সিরাজুল ইসলাম খুলনা থেকে ॥ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলার ক্ষমতা দখল করে। লর্ড কাইভ ঐতিহাসিক পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজ উদ-দৌলাকে (১৭৫৬-১৭৫৭) পরাজিত করলে উপমহাদেশের স্বাধীনতার সূর্য অসত্মমিত হয়। শুরু হয় ইংরেজ রাজত্ব। চলে বর্ণ বৈষম্যবাদী শাসন। কোম্পানী ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের নিকট থেকে বাংলার দেওয়ানী লাভ করে। ফলে যশোর জেলা কোম্পানীর রাজস্ব প্রশাসনের অধীনে চলে যায়। প্রায় দুইশত বৎসর ইংরেজগণ উপমহাদেশে তাদের শোষণ ও নির্যাতনের শাসনকাল অব্যাহত রাখে। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে ঐতিহাসিক সিপাহী বিদ্রোহ থেকে শুরম্ন করে পরবর্তী কালের নীল বিদ্রোহ, কৃষক সংগ্রাম ও স্বদেশী আন্দোলনসহ অসংখ্য বিপ্লব একের পর এক ইংরেজদের বিরম্নদ্ধে সংঘটিত হতে থাকে।
অতপর ১৯৪৭ সালে ইংরেজরা এদেশ থেকে বিতাড়িত হয়। ইংরেজরা উপমহাদেশ থেকে বিতাড়িত হবার আগে এদেশে তাদের কৌশলের বীজ বুনে যায়। ফলে সৃষ্টি হয় দেশ বিভাগের। উপমহাদেশে জন্মলাভ করে দু’টি দেশ- ভারত ও পাকিসত্মান। যশোরকে তদানিমত্মন পূর্ব পাকিস্তানের অমত্মর্ভুক্ত করা হয়। পাকিসস্তান রাষ্ট্রের দু’টি অংশ ছিল- পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ ও পশ্চিম পাকিস্তান)। পশ্চিম পাকিস্তানীরা দীর্ঘ দুই যুগ এ অঞ্চলকে তাদের উপনিবেশ হিসেবে ব্যবহার করে এবং আগ্রাসী রাজত্বের নজিরবিহীন শোষণ ও অপশাসন চালিয়ে যায়। ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের ফলে অবিভক্ত বাংলার পূর্বাঞ্চলকে করা হয় পাকিসত্মানের অংশ এবং পশ্চিমাঞ্চলকে করা হয় ভারতের। এর মধ্যে সীমানারেখা নির্ধারণের ফলে যশোর জেলার ভৌগোলিক অবস্থানের পরিবর্তন সাধিত হয়। এসময় যশোরের বনগ্রাম মহকুমাকে পুনরায় ভারতের সাথে সংযুক্ত করা হয়। ১৯৭১ সালে, বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদ ও স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালিরা সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন করে। তাই ১৫৭৪ খ্রিঃ থেকে ১৯৮৪ খ্রিঃ পর্যমত্ম অব্যাহতভাবে চলতে থাকে যশোর এর গঠন ও পুনর্বিন্যাস প্রক্রিয়া। ১৯৬০ সালে জেলার মাগুরা মহুকুমার মহম্মদপুর থানার অংশ এবং নড়াইলের আলফাডাংগা থানাকে ফরিদপুর জেলার সাথে যুক্ত করা হয়। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রশাসনিক উন্নয়নকল্পে আজকের যশোরকে ভেঙ্গে পুনর্গঠন করেছে। ফলে জেলার চার মহকুমা নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদহ এবং সদর স্বতন্ত্র চারটি জেলায় রূপামত্মরিত হয়েছে।