দৃষ্টিপাত ডেস্ক ॥ গাজা যুদ্ধে ইসরাইল বিমান হামলা চালিয়ে একের পর এক হত্যাকান্ড সহ গণহত্যা পরিচালনা করলেও ইসরাইল স্বস্তিতে নেই। গত সোমবার খান ইউনিসে হামাসের হামলায় চব্বিশ ইসরাইলি সেনা নিহত হওয়ার পর থেকে গাজা যুদ্ধে ফ্রন্টে নিয়োজিত ইসরাইলি সেনাদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। একই সাথে দখলদার সেনাদের মাঝে ভীতি ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে যে আগামীতেও হামাসের হামলায় তাদের জীবনহানী ঘটতে পারে। কারন গাজা উপত্যকা হামাস যোদ্ধাদের অতি পরিচিত তারা যে কোন সময়ে অবস্থান পরিবর্তন সহ চরম প্রতিকুল পরিবেশেও যুদ্ধ চালাতে ও নিজেদের আত্মরক্ষায় সক্ষম। আজ গাজা যুদ্ধের একশত দশ দিন পূর্ণ হলো এই তিন মাসের অধিক সময়ে হামাসের হামলায় সহস্রাধীক দখলদার সেনা নিহত হয়েছে বলে হামাসের সশস্ত্র শাখা আল কাসেম ব্রিগেড তাদের নিজস্ব টেলিগ্রাম বার্তায় প্রকাশ করেছে। অবশ্য ইসরালের পক্ষ হতে দুই শতাধীক সেনার নিহত হওয়ার খবর প্রকাশ করেছে। ইসরাইল একটি অতি শক্তিশালী রাষ্ট্র অন্যদিকে হামাস কেবল মাত্র একটি সংগঠন বিধায় হামাসের সাথে যুদ্ধে ইসরাইলী সেনাদের নিহত হওয়ার ঘটনা এবং তিন মাস এর অধিক সময় যাবৎ হামাসের সাথে যুদ্ধ করা ইসরাইলের দেউলায়িত্বের বহিঃপ্রকাশ। চব্বিশ ইসরাইলি সেনা নিহত হওয়ায় কেবল ইসরাইলি সেনাদের মাঝেই কেবল আতঙ্ক ও ভীতি বিরাজ করছে তা নয়, সমগ্র ইসরাইলের অভ্যন্তরে ক্ষোভ, বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল রাজধানী তেল আবিব সহ প্রধান প্রধান সড়কের বাইরে বিক্ষোভ কারীরা ইসরাইলের পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ করে, নিহতদের স্বজন ও হামাসের হাতে বন্দী ইসরাইলিদের মুক্তির দাবীতে গতকাল ইসরাইলে যে বিক্ষোভ হয়েছে তা সর্বকালের বৃহত্তম বিক্ষোভ হিসেবে প্রচার করেছে পশ্চিমা মিডিয়াগুলো। ইসরাইলের পার্লামেন্টের কঠোর নিরাপত্তা বেস্টনি ভেঙ্গে শত শত বিক্ষোভকারী পার্লামেন্টে ভবনে প্রবেশ করলে দেশটির আইন প্রনেতাদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। পরবর্তীতে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা শক্তি প্রয়োগ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। এর পূর্বে গত মঙ্গলবার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহুর বাসভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে হামাসের হাতে বন্দী ইসরাইলিদের স্বজনরা। ইসরাইল গাজা যুদ্ধে উত্তরাঞ্চল পশ্চিম তীরে বিমান হামলার তীব্রতা এতটুকু বৃদ্ধি করেছে যে উত্তরের জনপদগুলো জনমানব শুন্যতায় পরিনত হয়েছে। উত্তরের ফিলিস্তিনি অধিবাসি শুন্য হওয়ায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনিরা পশ্চিমের খান ইউনিস এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। দীর্ঘ এক মাসের অধিক সময় যাবৎ দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর সদস্যরা খান ইউনিসের নিয়ন্ত্রন নেওয়ার জন্য বারবার অভিযান পরিচালনা করলেও ইসরাইলি বাহিনী বারবার ব্যর্থ হয়। গতকাল পশ্চিমা মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে যে, ইসরাইলের দাবী তারা খান ইউনিসের চারিদিকে ঘেরাও করে রেখেছে এবং দখলদার ও হামাসের মধ্যে চলছে চরম যুদ্ধ, হামলা এবং পাল্টা হামলা। এদিকে গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী অন্তত দেড়শতাধীক সাংবাদিককে হত্যা করেছে। গাজার স্থানীয় সাংবাদিকদের পাশাপাশি রয়টার্সের ও বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকদের হত্যা করেছে। ইসরাইলি বাহিনীর সর্বাধিক ক্ষোভ কাতার ভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরায় কর্মরত সাংবাদিকদের উপর। কারন আল জাজিরা একমাত্র টেলিভিশন যে চ্যানেলটি দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর গাজার গণহত্যা ও বিমান হামলার সচিত্র প্রতিবেদন প্রচার ও প্রকাশ করছে। গতকাল লেবাননের হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা আবারও হামলা চালিয়েছে ইসরাইলে। কয়েক দিন পূর্বে ইসরাইল এর বিমান বাহিনীর বিমান গুলো দক্ষিন লেবাননের কয়েকটি গ্রামে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে। পশ্চিমা মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা ক্ষেপনাস্ত্র হামলার পাশাপাশি রকেট হামলাও পরিচালনা করে হিজবুল্লাহর হামলার সময়ে ইসরাইলের সর্বত্র সাইরেন বাজতে থাকে এ সময়ে ইসরাইলের সীমান্ত এলকার অধিবাসিরা যে যার মত নিরাপদ অবস্থানে ছুটতে থাকে, এদিকে সাগরে পশ্চিমা জাহাজ চলাচলে প্রতিবন্ধকতা এবং হামলা পরিচালনার পর হুতি যোদ্ধারা ইসরাইলের ভূ-খন্ডেও ক্ষেপনাস্ত্র হামলা পরিচালনা করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেনের তৃতীয় দফাতে ইয়েমেনে হামলায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে ইয়েমেন, দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে বলা হয়েছে ইয়েমেন তার স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্বের উপর আঘাত কোন অবস্থাতেই মেনে নেবে না। তুরস্ক, ইরান, রাশিয়া ও সৌদি আরবের পক্ষ হতে ও ইসরাইলের হামলা অবিলম্বে বন্ধের আহবান জানানো হয়েছে। ইরানের সাথে ইসরাইলের সম্পর্ক অবনতি দীর্ঘ সময়ে অন্যদিকে তুরস্কের সাথে স্বাভাবিক ছিল ও সৌদি আরবের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন ঘটতে যাচ্ছিল কিন্তু ইসরাইলের ফিলিস্তিনিদেরকে গণহত্যা পরিচালনা করায় সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্র বাঁধাগ্রস্থ হয়ে বর্তমান সময়ে চরম অবনতিশীলতার পর্যায়ে পৌছেছে। এদিকে ইসরাইলের পক্ষ হতে আবারও বলা হয়েছে গাজা যুদ্ধে ইসরাইল তার লক্ষ্যে পৌছাবে এবং সফল হবে। গাজা বিভিন্ন এলাকাতে মৃত দেহে উদ্ধারের তৎপর আন্তর্জাতিক রেসক্রসের সদস্যরা, হামাস যোদ্ধাদের বর্তমান অবস্থান কেবল রক্ষাত্মক নয় তারা প্রতিনিয়ত দখলদার বাহিনীর উপর হামলা পরিচালনা করছে। বিশ্বের দেশে দেশে ইসরাইল বিরোধী বিক্ষোভ চলছে তো চলছেই, গতকাল ইউরোপের একাধিক দেশের পাশাপাশি ব্রাসেস্ল এ হাজার হাজার মানবতাবাদী মানুষ ইসরাইল বিরোধী বিক্ষোভে মিছিল করেছে। ইসরাইলের পক্ষে হামাস নির্মূল বা গাজা যুদ্ধে জয়লাভ কতটুকু সম্ভব বা আদৌ সম্ভব কিনা তা বিশ্ব ব্যবস্থাকে ভাবাচ্ছে, কারন হামলা বীর বিক্রমে লড়াই করে চলেছে।