কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি ॥ বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তালগাছের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে লিখেছেন, তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে সব গাছ ছাড়িয়ে উঁকি মারে আকাশে। তালগাছ আকাশে উঁকি মেরে সূর্যের তাপ শোষণ করলেও কচি তালের শাঁসে জলীয় অংশ বেশি থাকায় তা মানব দেহের পানিশূন্যতা অনেকটাই পূরন করে। ফলে তীব্র দাপদাহের পর উপকূলে ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসা মাস মে মাস তাই কখনো মুষলধারে, কখনও থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু এখনও তেমন কমেনি গরম। বৈশাখের শেষ ও জ্যৈষ্ঠের শুরুতেই ভ্যাপসা গরমে একটু স্বস্তি পেতে শৌখিন ক্রেতা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের কাছে মধু মাসের রসালো ফল তালের শাঁসের কদর বেঁড়েছে কয়রায়। কয়রা উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামের রাস্তার দু’ পাশে ও প্রধান সড়কের মোড়ে মোড়ে কচি তালের পসরা নিয়ে বিক্রি করতে হাজির হয়েছেন অনেক ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ী। একটু স্বস্তি পেতে রাস্তার পাশে ফুটপাতে বিক্রি হওয়া রসালো এই ফলের স্বাদ নিচ্ছেন অনেকে। তাদের কাছ থেকে স্থানীয় বাসিন্দা বা চলতি পথের অনেককেই শ^াস কিনে খেতে দেখা গেছে। আবার অনেককেই পরিবারের জন্য তাল থেকে শ^াঁস বের করে কিনে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। কোনো কোনো বিক্রেতা ভ্যান যোগে পাড়া ও মহল্লায় ঘুরে ঘুরে তাল শ^াস বিক্রি করছেন। কয়রা গ্রামের তাল শ^াস বিক্রেতা হামিদ জানান, প্রতি বছর মধু মাসে কয়রা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে তাল কেনেন। পরে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন স্থানে তা বিক্রি করেন। প্রতি বছর এ সময় তালের শ^াস বিক্রি করে সংসার চালান। বৈশাখ মাস থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত চলবে তালের শ^াস বিক্রি। তবে এবারের ফলন কম হওয়ায় কিছুটা দাম বাড়তি। তালের শ^াস বিক্রেতা জামাল জানান, প্রতিদিন দিন তিনি ৩ থেকে ৪ শ তাল কেটে বিক্রি করেন। প্রতিটি তালে ভিতরে তিন থেকে ৪ টা করে শ^াস থাকে এবং প্রতিটি তাল গড়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা বিক্রি হয়। গ্রামে গ্রামে ঘুরে এসব কচি তাল কিনে আনেন। তালের সংখ্যাভেদে একটি গাছের দাম পড়ে ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা। গরম পড়লে তালের শ^াস অনেক বেশি বিক্রি হয়। প্রতি বছর তিনি এ মৌসুমে তালের শ^াস বিক্রি করেন। ফুটপথে দাঁড়িয়ে পরিবারের সবার জন্য তালের শ^াস কিনেছিলেন ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ীতে আসা মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, রাজধানীতে ফরমালিন বা কেমিক্যাল ছাড়া কোনও ফল পাওয়া মুশকিল। সেখানে তালের শ^াস সর্বোৎকৃষ্ট। কোনও ধরনের ভেজাল নেই। তবে তালের শ^াস সুপারশপে বিক্রি হয় না, এটা কেবল ফুটপাত বা মহল্লার অলিগলিতে পাওয়া যায়। ছোট শ^াস অনুযায়ী দাম কিছুটা বেশি হলেও এ নিয়ে কিছু বলার নেই। বিক্রেতারা কষ্ট করে দা’ দিয়ে তাল কেটে দেয়। লাভ না হলে তারা চলবে কিভাবে। আরেক ক্রেতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খায়রুল আলম বলেন, গণমাধ্যমের বরাতে জানতে পেরেছি তালের শ্বাঁস অনেক উপকারি এটা ডায়েটের জন্য বেশ কার্যকর। এছাড়া শুষ্ক ত্বক ও চুল পড়া বন্ধ করে। এটা খেতে সুস্বাদু এজন্য নিজে খেলাম ও পরিবারের সদস্যদের জন্যেও নিলাম। মঠবাড়ী গ্রামের তালগাছ মালিক মনজু জানান, আগের মতো মতো লোকজন পাকা তাল খেতে চায় না। তাই আমি কাঁচা অবস্থাতেই ৫ টি গাছের তাল ৬ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্যকপ্লেক্্েরর মেডিকেল অফিসার এম আর হাসান জানান, কচি তালের বেশির ভাগ অংশ জলীয় হওয়ায় শরিরে পানির চাহিদা মেটাতে সক্ষম। গরমে শরীর থেকে দ্রুত পানি বের হয়ে গেলে তা পূরণ করার পাশাপাশি তালে শ^াঁস শরির কে দ্রুত শীতল করে। এতে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, বি ও সি সহ নানা ধরনের পুষ্টির চাহিদা মেটাচ্ছে তালের শ^াস। এই শ^াসে প্রচুর পরিমাণে খনিজ লবণ ও পানি রয়েছে। তাছাড়া তারের শ^াঁস আ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় শরিরের কোষের ক্ষয়রোধ করে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত)বি,এম তারিক উজ-জামান বলেন, তালের শ^াস শরিরের জন্য অত্যান্ত উপকারি সুস্বাদু একটি ফল। দিন দিন তাল গাছ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলের মানুষ গুরুত্ব না বুঝে তালগাছ কেটে ফেলছে। তবে এখন বজ্রপাত রোধে কৃষি অফিস ও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে রাস্তার ধারে ও খালের পাড়ে তালগাছ রোপন করা হচ্ছে।