মাগুরা জেলা
খুলনা প্রতিনিধি ॥ মাগুরা একটি ওরুত্বপূর্ণ জেলা। ইতিহাস, ঐতিহা শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা সংস্কৃতি, সংগ্রাম, আন্দোলন, রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ প্রভৃতিতে জাতীয় গৌরবের প্রেক্ষাপটে বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে মাগুরা জেলা। মাগুরায় মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৪৫ সালে। মাওরা জেলার আয়তন ১.০৪৮.৬১ বর্গ কিঃ মিঃ (৪০৪.৮৭ বর্গ মাইল। ২৩০-২৯ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯০-২৬ পুর্ব দ্রাঘিমাংশের ভূভাগই মাগুরা। সীমানা: উত্তর পূর্বে রাজবাড়ী জেলা, দক্ক্ষিণে যশোর ও নড়াইল জেলা এবং পশ্চিমে ঝিনাইদহ জেলা। ইউনিয়ন ও গ্রাম: মাগুরা জেলায় ৩৬টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা এবং ৭১৯টি গ্রাম রয়েছে। থানা: জেলায় থানার সংখ্যা মােট ৪টি। এগুলাে হচ্ছে- মাগুরা সদর, মােহাম্মদপুর, শ্রীপুর ও শালিখা থানা। প্রধান নদনদী: নবগঙ্গা, মধুমতি, গড়াই, ফটকী, চিত্রা ও হানু নদী। মাগুরার নামকরণ: “খুলনা শহরের আদিপর্ব” গ্রন্থের লেখক ঐতিহাসিক আবুল কালাম শামসুদ্দিনের মতে, মরা গাঙ থেকে মাগুরা নামের উৎপত্তি। মরা গাঙকে আঞ্চলিক ভাষায় মরগা বলে। তিনি আরাে যুক্তি দেখিয়েছেন যে, মাগুরা অঞ্চল দিয়ে এক সময় মূল গঙ্গার প্রবাহ ছিল। নদী প্রবাহ ঘন ঘন পরিবর্তন ও বিবর্তনের কারণেই অনেক প্রবাহমান নদী উত্তরা পালিবাহিত স্রোতের কারণে চরা ভূমিতে পরিণত হয়ে দূরে সরে যায়। আবার চরাভূমিতে যখন বসতি গড়ে ওঠে তখন হয়তাে দূরের নদীর প্রবাহ ক্রমান্বয়ে চরাভূমিতে স্পর্শ করে আসল জায়গা দখল করে নেয়। নদীর গতিপথ পরিবর্তন সম্পর্কে মিঃ ফারগুসন বলেছেন “নদী তার গতি পথে তীর ভূমির উচ্চতা বৃদ্ধি করে নিম্নভূমির মধ্য দিয়ে নতুন আবিষ্কারের চেষ্টা করতে থাকে। নিম্ন উচ্চতর করা নদীর ধর্ম” মাগুরার ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটেছিল বলে মনে করা হয়। আবার অনেকে মনে করেন, মাগুরার নবগঙ্গা নদী এক সময় মগ জলদস্যুদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল। ইতিহাসে থেকে জানাযায় আছে, ধর্মদাস নামের জনৈক মগ সুদুর আরাকান থেকে এসে আজকের মাগুরার পাশ্ববর্তী মধুমতি নদীর ধারে খুলুমবাড়ী মৌজা সহ সংলগ্ন এলাকা দখল করে। তাকে মগ জায়গীর বলে আখ্যায়িত করা হয়। ঐ সময় মগদের অত্যাচারে লােকজন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। পরে মগরা বিতাড়িত হয়। গড়ে ওঠে বসতি। সেই মগ এবং মগরা থেকে মাগুরা” নামের উৎপত্তি। আরো জনশ্রুতি আছে যে, মাগুরার খাল বিলে এককালে প্রচুর মাগুর মাছ পাওয়া যেত। সেই মাগুর মাছের প্রসিদ্ধি থেকে মাগুরা” নামকরণ হয়েছে। প্রাচীন মাগুরা: মাগুরা জেলা প্রাচীন বুড়োল দ্বীপের অধীন ছিল। এছাড়া মাগুরা এক সময় গঙ্গা দ্বীপের অধীনও ছিল। বিজয় সেনের আমলে মাগুরা বৌদ্ধ ধর্ম অধ্যুষিত ছিল। পাণ্ডু রাজত্ব মাগুরাসহ দক্ষিণে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় শতাব্দীতে কুমার নদের মোহনায় এবং মোহম্মদপুরের এ্যালাংখালীতে বন্দর ছিল। মাগুরা জেলায় প্রথম জনবসতি শুরু হয়েছিল কুমার নদের মোহনায়। আধুনিক আমল: মোঘল সাম্রাজ্যোর শেষ আর ইংরেজ রাজত্বের শুরু থেকে মাগুরার আধুনিক আমলের সূচনা বলে ধরা হয়। এ সময়েই সৃষ্টি হয়েছে মাগুরা শহর।