মুঘল শাসনামল
সিরাজুল ইসলাম প্রতিনিধি ॥ পাঠান রাজত্বের পর বিখ্যাত মোঘল রাজবংশ এ উপমহাদেশের বিশাল অঞ্চল জুড়ে তাদের স্মরণীয় শাসনকালের সূচনা করে। এ সময় সুবিখ্যাত মোঘল সম্রাট আকবর (১৫৫৬-১৬০৫) প্রথম এ অঞ্চলে ফৌজদার নিযুক্ত করে শাসন কার্য পরিচালনা করেন। বার ভূঁইয়াদের অন্যতম রাজা প্রতাপাদিত্য এ সময় এ জেলা শাসন করতেন। যশোরের প্রথম ফৌজদার ছিলেন ইনায়েত খাঁ। এরপর সরফরাজ খাঁ, নুরম্নল্লাখাঁ পর্যায়ক্রমে যশোর এর ফৌজদার নিযুক্ত হয়ে আসেন। নবাবী শাসনামলে বাংলার নবাব মুর্শিদকুলী খাঁ (১৭০৩-১৭২৬) এর শাসনামলে সীতারাম রায় নামক একজন স্থানীয় রাজা কর্তৃক যশোর জেলা শাসিত হত। সীতারাম ছিলেন উত্তর রাঢ় বংশীয় কায়সত্ম। তার পিতা উদয় নারায়ণ ভূষণার ফৌজদারের অধীনে একজন তহশিলদার ছিলেন। রাজা সীতারাম রায়ের রাজধানী ছিল মহম্মদপুর। রাজা সীতারাম রায় মুর্শিদকুলী খাঁ কে অমান্য করলে নবাব তার বিরম্নদ্ধে সৈন্য প্রেরণ করেন। যুদ্ধে সীতারাম পরাজিত হন। সীতারামের পতনের পর যশোর জেলা কয়েকটি জমিদারীতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। নাটোর এর জমিদার জেলার পূর্বাংশ, চাঁচড়ার জমিদার জেলার দক্ষিণাংশ এবং নলডাঙ্গার জমিদার জেলার উত্তরাংশ তাদের জমিদারির অমত্মর্ভুক্ত করে নেয়। ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে গৌড়ের শাসনকর্তা দাউদের একজন বিশ্বসত্ম সহযোগী শ্রীহরি ১৫৭৪ সালে যশোর এর স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং স্বাধীন যশোর রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। ইতিহাসে এই শ্রীহরিই মহারাজ বিক্রমাদিত্য নামে পরিচিত। বিক্রমাদিত্য গৌড়ের রাজা দাউদ কর্তৃক প্রদত্ত উপাধি। বিক্রমাদিত্যের রাজধানী ছিল ঈশ্বরপুর এবং ত্রেকাটিয়াতে। ১৫৮৩ খ্রীস্টাব্দে বিক্রমাদিত্য মৃত্যুবরণ করেন। বিক্রমাদিত্যের শাসনকালে তার বিশ্বসত্ম সহযোগী ও জ্ঞাতি ভ্রাতা বসমত্মরায়ই যশোরের প্রকৃত শাসক ছিলেন। গৌড় থেকে নিয়ে আসা অঢেল ধন-সম্পদ দ্বারা বসমত্মরায় যশোরকে ঐশ্বর্যমন্ডিত করে গড়ে তোলেন। বিক্রমাদিত্যের মৃত্যুর কয়েক বছর পর ১৫৮৭ খ্রিস্টাব্দে তার পুত্র প্রতাপাদিত্যকে বসমত্মরায় যশোরের রাজা বলে ঘোষণা করেন। প্রতাপাদিত্যের প্রকৃত নাম ছিল গোপীনাথ। ১৫৬০ খ্রিস্টাব্দে তিনি গৌড়ে জন্মগ্রহণ করেন। প্রতাপাদিত্য ছিল তার প্রাপ্ত উপাধি। সুন্দরবন অঞ্চলের ধুমঘাট ছিল তার রাজধানী। ১৪০০ খ্রিস্টাব্দে দিল্লীর সম্রাট নাসির শাহ অথবা মাসুদ শাহ খাজা জাহান বা খাঁন জাহান আলী নামক একজন সুফি দরবেশকে বঙ্গদেশে প্রেরণ করেছিলেন। খাজা জাহান বা খাঁন জাহান আলী সম্রাট মামুদ শাহ কর্তৃক প্রদত্ত উপাধি। তাঁর প্রকৃত নাম উলুখ খাঁন। বঙ্গদেশে এসে খাঁন জাহান আলী যশোর অঞ্চলে ইসলাম প্রচারে নিজেকে নিয়োজিত করেন। পরবর্তীকালে তিনি একজন বিখ্যাত ইসলামী সাধক ও ধর্ম প্রচারক হিসেবে প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেন। যশোরের পয়গ্রাম কসবা খাঁন জাহান আলীর রাজধানী ছিল।