সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:০৫ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
শুল্কমুক্ত সুবিধায় হাজার হাজার টন চাল আমদানিতেও বাজারে প্রভাব পড়েনি বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ শীতজনিত রোগীর চাপ রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি হাসপাতালে বাড়ছে সাতক্ষীরা পৌর—মেয়রের বরখাস্তের আদেশ অবৈধ: হাইকোর্ট স্কুল থেকে ফেরার পথে ট্রেনে কাটা পড়ে শিশুর মৃত্যু সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জে দুই পক্ষের সংঘর্ষে বিএনপি নেতা নিহত মোবাইল—ইন্টারনেটে কর প্রত্যাহার না হলে এনবিআর ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি ভারত থেকে এলো ২৭ হাজার মেট্রিক টন চাল টিউলিপের উচিত ক্ষমা চাওয়া: ইউনূস বিজিবি—জনগণ ‘শক্ত অবস্থান’ নেওয়ায় ভারত পিছু হটেছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

খুলনা বিভাগের ইতিহাস ঐতিহ্য

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৩

হারিয়ে যাচ্ছে খানজাহান আলী দিঘির কুমির
খুলনা প্রতিনিধি ॥ বাগেরহাটের ঐতিহাসিক খানজাহান আলী মাজারে দীঘির বিলুপ্তপ্রায় মিঠা পানির কুমির। প্রতি বছর কুমির ডিম দিলেও বাচ্চা না ফোটায় উদ্বিগ্ন দর্শনার্থী ও মাজার সংশ্লিষ্টরা। ঐতিহ্য ধরে রাখতে মিঠাপানির কুমির রক্ষায় কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি তাদের। তবে বয়সের কারণে প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় দীঘিতে নতুন করে স্ত্রী ও পুরুষ প্রজাতির দুটি কুমির আনা হলে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো সম্ভব বলে জানান বন বিভাগের কুমির প্রজনন কেন্দ্রের কর্মকর্তা। খানজাহান আলী (রহ) এর মাজারের প্রধান খাদেম ফকির শের আলী বলেন, প্রায় মাস খানেক আগে কুমিরটি দীঘির পূর্বপাড়ের বিনা ফকিরের বাড়ির পাশে ডিম পেড়েছে। কয়েক দিন আগে আমাদের চোখে পড়েছে। এই নিয়ে অনেকবার এই মা কুমিরটি দীঘিতে ডিম পেড়েছে। কিন্তু বাচ্চা হয়নি। এভাবে বাচ্চা না হলে কুমিরের বংশ বৃদ্ধি হবে না। মাজারের দীঘি থেকে মিঠাপানির কুমির হারিয়ে যাবে। যার ফলে মাজারের ঐতিহ্য ধরে রাখা সম্ভব হবে না বলে জানান তিনি।
ডিম দিলেও বাচ্চা না ফোটার কারণ অনুসন্ধানে কাজ করেছে বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও করমজল বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্রের কর্মকর্তারা। তাদের ধারণা, বয়সের কারণে প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় মাজারের কুমিরের ডিমে বাচ্চা ফুটছে না। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, বয়সের কারণে প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় দীঘিতে থাকা মিঠাপানির কুমির দুটি বারবার ডিম দিলেও কোনো বাচ্চা হচ্ছে না। এছাড়াও এখানে থাকা কুমিরদের খাবারের বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ নেই। মাজারে আসা ভক্ত ও দর্শনার্থীরা খাবার হিসেবে যে যার মতো চর্বিযুক্ত মাংস দেয়। যার ফলে কুমির দুটোর পেটে অতিরিক্ত চর্বি জমে গেছে। বাচ্চা না ফোটার এটাও অনেক বড় কারণ। তবে নতুন করে অল্প বয়সী দুটি স্ত্রী ও পুরুষ কুমির দীঘিতে ছাড়তে পারলে বাচ্চা ফোটানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
সুলতানী শাসন আমলে খ্রিস্টীয় ১৪ শতকের প্রথম দিকে হযরত খান জাহান আলী (রহ.) বাগেরহাটে ‘খলিফতাবাদনগর’ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। এ সময় তিনি ৩৬০টি দীঘি খনন করেন। এর মধ্যে সব থেকে বড় ঠাকুরদীঘি। স্থানীয়দের ধারণা, এই দীঘির আয়তন ৩৬০ একর। যে দীঘির পাড়ে তার সমাধির রয়েছে। এই দীঘিতে তিনি দুটি মিঠাপানির প্রজাতির কুমির এনেছিলেন। যাদের নামছিল ‘কালাপাহাড়’ ও ‘ধলাপাহাড়’। খানজাহান (রহ) এর মৃত্যুর পর মাজারের খাদেম ও ভক্তরা ওই কুমির দুটিকে নিয়মিত খাবার দিতেন। দীর্ঘদিন পর্যন্ত ওই কুমির যুগলের বংশ ধরেরা এখানে বসবাস করে আসছিল। কিন্তু বিভিন্ন সময় এই দীঘির কুমির মারা যাওয়ার পরে মাত্র দুটি কুমির ছিল।
এরই মাঝে মাজারের দীঘিতে মিঠাপানির কুমিরের বংশবিস্তারের জন্য ২০০৫ সালে ভারতের মাদ্রাজ থেকে ছয়টি কুমির এনে এখানে ছাড়া হয়। মাদ্রাজি কুমির হিংস্র প্রকৃতির ছিল। তাদের মারামারির কারণে হযরত খানজাহান (রহ) এর আমলের একটি কুমির অসুস্থ হয়ে পড়ে। ২০০৬ সালে কুমিরটি মারা যায়। সর্বশেষ ২০১৫ সালে অবশিষ্ট একটি কুমিরের মৃত্যু হয়। এর মধ্য দিয়ে খানজাহান আলী (রহ) এর আমলের কুমির যুগের সমাপ্তি ঘটে। এই সময়ে মাদ্রাজ থেকে আনা ৬টি কুমিরের চারটি কুমির মারা যায়। বর্তমানে দীঘিতে দুটি কুমির রয়েছে।

হযরত খাজা খানজাহান আলীর দিঘির কুমির।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com