খুলনা প্রতিনিধি ॥ খুলনা জেলার বর্তমান আয়তন ৪ হাজার ৩৯৪.৪৬ বর্গ কিলোমিটার। ২০১১ সালের সর্বশেষ আদম শুমারী অনুযায়ী খুলনা মহানগরীসহ জেলার লোকসংখ্যা ২৩ লাখ ১৮ হাজার ৫২৭ জন। এরমধ্যে খুলনা মহানগরীর লোকসংখ্যা ৭ লাখ ৯১ হাজার ২৯৭ জন। পুরুষ ১১ লাখ ৭৫ হাজার ৮৮৬ ও মহিলা ১১ লাখ ৪২ হাজার ৮৪১ জন। তবে সিটি কর্পোরেশনের হিসাবে খুলনা মহানগরীর লোকসংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। বর্তমান জেলায় জনসংখ্যা ৩৫ লাখ৪৫ হাজার। ১৮৩৬ সালে খুলনা যশোর জেলার একটি থানা ছিল। ওই সময় থানার নাম ছিল নয়াবাদ। ১৮৪২ সালে ভৈরব নদীর ওপার থেকে বর্তমান স্থানে মহকুমা স্থানান্তর করা হয়। ১৮৮২ সালে জেলা স্থাপিত হয়।খুলনা জেলায় নয়টি উপজেলা ও ১৪টি থানা রয়েছে। জেলা সদরের সাথে থানাগুলোর যোগাযোগ এখন অনেকটাই সহজ। তবে সুন্দরবন সংলগ্ন দাকোপ ও কয়রা উপজেলা এখনো সড়ক যোগাযোগে অন্য উপজেলাগুলো থেকে পিছিয়ে আছে। কয়রা উপজেলা : কয়রা উপজেলা খুলনা জেলার সর্বদক্ষিণে অবস্থিত, এই উপজেলার দক্ষিণে সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগর উত্তরে পাইকগাছা উপজেলা, পূর্বদিকে শিবসা নদী ও দাকোপ উপজেলা এবং পশ্চিমে কপোতাক্ষ নদ ও সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলা। এই উপজেলার আয়তন ২ হাজার ৭৫ দশমিক ৯২ বর্গ কিলোমিটার। তন্মধ্যে সুন্দরবন এলাকা ১ হাজার ৮১২ দশমিক ৬৬ বর্গ কিলোমিটার এবং লোকালয় ২৬৩.২৬ বর্গ কিলোমিটার। কয়রা উপজেলার অন্যতম খরস্রোতা নদী-কয়রা। সম্ভবতঃ কয়রা নদীর নামানুসারেই এই উপজেলার নাম হয়েছে কয়রা। এই উপজেলার সদর ইউনিয়নের নামও কয়রা। সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা উপজেলায় ৭টি ইউনিয়ন, ১৩০টি গ্রাম ও ৭২টি মৌজা রয়েছে। এ উপজেলার ইউনিয়ন ৭টি হলো, আমাদী, বাগালী, মহেশ্বরীপুর, মহারাজপুর, কয়রা, উত্তর বেদকাশী ও দক্ষিণ বেদকাশী। কয়রা উপজেলা এক সময় পাইকগাছা থানার অংশ ছিল। ১৯৭৪ সালে পাইকগাছা থানাকে বিভক্ত করে আলাদাভাবে কয়রা থানা করা হয়। ১৯৮০ সালে কয়রা থানা পূর্ণাঙ্গ রূপলাভ করে। এ উপজেলার বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার ৫২০ জন। পুরুষ ৯৫ হাজার ৯৮০ জন এবং মহিলা ৯৬ হাজার ৫৪০ জন। এ উপজেলায় কলেজের সংখ্যা ৩টি। এরমধ্যে ১টি মহিলা কলেজ। হাইস্কুল ৩৬টি। তন্মধ্যে ৪টি বালিকা বিদ্যালয়। এছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৪টি, রেজিস্ট্রী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৭টি, মাদরাসা ২৫টি এবং মহিলা মাদরাসা ৪টি, এবতেদায়ী মাদরাসা ১৮টি। উপজেলার শিক্ষার হার ৩৮.১০ ভাগ। কয়রা উপজেলার সাথে জেলা সদরের পাকা সড়ক যোগাযোগ আছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ভাল না থাকায় বর্ষাকালে অবস্থা সবচেয়ে খারাপ ছিলো। কয়রা উপজেলার মোট রাস্তা ২৪৩ কিলোমিটার, তন্মধ্যে পাকা সড়ক মাত্র ২১ কিলোমিটার, আধা পাকা ৮০ কিলোমিটার এবং কাঁচা রাস্তা ১৪২ কিলোমিটার। পাইকগাছা হয়ে খুলনা সদরের সাথে যোগাযোগের জন্য শিবসা নদীতে ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে। কয়রার সাথে খুলনা জেলা সদরে লঞ্চ যোগাযোগ বিদ্যমান। স্বাস্থ্য সেবার অবস্থা বেশ খারাপ। উপজেলার জায়গীরমহল গ্রামে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অবস্থিত। এই উপজেলায় ১৫৭টি মসজিদ, ১৭১টি মন্দির আছে। হিন্দু, মুসলিম ও অল্প কিছু সংখ্যক উপজাতি এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সাথে বসবাস করেন। কয়রা উপজেলায় ৪টি ব্যাংকের শাখা আছে। ৪টি বীমা কোম্পানির শাখা, ৩৩টি হাট-বাজার, ৪৫টি ক্লাব আছে।কয়রা উপজেলার অধিকাংশ লোকজন কৃষিজীবী, সুন্দরবনে কাঠ ও গোলপাতা কেটে, মধু, মাছ, জোংড়া ইত্যাদি সংগ্রহ করে জীবিকা অর্জন করে। এখানে নদীর লোনা পানি তুলে চিংড়ি চাষ হয়। কয়রা উপজেলায় ২ হাজার ৯৪৬টি চিংড়ি ঘের আছে। কয়রা উপজেলা জেলার সর্বদক্ষিণে অবস্থিত হওয়ায় এখানে নানাবিধ সমস্যা বিদ্যমান, বিদ্যুতের সমস্যা, বেকারত্ব চরম, আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি এখানে লেগেই থাকে। সুন্দরবন রক্ষা করা, সুন্দরবনের পশু পাখী গাছ রক্ষা করা আবশ্যক, নদীর মাছ রক্ষা দরকার, হাটবাজারের সংস্কার আশু প্রয়োজন। পানীয় জলের সমস্যা অত্যন্ত প্রকট। বিশেষ করে চৈত্র-বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে খাবার পানির অভাবে মানুষের ভোগান্তির সীমা থাকে না।