সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:৫৭ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
শুল্কমুক্ত সুবিধায় হাজার হাজার টন চাল আমদানিতেও বাজারে প্রভাব পড়েনি বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ শীতজনিত রোগীর চাপ রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি হাসপাতালে বাড়ছে সাতক্ষীরা পৌর—মেয়রের বরখাস্তের আদেশ অবৈধ: হাইকোর্ট স্কুল থেকে ফেরার পথে ট্রেনে কাটা পড়ে শিশুর মৃত্যু সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জে দুই পক্ষের সংঘর্ষে বিএনপি নেতা নিহত মোবাইল—ইন্টারনেটে কর প্রত্যাহার না হলে এনবিআর ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি ভারত থেকে এলো ২৭ হাজার মেট্রিক টন চাল টিউলিপের উচিত ক্ষমা চাওয়া: ইউনূস বিজিবি—জনগণ ‘শক্ত অবস্থান’ নেওয়ায় ভারত পিছু হটেছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

খুলনা বিভাগের ইতিহাস ঐতিহ্য (২৪)

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৩

খুলনা প্রতিনিধি ॥ বাংলাদেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক অঙ্গনের স্বনামধন্য অনেক ব্যক্তি এ জেলায় জন্মগ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেনঃ ০১ ফকির লালন শাহ্ বাউল সম্রাট লালন শাহ্ এর জন্ম বৃত্তান্ত নিয়ে যথেষ্ট মতান্তর রয়েছে। তার জাতি ধর্ম বিষয়েও সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যায় না। প্রবাদ আছে যে তার জন্ম হিন্দু কায়স্থ পরিবারে। কোন এক সময় তিনি এক বাউল দলের সঙ্গী হয়ে গঙ্গাস্নানে যান। পথিমধ্যে বসন্ত রোগে আক্রান্ত হলে সঙ্গীরা তাকে নদীর তীরে ফেলে যান। সিরাজ শাহ নামক এক মুসলমান বাউল তাকে কুড়িয়ে সেবা করে সুস্থ করে তোলেন। সিরাজ শাহর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে তিনি মরমি সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন। সিরাজ শাহর মৃত্যু হলে তিনি কুষ্টিয়ার ছেউঁড়িয়ায় আখড়া স্থাপন করে সেখানে তাঁর প্রতিভার বিকাশ ঘটান। নিজ সাধনায় তিনি হিন্দু-মুসলমান শাস্ত্র সর্ম্পকে বিশেষ বুৎপত্তি অর্জন করে বাউল সঙ্গীতে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেন। তাঁর গান আধ্যাত্মিক, মরমি ও শিল্পগুণে সমৃদ্ধ। তাঁর রচিত গানের সংখ্যা সহস্রাধিক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সর্বপ্রথম লালনের ২৯৮টি গান সংগ্রহ করে ২০টি গান তৎকালীন ‘‘প্রবাসী’’ প্রত্রিকায় প্রকাশ করেন। তাঁর খাচার ভিতর অচিন পাখী, বাড়ির পাশে আরশি নগর, মিলন হবে কত দিনে আমার মনের মানুষের সনে, আমার ঘরখানায় কে বিরাজ করে ইত্যাদি গান বাউলতত্ত্ব বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। ১২৯৭ বঙ্গাব্দের ১ কার্তিক ছেউঁড়িয়ায় তিনি দেহত্যাগ করেন। ০২ মোহিনী মোহন কুমারখালী এলঙ্গী গ্রামে জন্ম। ১৯০৮ সালে পূর্ববঙ্গের প্রাচীনতম কাপড়ের মিল মোহিনী মিলস্ এর প্রতিষ্ঠাতাচীনতম কাপড়ের মিল মোহিনী মিলস্ এর প্রতিষ্ঠাতা। ০৩ কাঙাল হরিনাথ মজুমদার কুমারখালীর কুন্ডুপাড়া গ্রামে জন্ম। তিনি সমাজবিপ্লবী-সাময়িক পত্রসেবী হিসেবে পরিচিত। তার পরিচালিত গ্রামবার্তা প্রকাশিকা (১৮৬৩-৮৫) সমকালে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে ব্রহ্মান্ড দেব, ফিকির চাঁদের গীতাবলী, বিজয় বসন্ত উল্লেখযোগ্য। তার প্রতিষ্ঠিত এম এন (মথুরানাথ এর নামে) প্রেসে মীর মশাররফ হোসেনের বিষাদ সিন্ধু গ্রন্থটি ছাপানো হয়। গ্রামবার্তা পত্রিকাটিও এখান থেকে প্রকাশিত হতো। প্রেসটির ধ্বংসাবশেষ এখনো পর্যটকদের আকর্ষণ করে। ০৪ ,রাধা বিনোদ পাল ১৮৯৬ সালে দৌলতপুর উপজেলার সেলিমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। এছাড়া তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আন্তর্জাতিক সামরিক আদালতের প্রধান বিচারক হিসেবে বিচার কার্য পরিচালনা করেছিলেন। অন্যান্য দেশের বিচারকরা যখন জাপানকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে, তিনি তখন জাপানকে যুদ্ধাপরাধের দায় থেকে নির্দোষ প্রমাণ করে আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেন। জাপানে কিয়োটো শহরে তার নামে একটি যাদুঘর ও রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে। ০৫ প্যারী সুন্দরী বর্তমান মিরপুর উপজেলার সদরপুরের মহিলা জমিদার ছিলেন। তিনি কুষ্টিয়া অঞ্চলের নীল বিদ্রোহের নেত্রী ছিলেন। ১৮৬০ সালে বাংলাদেশে যে নীল বিদ্রোহ দেখা দেয় তা প্রকৃতপক্ষে কুষ্টিয়ায় শুরু হয়। কুষ্টিয়ার শালঘর মধুয়ার কুখ্যাত নীলকর টি. আই কেনির সঙ্গে আমলা সদরপুরের মহিলা জমিদার প্যারীসুন্দরীর লড়াইকে কেন্দ্র করে এ বিদ্রোহ প্রবল আকার ধারণ করে। শালঘর মধুয়ায় ছাউনী করে প্যারীসুন্দরীর নেতৃত্বে কৃষকরা জে. জি মরিসের দলকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়। তিনি শালঘর মধুয়ার নীলকুঠি কয়েকবার আক্রমণ করেছিলেন। ০৬ মীর মশাররফ হোসেন ১৮৪৭ সালে কুমারখালীর লাহিনী পাড়ায় জন্ম। তার পিতা ছিলেন জমিদার মীর মোয়াজ্জেম হোসেন ও মাতা ছিলেন দৌলতন নেছা। বাঙালী মুসলমানদের মধ্যে তিনিই প্রথম একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন যার নাম ছিল ‘‘আজিজুননেহার’’ (১৮৭৪-৭৬)। তার আরেকটি উল্লেখযোগ্য পত্রিকা ছিল ‘হিতকরী’’। তিনি অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেন এবং এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিষাদসিন্ধু, জমিদার দর্পণ, উদাসীন পথিকের মনের কথা, গাজী মিয়ার বস্তানী, রত্নবতী, বসন্ত কুমারী, গোজীবন, আমার জীবনী, সংগীত লহরী ইত্যাদী। তাঁর স্মৃতিধন্য বাস্ত্তভিটায় তোরণ, কিছু ফলক, বিদ্যালয় ও লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ০৭ বাঘা যতীন যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (বাঘা যতীন) (৭ ডিসেম্বর, ১৮৭৯ – ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯১৫) ছিলেন একজন বাঙালি ব্রিটিশ-বিরোধী বিপ্লবী নেতা। বাঘা যতীনের জন্ম হয় কুষ্টিয়া জেলার কয়া গ্রামে। তাঁর পিতার নাম উমেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় এবং মাতার নাম শরৎশশী। যতীন শৈশব থেকেই শারীরিক শক্তির জন্য বিখ্যাত ছিলেন। শুধুমাত্র একটি ছোরা নিয়ে তিনি একাই একটি বাঘকে হত্যা করতে সক্ষম হন বলে তাঁর নাম রটে যায় বাঘা যতীন। এছাড়া শাহ্ আজিজুর রহমান, প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী, সংগীত বিশারদ আব্দুল জববার, ফরিদা পারভীন, কবি আজিজুর রহমান, আকবর হোসেন, রোকনুজ্জামান ওরফে দাদা ভাই, মাহমুদা খানম সিদ্দিকা, মন্মনাথ মুখোপাধ্যায় সহ আরও নাম না জানা অনেক গুণী ব্যক্তি এ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com