কয়রা প্রতিনিধি ॥ মানবজাতির কল্যাণে প্রকৃতির সৃষ্টি। অসংখ্য বৃক্ষরাজির মধ্যে খেজুর গাছ একটি অতি প্রয়োজনীয় পরিচিত বৃক্ষ। মানব দেহের গুনাগুণ সমৃদ্ধ যে বৃক্ষ জৈষ্ঠের মধু মাসে নিজেকে জানান দিতে সেজেছে নতুন রুপে। যারই ফলশ্রুতিতে কয়রায় রাস্তার ধারে , বাড়ীর আনাচে কানাচে চোখে পড়ছে কাঁচাপাকা লাল হুলুদ দেশী খেজুর। খেজুর গাছে বছরে দুইবার ফলন আসে শীতকালে সুস্বাদু রস আর গরমকালে দৃষ্টিনন্দন হলুদ রঙের খেজুর ফলের মিষ্টি স্বাদ গ্রহন করে থাকেন। এখন গরমকাল তাই কয়রায় দক্ষিণাঞ্চলে বিভিন্ন পথের প্রান্তরে বাড়ীর আনাচে কানাচে খেজুর গাছে ধরেছে হলুদ রঙের খেজুর। কয়রা উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে থোকায় থোকায় খেজুর গাছে ঝুলছে তা দেখে শিশু-কিশোরদের মনে আনন্দ উল্লাস চলছে খেজুর পাকার অপেক্ষায় রয়েছে তারা। এখনও ৮ থেকে ১৫ দিন সময় লাগবে খেজুরগুলো পাকতে ইতোমধ্যে উপজেলায় খেজুর পাকতে শুরু করেছে। গ্রামের স্থানীয় ছেলেমেয়েরা পেড়ে তা খেতে শুরু করেছে। সকালে ভোরে ঘুম থেকে পাল্লা দিয়ে শিশু কিশোররা খেজুর পাড়তে গাছ তলায় যায়। যে আগে যেতে পারবে সে খেজুর গাছে উঠে খেজুর পাড়বে কেউ নিচে ডালা নিয়ে খেজুর খুটবে। দেরিতে গেলে তারা আর পাবে না। এক সময় প্রায় সকলেই বয়স্ক পাঁকা গাছ বিভিন্ন ঘর তৈরির কাজে লাগাতেন। যদিও কালের বির্তনে হারিয়ে যাচ্ছে এ ঐতিহ্যবাহী গাছ গুলো। শীতকালে খেজুর গাছের বিশেষ করে খেজুর রসের বেশ কদর থাকলেও সত্যিকার অর্থে কেউ যত্ন নেয় না এ গাছের। অথচ কতটা উপকারি এ গাছ একটু গভীরভাবে ভাবলেই পাওয়া যাবে। শীতকালে খেজুর রস, রস দিয়ে পিঠা গুড় পাটালী। শুধু এ গুলোই নয় খেজুরের পাতা দিয়ে তৈরি হয় ঐতিহ্যবাহী পাটি। যা গ্রামীন জনপদের নারীরা যুগ যুগ ধরে ব্যবহার করে আসছে। গ্রামীণ জনপদের গৃহবধুরা পাতা দ্বারা তৈরি করে থাকে পাটি-চাটাই। এক সময় যেটা ঘুমানো, বসা বা ধান শুকানোর কাজে ব্যবহারিত হতো। তবে বর্তমানে আধুনিকতার ছেঁয়াই সে পাটি হারিয়ে গিয়ে যা এখন শুধুই স্মৃতি। কালনা গ্রামের সোবহান গাজী জানান, আামার বাড়ীতে ৫০ টার বেশি খেজুর গাছ ছিল। লবণ পানির কারনে তা মারা গেছে এখনও ২০ টার মত খেজুর গাছ আছে। তবে এখনও ভালভাবে খাওয়ার উপযোগী হয়নি খেজুরগুলো এখন খেতে অনেকটায় কষ, বৃষ্টি হবে কিছু দিন পর পাকলে খাওয়ার উপযোগী হবে। এবং অনেকেই এই পাকা খেজুর বাজারে বিক্রি করবেন। উপজেলার বাময়িা গ্রামের গ্রামের আলী গাজী জানান, গাছির অভাবে খেজুর গাছ থেকে রস আহরণ করা যাচ্ছে না। এ কারনে প্রতি বছর শত শত খেজুর গাছ কেটে ফেলছে। বর্তমানে বড় গাছের সংখ্যা কম। তবে কয়েক বছর আগেও এই এলাকায় অসংখ্য খেজুর গাছ ছিল। এদিকে কয়রায় বিভিন্ন স্থানে খেজুর গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে খেজুর। অনেক খেজুরে রঙ ধরেছে। তা দেখে প্রতিটি মানুষের চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। খেজুর পাকতে শুরু করেছে। স্থানীয় ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা পেড়ে খেতে শুরুও করেছে। অনেকেই পাকা খেজুর বাজারে বিক্রি করছে। তবে মৌসুমী ফলের ভিড়ে দেশী খেজুরের কদর খুবই কম বাজারে। খেজুর গাছ দুরারোগ্য রোগ প্রতিরোধী উদ্ভিদ, প্রতিকুল পরিবেশেও এটি টিকে থাকতে পারে। এ পাঁকা খেজুর দোয়েল, বুলবুলি, শালিকসহ অন্য্যান্য পাখিদের খুব প্রিয়। পিপড়া ও মৌমাছিরাও এ পাকা খেজুরের স্বাদ নিতে দেখা গেছে। তবে সময়ের ব্যবধানে সাংসারিক জীবনে অত্যান্ত প্রয়োজনীয় খেজুর গাছ আজ প্রাই বিলুপ্তির পথে।