সিরাজুল ইসলাম খুলনা থেকে \ খুলনা রুপশা ১০ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টারি গত ১৩ বছর বন্ধ হলেও আশা ছাড়েনি শ্রমিকরা জানা যায়, লোকসানের অজুহাতে ২০১০ সালের ১৮ আগস্ট বন্ধ হয়ে যায় খুলনার দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি। সে সময় ফ্যাক্টরির ইজারা গ্রহীতা প্রতিষ্ঠান ভাইয়া গ্র“প শ্রমিক-কর্মচারীদের ১০ মাসের মজুরি, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচ্যুইটির প্রায় ছয় কোটি টাকা বকেয়া রাখে। আকস্মিকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে চরম বিপদে পড়েন এখানকার সাড়ে ৭শ’ শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা। উৎপাদন বন্ধের পর ফ্যাক্টরির শ্রমিকরা তা পুনরায় চালুর অপেক্ষায় ২৯ মাস কাটিয়েছেন। এসময় কারখানা চালুর দাবিতে বিভিন্ন সময় আন্দোলন, সংগ্রাম, আবেদন, নিবেদন করেছেন তারা। বিভিন্ন পক্ষ থেকে এসময় ফ্যাক্টরি চালুর আশ্বাসও দেওয়া হয়। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নিজেও খুলনায় ২০১১ সালের ৫ মার্চের জনসভায় ফ্যাক্টরি চালুর প্রতিশ্র“তি দেন। প্রধানমন্ত্রীর ওই ঘোষণার পর সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ও দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে ফ্যাক্টরি চালুর ব্যাপারে পত্র চালাচালি করে। ২০১২ সালের ১৭ মে অনুষ্ঠিত এক সভায় দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি চালু করতে হলে শিল্প মন্ত্রণালয়কে মিলটির শতভাগ মালিকানা নিশ্চিত করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সঙ্গে ৫ বছরের একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা থাকতে হবে ও মিলের পুরনো দায়-দেনা সম্বন্ধে কি করা যায় সে ব্যাপারেও পরামর্শ করার সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়। ওই সভার সূত্র ধরে ২৭ মে শিল্প মন্ত্রণালয়ে আবারও বৈঠক হয়। বৈঠকে দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির শতভাগ মালিকানা বিসিআইসির আওতায় নেওয়ার পাশাপাশি বিসিআইসির আওতায়ই চালুর সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য এক মাসের মধ্যে বিসিআইসি মিলের সকল সম্পত্তি বুঝে নেবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ওই সভার পরপরই শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া চীন সফরে যাওয়ায় বিষয়টি স্থগিত হয়ে যায়। জুনের শেষদিকে শিল্পমন্ত্রী দেশে আসলেও এ ব্যাপারে আর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সর্বশেষ ৩০ ডিসেম্বর শিল্পমন্ত্রীর সভাপতিত্বে আবারও বৈঠক হয়। এ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর খুলনা সফরের আগেই ফ্যাক্টরির মেইনটেন্যান্স কাজ শুরু করা করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ সংক্রান্ত আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এমনকি ফ্যাক্টরিও এখনও জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে আছে। পাহারায় রয়েছে কয়েকজন পুলিশ ও আনসার সদস্য। দাদা ম্যাচ ওয়ার্কাস ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ দিলখোশ মিয়া দৈনিক দৃষ্টিপাত কে বলেন, “২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের আলোকে প্রধানমন্ত্রী খুলনায় আসার আগেই দাদা ম্যাচের মেইনটেন্যান্স শুরু হওয়ার কথা। এ সংক্রান্ত একটি পত্র ৩১ ডিসেম্বর শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠান। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ওই পত্রের আলোকে ১০ কোটি টাকার থোক বরাদ্দের ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় দাদা ম্যাচের বেকার শ্রমিকদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। ”তিনি আরও জানান, ওই দিনের বৈঠকে খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, খুলনা মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মিজানুর রহমান মিজানসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। দাদা ম্যাচ ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম শাহাদাৎ দাবি করেন, উৎপাদন বন্ধের পর ২৯ মাসে রোগে-শোকে বিনা চিকিৎসায় বকেয়া টাকা না পেয়ে ৩০ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে উলেখযোগ্যরা হচ্ছেন মোঃ নুরুল ইসলাম, আব্দুল আজিজ, আব্দুর রহমান, আনোয়ার হোসেন, আবুল বাশার, নুরুল ইসলাম, মোঃ মানিক, আব্দুল আজিজ, ওমর আলী, ইমান আলী, আব্দুস সাত্তার, মন্টু মিয়া, জাহাঙ্গীর হোসেন, শাহ আলম, চাঁন মিয়া, রবিউল ইসলাম, নার্গিস বেগম, রেহেনা বেগম, আব্দুল ওয়াদুদ ও মোঃ লকিতুলাহ উলেখ্য, পাকিস্তান শাসনামলে ১৯৫৬ সালে গেওয়া কাঠের ওপর নির্ভর করে খুলনার রূপসা নদীর তীরে ১৮ একর জমির ওপর ঐতিহাসিক এ ম্যাচ ফ্যাক্টরির যাত্রা শুরু হয়। তৎকালীন সময়ে এ মিলের মালিকানায় ছিল পাকিস্তানি শিল্পগোষ্ঠীর ২২ পরিবারের এক পরিবার দাদা গ্র“প। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দাদা গ্র“প এর মালিকানা ফেলে চলে যায়। ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকার জাতীয়করণ করে ফ্যাক্টরিটি চালু করে শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ অব্যাহত রাখে। ১৯৯৩ সালে ভাইয়া গ্র“প অব ইন্ডাস্ট্রিজ এ মিলের ৭০ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়।