেট ব্র্যান্ড, একই ওরা। একেক নামে একেকটা দিচ্ছে, কিন্তু মূলত একটি বেটিং কোম্পানি, যারা গ্যাম্বলিং, ক্যাসিনো, এগুলো নিয়ে জড়িত।” “আমাদের ক্লিয়ার কাট বলা আছে, কিসের কিসের সঙ্গে সম্পর্ক থাকতে পারবে না। এই কোম্পানিটির তো সম্পর্ক আছে! আপনি বলতে পারেন, বেটউইনারনিউজ একটা নিউজ ওয়েবসাইট। কিন্তু বেটউইনারের তো বেটিং আছে, গ্যাম্বলিং আছে, সবই আছে। এটার তো অংশ। আমরা তো বলেছি এরকম সম্পর্কই থাকতে পারবে না। আমরা নিজেদের ভাবনায় পরিষ্কার। আলোচনারই কিছু নেই। এখন তাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে দেশের ক্রিকেটে থাকবে নাকি বেটিংয়ে থাকবে।” সাকিবের এই চুক্তি সংক্রান্ত জটিলতায় এশিয়া কাপের দল নিয়ে বিসিবির পরিকল্পনা ব্যহত হচ্ছে, এটা স্বীকার করছেন বিসিবি সভাপতি। তবে নিজেদের নীতির সঙ্গে আপস করার সুযোগ নেই বলেও পরিষ্কার করে দিলেন তিনি। “এশিয়া কাপের আগে দল নির্বাচন নিয়ে পুরো যে পরিকল্পনা ছিল, সেটা নতুন করে ভাবতে হচ্ছে, এটাই একমাত্র ইস্যু। এ ছাড়া অন্য কিছু ভাবছি না।” “একটা ব্যাপার মনে রাখবেন, কেউ অপরিহার্য নয়। হ্যাঁ, সাকিবের মতো ক্রিকেটার আমাদের হাতে এই মুহূর্তে নেই। তবে সাকিবকে নিয়ে খেলেও আমরা অনেক ম্যাচ হেরেছি, সাকিবকে ছাড়াও জিতেছি। কতগুলো বেসিক প্রিন্সিপালস আছে, যেগুলোর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।”