সিরাজুল ইসলাম খুলনা থেকে \ খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতাল কাগজ-কলমে রয়েছে ৫শ’ শয্যা। সেই হিসেবে এ হাসপাতালে বাড়েনি জনবল। (সোমবার সকাল ৭ টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৭টা পর্যন্ত) এ হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিলো এক হাজার ৬২২ জন। যা হাসপাতালের ধারণক্ষমতার চেয়ে তিনগুণ রোগী বেশি। এছাড়া হাসপাতালটির বহির্বিভাগের দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে গড়ে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করেন। জনবল সংকটে হাসপাতালটির চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। খুমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. নিয়াজ মুস্তাফি চৌধুরী বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণের লক্ষ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ব্যাপক আকারে সেবা সম্প্রসারণ ও নতুন নতুন বিভাগ সৃষ্টির ফলে খুলনাসহ আশপাশের জেলাগুলোর মানুষের প্রবল আস্থা তৈরি হয়েছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান সম্মত হওয়ায় এই রেকর্ড সংখ্যক রোগীর উপস্থিতি। চিকিৎসা সেবা প্রদানকারীরা হিমশিম খেলেও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি’। সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, খুমেক হাসপাতালের মূল প্রবেশ দ্বারের সিড়ি দিয়ে দোতলায় উঠতেই পুরো বারান্দায় জুড়ে রোগীর শয্যা। শুধু এই বারান্দাই এই চিত্র নয়, হাসপাতালে প্রতিটি ওয়ার্ডে, বারান্দায়, বাথরুমের পাশে, প্রশাসনিক ভবনের যাওয়ার পথে মেঝেতেও মাদুর বিছিয়ে শয্যা বানিয়ে শত শত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালে যেন তিল ধারণের ঠাই নেই। রূপসা উপজেলা থেকে বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে খুমেক হাসপাতালে আসেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে হাসপাতালের বারান্দায় থেকে শয্যা মেলেনি তার। বাবার শ্বাসকষ্ট, বারান্দায় ফ্যান নেই, প্রচন্ড গরম, চিকিৎসক এসে দেখলেও কষ্ট আর ভোগান্তি যেন পিছু ছাড়ছে না। এখানে হাঁটারও জায়গা নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সব রোগের চিকিৎসক না থাকা ও উন্নত মানের চিকিৎসা সরঞ্জাম না থাকায় বাড়তি চিকিৎসা সেবা নিতে এখানে আসা। তার মতো অনেক রোগীরা জানান, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিট নেই। চিকিৎসকদের বারবার বলেছি, সিট না থাকলে তারাও বা দেবে কোথা থেকে। তাই কষ্ট হলেও বারান্দায়সহ যে যেখানে ফাঁকা জায়গা পাচ্ছেন সেখানেই শয্যা বানিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। খুমেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৬টি বিভাগের অধীনে ৩১টি ওয়ার্ডে ২৬৮ চিকিৎসক পদের বিপরীতে ৮১টি পদ শূন্য। হাসপাতালের অন্য জনবলেও এক তৃতীয়াংশের বেশি সংকট রয়েছে। স্বল্প জনবল নিয়ে হিমসিম খেতে হয় চিকিৎসকদেরও। হাসপাতালে স্বাস্থ্য সেবার মান ধরে রাখতে জনবল বাড়ানোর পাশাপাশি দ্রুত ভবন সম্প্রসারণ প্রয়োজন বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। খুমেক হাসপাতালের আরএমও ডা. সুমন রায় বলেন, এই হাসপাতালে প্রায়ই ধারণ ক্ষমতার তিনগুণ রোগী ভর্তি থাকছেন। রোগীর চাপের কারণে চিকিৎসকদের কষ্ট তো হয়ই। তারপরেও আমরা কখনও কোনো রোগীকে অবহেলা করি না। কোন রোগী আসলেই ভর্তির প্রয়োজন হলে হাসপাতালে রোগী ভর্তি হচ্ছেন। এছাড়া খুলনাসহ আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে হাসপাতালটির বহির্বিভাগেও দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে গড়ে প্রতিদিন দেড় হাজার রোগী চিকিৎসা নেন। তিনি বলেন, উপজেলা হাসপাতালগুলোতে সক্ষমতা যদি আরও বাড়ানো যায়, তাহলে এখানে রোগীর চাপ কমতো।