কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি ঃ কয়রায় অসময়ে তরমুজ চাষে সাফল্য অর্জন করেছেন প্রভাষক শাহাবাজ আলী। দেশে তরমুজের মৌসুম যখন শেষ তখনই বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরামর্শে অসময়ে তরমুজ চাষে উদ্বুদ্ধ হয় এই কৃষি প্রেমীক। এরই মাঝে আগস্ট মাসে মাঁচায় মাঁচায় জালের ফাঁকে ঝুলছে বারি- ১, জাতের তরমুজ। তিনি অসময়ে মাঁচায় তরমুজ চাষের জন্য নিজ ভিটায় ৪০ শতাংশ জমিতে পরিক্ষামূলক চাষ করে সম্প্রতি কয়েক মন তরমুজ বাজারজাত করেছেন। খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রার লবণাক্ত মাটিতে বড় ধরনের সুস্বাদু তরমুজ উৎপাদন করে বাজারজাত করায় বিভিন্ন মহলে প্রশংশিত হয়েছেন এই কৃষি প্রেমিক প্রভাষক শাহাবাজ আলী। এদিকে মাঁচায় অসময়ে ব্যাপকভাবে তরমুজ ঝুলে আছে এ ধরনের ছবিসহ সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় উপজেলা কৃষি অফিস সহ আশে পাশের কয়েকটা গ্রামের মানুষ দেখতে ভিড় জমাচ্ছে প্রভাষকের বাড়ীতে। তবে তিনি শুধু তরমুজ নয় বিগত বছরে অসময়ে শিম চাষেও সাফল্য অর্জন করায় অনেকে তাকে কৃষি প্রেমিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন । এমনকি এলাকার স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীরা প্রভাষক শাহাবাজ কে সকালে কলেজ শিক্ষক এবং বিকেলে সবজির শিক্ষক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। জানা গেছে, এই শিক্ষক ফজরের নামায পড়ে ২ ঘন্টা কৃষি ক্ষেত দেখাশুনা করেন, অতঃপর কলেজ থেকে ফিরে বিকেলে আবারও লেগে যান সবজির তদারকিতে। এ বিষয় প্রভাষক শাহাবাজ সাংবাদিকদের জানান, তার এই তরমুজ চাষের উদ্বুদ্ধ করেছিলেন, কয়রা সরেজমিন কৃষি গবেষণা বিভাগের বৈজ্ঞানিক সহকারি জাহিদ হাসান। তিনি বিগত জুনের প্রথমেই পরিক্ষামূলকভাবে ৩০০ মাদায় বারি-১ জাতের ৬০০ তরমুজ বীজ রোপন করেন এবং রোপনের ৮০ দিন পর থেকে ফল উত্তোলন করেছেন। অত্যান্ত সুস্বাদু অসময়ের এই তরমুজ বাজারে ব্যাপকহারে চাহিদা থাকায় ভাল দাম পাচ্ছেন তিনি। তিনি জানান, প্রতিটি তরমুজ গড় ৬ থেকে ৮ কেজি ওজন হয়েছে এবং প্রতি কেজি পাইকারি ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হওয়ায় লাভের আশা দেখছেন। তিনি বলেন, বেকার যুবকরা যেন সময় নষ্ট না করে বিভিন্ন ধরনের ফসল অসময়ে উৎপাদন করে দেশকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করেন এমনটা প্রত্যাশা তার। উপজেলা কৃষি অফিসার আছাদুজ্জাামন সম্প্রতি সরেজমিনে প্রভাষকের তরমুজ ক্ষেতের মাঁচায় শতশত তরমুজ ঝুলতে দেখে অনেকটা আশ্চার্য হয়ে পড়েন এবং তিনি না দেখলে হয়ত বিশ^াস করতেন না বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে যিনি অসময়ে তরমুজ চাষে এই কলেজ শিক্ষককে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন তিনি কয়রার এক কৃতি সন্তান। এছাড়া তিনি বর্তমানে কৃষি ইনস্টিটিউট সরেজমিন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ হারুনর রশিদ হিসেবে কর্মরত আছেন খুলনায়। তিনিও সম্প্রতি তার নিজ জন্মভূমি এলাকায় কয়রার মহারাজপুর গ্রামে লবণাক্ত মাটিতে লাগানো অসময়ে এই তরমুজ ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন। এসময় তিনি বলেন, বারি তরমুজ-১ হাইব্রিড না হওয়ায় কৃষকরা তরমুজ খেয়ে নিজেরা বীজ সংরক্ষণ করতে পারবে। দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়েও সুস্বাদু, অধিক পরিমাণে এবং বড় ধরনের তরমুজ উৎপাদনের সাফল্য দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।