সিরাজুল ইসলাম খুলনা থেকে \ ‘আজ বন্ধ হয়, কাল চালু হয়। কখনো বন্ধ হয় শ্রমিকদের মজুরি ও পাওনাদারদের দেনা পরিশোধ করার অর্থ সংকটের কারণে। আবার কখনো বন্ধ হয় উত্পাদনের জন্য কাঁচামাল সংকটের কারণে। এভাবে চলতে চলতে ছয় বছর আগে সেই যে বন্ধ হলো আর চালু হলো না খুলনা হার্ডবোর্ড মিল। মরিচা পড়ে নষ্ট হচ্ছে মিলের যন্ত্রপাতি। সংস্কারের অভাবে স্থাপনাগুলো ভেঙে পড়ছে।’ খুলনা খালিশপুর এলাকায় ভৈরব নদীর তীরে দেশের একমাত্র হার্ডবোর্ড সরকারি মিল স্থাপন করেন ততকালীন পূর্ব পাকিস্তান শিল্প উন্নয়ন সংস্থা। (ইপিআইডিসি’র) সময় ১৯৬৫ সালে কারখানাটি কানাডীয় সরকারি সাহায্য সংস্থার সহায়তায় স্থাপিত হয়। কারখানার প্রধান কাঁচামাল উৎপাদিত কাঁচা সুন্দরী জ্বালানি কাঠ। ৯০ দশক পযন্ত মিলটি লাভ জনক অবস্থানে ছিলো পরে আস্তে আস্তে লোকসানের দিকে অগ্রসর হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আর্থিক সংকটের কারণ দেখিয়ে ২০০২ সালের ১৫ ডিসেম্বর মিলটি বন্ধ করে দেয় বিসিআইসি। এতে বেকার হয়ে পড়েন প্রায় ১ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক। ২০০৫ সালের ১৪ আগস্ট মিলটি পুনরায় চালু হলেও যান্ত্রিক ত্রুটি ও মূলধনের অভাবে কয়েক দফায় বন্ধ করে দেওয়া হয় পুরানো যন্ত্রপাতি নিয়ে উত্পাদনে যাওয়া এই মিল। পরে ২০১০ সালের ১৬ জুলাই অর্থনৈতিক সংকটের কারণে মিলটি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে চালু করা হলেও ২০১১ সালের ২১ এপ্রিল মূলধন সংকটের কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ২০১২ সালের নভেম্বরে সরকার বিসিআইসি মিলটি চালুর উদ্যোগ নেয়। প্রায় আট মাস সংস্কারের পর ২০১৩ সালের ১৫ আগস্ট মিলটি উত্পাদনে যায়। ঐ বছর ২৫ নভেম্বর অর্থসংকটে মিলটি আবার বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বহুবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও মিলটি আর চালু হয়নি। ২০১৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তত্কালীন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু মিল পরিদর্শনে যান। পরিদর্শন শেষে তিনি বলেছিলেন, বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়া গেলে মিলটি পুনরায় চালু করা সম্ভব হবে। কিন্তু সেই উদ্যোগ আর আলোর মুখ দেখেনি। সর্বশেষ বন্ধের সময়ে ২৪২ জন জনবলের বিপরীতে ২০৪ জন শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তা কর্মরত ছিলেন। তবে বর্তমানে মিলটি পাহারায় রয়েছে ১১ জন আনসার ও ৫ জন সিকিউরিটি। হার্ডবোর্ড মিলের সাবেক কর্মী জহিরুল ইসলাম বলেন, মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি জীবিকার তাগিদে ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন। তার মতো একই অবস্থা আরো অনেকেরই। তিনি জানান, স্ত্রী আর দুই ছেলেকে নিয়ে তিনি হার্ডবোর্ড মিলের কোয়ার্টারের জরাজীর্ণ ভবনে বসবাস করছেন। মিলের একসময়ের কর্মী আলিমুজ্জামান (৭০) বলেন, খুলনা হার্ডবোর্ড মিলটি একসময়ে বেশ কর্মচঞ্চল ছিল। ভোরে মিলের ভেপুর শব্দ শুনে ঘুম ভাঙত। খোরশেদ মিয়া নামের আরেকজন শ্রমিক বলেন, আমরা হার্ডবোর্ড মিল চালুর স্বপ্ন এখনো দেখি। মিলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আনসার সদস্য বলেন, মিলের বোর্ড তৈরির মেশিন, গোডাউন, ফিনিশিং কারখানা, চিপার মেশিন, বয়লারসহ মিলের প্রতিটি যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে গেছে। খুলনা হার্ডবোর্ড মিল বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মোলা ফরিদ আহমেদ বলেন, হার্ডবোর্ড মিলে প্রায় ২৫০ শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করতেন। বেকার হয়ে এরা অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। খুলনা হার্ডবোর্ড মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শ্যামলেন্দু দত্তের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি হার্ডবোর্ড মিলের ব্যাপারে কোনো প্রকার মন্তব্য করতে অস্বীকার করে।