সিরাজুল ইসলাম খুলনা থেকে ॥ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের ২৫ বছর পূর্তি উদযাপনের অংশ হিসেবে ‘ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার এবং চতুর্থ কৃষি বিপ্লব’ শীর্ষক দু’দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন উদ্বোধন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে এ সম্মেলনের গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক। তিনি সম্মেলন উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথির পক্ষে লিখিত বার্তা পড়ে শোনান কনফারেন্স অর্গানাইজিং কমিটির সদস্য প্রফেসর ড. সরদার শফিকুল ইসলাম। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্যে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কৃষি উন্নয়নের পুনর্বিন্যাসই হলো ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার। ইতিহাস থেকে জানা যায়- আমরা তিনটি কৃষি বিপ্লব প্রত্যক্ষ করেছি যা আমাদের চাষ, উৎপাদন এবং নিজেদের টিকিয়ে রাখার পদ্ধতিকে মৌলিকভাবে পরিবর্তন করেছে। প্রথম কৃষি বিপ্লব ছিল শিকার এবং সংগ্রহ থেকে স্থায়ী কৃষিতে রূপান্তর। দ্বিতীয়টি ছিল আমাদের ক্ষেত্রগুলির যান্ত্রিকীকরণ, যা দ্রুতগতিতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করেছে। তৃতীয়টি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য উন্নত জেনেটিক্স এবং রাসায়নিক ব্যবহার দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।তিনি আরও বলেন, চতুর্থ কৃষি বিপ্লব বলতে উন্নত প্রযুক্তির একীকরণের মাধ্যমে কৃষির চলমান রূপান্তরকে বোঝায়। এর মধ্যে রয়েছে- ডিজিটাল এগ্রিকালচার, প্রিসিশন এগ্রিকালচার, বায়োটেকনোলজি, রোবোটিক্স ও অটোমেশন এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স। এই উন্নত প্রযুক্তিগুলো উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্ট খরা, তাপমাত্রা এবং বৃষ্টিপাতের অনিয়মিত পরিবর্তন, লবণাক্ততা এবং লবণাক্ত অনুপ্রবেশ এর সাথে লড়াই করতে সহায়তা করবে। নিজেদের ধারণাগুলোর বিনিময় এবং পারস্পারিক সহযোগিতার কারণে কৃষির জন্য আরও টেকসই এবং স্থিতিস্থাপক ভবিষ্যতের ভিত্তি তৈরিতে অবদান রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আবুল কাশেম চৌধুরী ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা। প্যাট্রন হিসেবে বক্তব্য রাখেন জীববিজ্ঞান স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. আবুল কালাম আজাদ। সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কনফারেন্স অর্গানাইজিং কমিটির চেয়ার এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. শামীম আহমেদ কামাল উদ্দীন খান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কনফারেন্স অর্গানাইজিং কমিটির কনভেনর প্রফেসর ড. মোঃ সারওয়ার জাহান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জীববিজ্ঞান স্কুলভুক্ত ডিসিপ্লিনসমূহের প্রধান, শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অংশগ্রহণকারী দেশ-বিদেশের গবেষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে তিনটি থিমেটিক এরিয়াতে তিনজন থিমেটিক বক্তা তাঁদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এর মধ্যে ‘খাদ্য নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা’ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন কানাডার গ্লোবাল ইনস্টিটিউট ফর ফুড সিকিউরিটির নির্বাহী পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. স্টিভেন ওয়েব, ‘কৃষির অভিযোজন ও টিকে থাকা’ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন অস্ট্রেলিয়ার মারডক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. রিচার্ড বেল এবং ‘কৃষির যান্ত্রিকিকরণ ও কৃষি বিপ্লব’ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্ম পাওয়ার অ্যান্ড মেশিনারি বিভাগের প্রফেসর ড. চয়ন কুমার সাহা। থিমেটিক এরিয়াগুলোতে মোট দুই শতাধিক দেশি ও বিদেশি গবেষক অংশগ্রহণ করেন। এই কনফারেন্সে প্রায় ৬০টির মতো গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন ও শতাধিক প্রবন্ধ পোস্টারে প্রদর্শিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।