বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ০১:৩৯ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
শান্তি আলোচনার পর ইউক্রেনে বৃহত্তম ড্রোন হামলা চালালো রাশিয়া সিরিয়ায় পুনরায় কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে বিশ্বব্যাংক অপারেশন সিঁদুর নিয়ে মন্তব্য, ভারতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক গ্রেফতার সৌদি আরবে অবৈধদের ধরতে অভিযান, গ্রেফতার ১৫ হাজার হায়দরাবাদের চারমিনারের কাছে ভবনে আগুন, শিশুসহ নিহত ১৭ যে কারণে ব্যর্থ হলো ভারতের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ভারতের জন্য আকাশসীমা আরও এক মাস বন্ধ রাখবে পাকিস্তান: রিপোর্ট ইরানে শিয়া মাজারে হামলার ঘটনায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ—মধ্যাঞ্চলে ভয়াবহ টর্নেডোয় ২৭ জনের প্রাণহানি যে কারণে পেনাল্টি নেননি হালান্ড

খুলনা বিভাগের ইতিহাস ঐতিহ্য (৮)

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৩

প্রাচীন যশোর
খুলনা প্রতিনিধি ॥ ১৪৫৯ খ্রিঃ খাজা খানজাহান ( রহঃ) বৃহ্ত্তর যশোর- খুলনা অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করে। ১৭৮১ খ্রিঃ যোশোর জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমান যশোর জেলা প্রাচীনকালে বহু নদ-নদী দ্বারা বিভক্ত ছিল। নদী বিধৌত এ অঞ্চলে মাঝি ও জেলে সম্প্রদায়ের কিছু বিচ্ছিন্ন উপনিবেশ গড়ে উঠেছিল। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকে টলেমীর মানচিত্রে দেখা যায়, বঙ্গীয় ব-দ্বীপের দক্ষিণাঞ্চলের ভূ-ভাগ মূলত গঙ্গার দু’টি প্রধান শাখা পদ্মা ও ভাগীরথীর বাহিত পলি দ্বারা গঠিত হয়েছিল। মহাভারত, রঘুবংশ এবং অন্যান্য পুরাণের প্রাপ্ত বর্ণনায় দেখা যায়, বঙ্গীয় ব-দ্বীপের এই অংশটুকু প্রাচীনকালের দু’টি শক্তিশালী রাজ্যের মধ্যে অবস্থিত ছিল। সু-প্রাচীন এ রাজ্য দু’টি হল পশ্চিমবঙ্গের অমত্মর্গত সুহম বা রাধা এবং পূর্ববঙ্গের অমত্মর্গত বঙ্গ। সুহাম বা রাধা তাম্রলিপি নামেও পরিচিত ছিল। স্ব-স্ব শাসকদের শক্তিমত্তা ও ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে মূলত রাজ্য দু’টির সীমানা নির্ধারিত হয়েছিল। এই প্রক্রিয়ায় খ্রিস্টীয় ৫ম শতকে বর্তমান যশোর জেলা বঙ্গ রাজ্যের শাসনাধীনে আসে। টলেমীর বর্ণনায় দেখা যায় যে, খ্রিস্টীয় প্রথম ও দ্বিতীয় শতকে বর্তমান যশোর জেলাসহ বঙ্গীয় ব-দ্বীপের সম্পূর্ণ অংশ নিয়ে একটি শক্তিশালী রাজ্য গঠিত হয়েছিল। এ রাজ্যের রাজধানী স্থাপিত হয়েছিল ‘গঙ্গা’ নামক স্থানে। তৎকালীন সময়ে ‘গঙ্গা’ ছিল একটি বিখ্যাত রাজার নগরী। এ নগরীটি বিখ্যাত গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত ছিল। টলেমীর বর্ণনানুযায়ী রাজধানী শহরটি তাম্রলিপির দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে অবস্থিত ছিল। ঐ সময়ের ইতিহাস বেশ অস্পষ্টতার ধূম্রজালে জড়ানো থাকায় যশোরের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা দূরহ ব্যাপার। ১ খ্রিস্টীয় ৪র্থ শতকের শুরম্নর দিকে বঙ্গদেশে বেশ কিছু স্বাধীন রাজ্য বিসত্মারলাভ করেছিল। কিন্তু ভারতবর্ষের উত্তরাংশে গুপ্ত সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তনের সাথে সাথে এ সমসত্ম রাজ্যসমূহের স্বাধীন সত্তার বিলুপ্তি ঘটে। এলাহাবাদে প্রাপ্ত (সত্মম্ভ) শিলালিপি থেকে দেখা যায় রাজা সমুদ্রগুপ্ত (৩৪০-৩৮০ খ্রিঃ) বঙ্গদেশের পশ্চিম এবং উত্তরাঞ্চল গুপ্ত সাম্রাজ্যের অমত্মর্ভুক্ত করেন। এমনকি সমতটের (পূর্ববঙ্গ) শাসনকর্তাও গুপ্ত সম্রাটের সার্বভৌম কর্তৃত্বকে স্বীকার করে নিয়েছিলেন। এভাবে যশোর জেলাটি গুপ্ত শাসকবর্গের অধীনে আসে এবং খুব সম্ভবত খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতকের মাঝামাঝি সময় পর্যমত্ম তাদের দ্বারাই শাসিত হয়। খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতকের মাঝামাঝি সময়ে গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। এ সময় ভারতবর্ষের উত্তরাংশে বেশ কিছু সংখ্যক স্বাধীন রাজ্যের জন্ম হয়। বঙ্গদেশেও দু’টি স্বাধীন রাজ্যের উদ্ভব ঘটে। প্রথমটি ছিল বঙ্গ বা সমতট এবং দ্বিতীয়টি ছিল গৌড় । উত্তর ও পূর্ববঙ্গ এবং পশ্চিবঙ্গের একটি অংশ ও তৎকালীন বঙ্গ তথা সমতট রাজ্যের অমত্মর্ভুক্ত হয়। এই ধারাবাহিকতায় বর্তমান যশোর জেলা বঙ্গ রাজ্যের অধীনে আসে। ফরিদপুর জেলার নিকটবর্তী কোটালিপাড়া থেকে আবিষ্কৃত পাঁচটি এবং বর্ধমান (ভারতে অবস্থিত) জেলা থেকে আবিষ্কৃত অপর একটি শিলালিপি থেকে এই রাজ্যেও তিনজন শাসনকর্তা সম্পর্কে জানা যায়। তারা হলেন গোপচন্দ্র, ধর্মাদিত্য এবং শ্যামচার দেব। তাদের নামের আগে যুক্ত ‘মহারাজা’ পদবি প্রমাণ করে যে তারা প্রত্যেকেই ছিলেন স্বাধীন এবং ক্ষমতাধর নৃপতি। কিন্তু এ তিনজন রাজার পারস্পারিক সম্পর্ক এবং তাদের উত্তরাধিকারের ক্রম সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষ করে সাভার (ঢাকা জেলা) এবং (ফরিদপুর জেলা) থেকে বিপুল সংখ্যক স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া যায়। এসব স্বর্ণমুদ্রা থেকে ধারণা করা যায় যে, শ্যামচার দেবের পরেও এ অঞ্চলে বেশ কয়েকজন রাজার অসিত্মত্ব ছিল। এ সমসত্ম রাজাগণ সম্ভবত বঙ্গ শাসন করতেন। তারা শ্যামচার দেবের প্রতিষ্ঠিত রাজ্যের শেষ সময়কার রাজা ছিলেন। ইতিহাসে তাদের সম্পর্কে স্পষ্ট এবং বিসত্মারিত ধারণা পাওয়া যায় নি। তবে এই রাজাগণের দ্বারা প্রদত্ত ছয়টি অনুদান থেকে প্রাদেশিক প্রশাসন সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া যায়। এগুলো প্রমাণ করে যে, বঙ্গদেশে একটি স্বাধীন, শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল সরকার ব্যবস্থা ছিল যা জনগণের জন্য শামিত্ম ও সমৃদ্ধি নিয়ে এসেছিল। খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতকের শেষ ভাগে চালুক্যের নৃপতি কীর্তিবর্মন (৫৬৭-৫৯৭ খ্রিঃ) বঙ্গ রাজ্য আক্রমণ করেন। মূলত কীর্তিবর্মনের আক্রমণের মধ্য দিয়েই শ্যামচারদেবের উত্তরাধিকারীদের শাসনের অবসান ঘটে। কীর্তিবর্মন বঙ্গ বিজয়েরও দাবি করেন। যদিও তার সফলতার প্রকৃতি এবং ব্যাপ্তি সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি তবুও একথা বলা যায় যে, তার আক্রমণের মধ্য দিয়েই ‘বঙ্গ’ রাজ্যের পতনের সূত্রপাত হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com