দৃষ্টিপাত ডেস্ক ॥ তুমুল লড়াই চলছে গাজায় ইসরাইল কেবল গণহত্যা পরিচালনা করছে তা নয়, ইসরাইল হামাস যোদ্ধাদের দ্বারা ব্যাপক ভাবে হামলার শিকার হচ্ছে। প্রতিদিনই গাজায় ইসরাইল বাহিনী হামাস যোদ্ধাদের দ্বারা পাল্টা হামলায় বিপর্যস্থ হতে গত তিন দিনে সাইত্রিশ সেনা হারানোর পর এবার তারা গাজার গুজাইয়া জেলা হতে লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে। কাতার ভিত্তিক আল জাজিরা টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে ইসরাইলি বাহিনীর দুর্ধর্ষ গেরিলা ব্রিগেড গুজাইয়া জেলায় হামাস যোদ্ধাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধেরত ছিল বীর বিক্রমে লড়াই চালিয়ে যাওয়া হামাস সদস্যদের হামলায় দুর্ধর্ষ গোলানী ব্রিগেডের সেনারা হতাহত হয় এবং অন্তত পনের জন সেনার মৃত্যু ও সামরিক যান এবং বসদ ধ্বংস হয়। পরিস্থিতি ইসরাইলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রতিকুলে যায় এক পর্যায়ে শুক্রবার হতে শুরু করে উক্ত বাহিনীকে প্রত্যাহারের কাজ গতকাল গোলানী ব্রিগেডকে সম্পূর্ণ ভাবে প্রত্যাহার করেছে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। ইসরাইল ঘটনার আংশিক স্বীকার করেছে দেশটির টিভি চ্যানেল ১৫ বলেছে, হামাসের সাথে যুদ্ধে বড় ধরনের প্রাণহানির পর গোলানি ব্রিগেড কে পুনরায় সংগঠিত করতে গাজা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ব্রিগেডটি ইসরাইল সেনা বাহিনীর জন্য অংহকার আর মর্যাদার প্রতিক হিসেবে বিবেচিত হতো সেই দুর্ধর্ষ বাহিনী দৃশ্যতঃ হামাসের কাছে পরাস্থ হয়েছে। এদিকে স্থল অভিযানে ও হামাসের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে না পেরে একই সাথে মুহুর মুহুর বিমান হামলায় হামাসকে পরাস্থ না করতে পেরে গত তিন দিন যাবৎ ইসরাইল গাজার বিভিন্ন এলাকা অত্যাধিক শক্তিশালী আতিকায় বোমা দিয়ে হামলা পরিচালনা করছে। এই বোমার ওজন দুই হাজার পাউন্ড, পশ্চিমা মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে ইতিমধ্যে ইসরাইলের বিমান বাহিনী গাজা ভূ-খন্ডে পাঁচশতাধীক আতিকায় বোমার বিষ্ফরন ঘটিয়েছে যে কারনে মুহুর্তের মধ্যে গাজায় ধ্বংস স্তুপ বাড়ছে সেই সাথে বেড়েই চলেচে হত্যাযজ্ঞ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ পত্র গুলোও আতিকায় বোমা হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সিএনএস বলেছে, গাজায় আতিকায় বোমা হামলায় অন্ততঃ পাঁচশতাধীক বিশালাকার গর্তের সৃষ্টি হয়েছে এবং প্রতিটি গর্তের পরিধি চল্লিশ ফুটের বেশী। ইরাকের জঙ্গী গোষ্টী আইএস দমনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সে বোমার বিস্ফরন ঘটিয়েছিল আতিকায় বোমা উক্ত বোমা হতে অধিকতর শক্তিশালী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক ইসরাইলের বেমা হামলা গুরুতর আহত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার গাজার সরকারি স্থাপনায় বোমা হামলার সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হামলা পরিচালনা করে এ সময় বহু সংখ্যক স্বাস্থ্য কর্মি আহত হয়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে গত চব্বিশ ঘন্টায় দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলায় তিনশত নব্বুই জন নিরীহ ফিলিস্তীনির মৃত্যু ঘটেছে। হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়ার ঘোষনা ইসরাইল বিমান হামলা এবং হত্যাকান্ড বন্ধ না করা পর্যন্ত তারা কোন ধরনের যুদ্ধ বিরতি বা বন্দী বিনিময়, চুক্তি করার পক্ষে নয়, তিনি যুদ্ধ বিরতির ইসরাইলের প্রস্তাবকে সরাসরি প্রত্যাখান করার পর থেকেব ইসরাইল বাহিনী ব্যাপক ভাবে গাজায় বোমা হামলা পরিচালনা করছে। অবশেষে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রদানের জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাশ হলো। তবে প্রস্তাবটির পক্ষে বা বিপক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া কোন দেশই ভোট দেইনি, পশ্চিমা মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে রাশিয়ার চাওয়া ছিল গাজায় হামলা বন্ধ করার প্রস্তাব এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া ছিল বন্দী মুক্তি ও হামাসের আত্মসমর্পন যে কারনে দুই পরাশক্তি পৃথক পৃথক অবস্থান থেকে ভোটদানে বিরত ছিল। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবটির শিরোনাম ছিল গাজায় নিরাপদ ও বাধাহীন ভাবে পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ দিতে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ও স্থাপিত প্রথম প্রস্তাব বলা হয়েছিল অবিলম্বে লড়াই বন্ধের কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতার কারনে লেখা হয় লড়াই বন্ধের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরীর। জাতিসংঘ নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত লানা জাকি লুমেইবেহ তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছে আমরা জানি প্রস্তাবটির ভাষাটি কোন ভাবেই যথাযথ নয়। মানবিক যুদ্ধ বিরতির আহবান জানানো থেকে আমরা কখনোই বিরত থাকবো না। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ পরিচালক মুনির আল বুরশার অবস্থা আশঙ্কাজনক অবস্থায় অজ্ঞাত স্থানে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানানো হয়েছে। গতকাল খান ইউনিসের পূর্বাঞ্জল ও মধ্যাঞ্চলে রাতভর বিমান হামলা চালিয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশের অবতরণা ঘটিয়েছে। দৃশ্যতঃ গাজা ইতিহাসের সর্বোত্তম অন্ধকার অবস্থার মুখোমুখি। গতকাল পর্যন্ত ইসরাইলের হামলায় বিশ হাজারের অধিক ফিলিস্তীনির নিহত হওয়ার খবর প্রকাশ পেয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব আবারও বলেছে গাজায় হামলা বন্ধ করতে হবে, সৌদি আরবের নাগরিকদের অন্তত নব্বুই ভাগ দাবী করেছে ইসরাইলের হামলা বন্ধ করা জরুরী। দেশবাসি সরকারকে কোন ভাবেই ইসরাইলের সাথে সামান্যতম সম্পর্ক না রাখার পক্ষে, উল্লেখ্য সৌদি আরবের সাথে ইসরাইলের সম্পর্ক স্বাভাবিক কারনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করে আসছিল এবং কিছুটা অগ্রগতি ও হয়েছিল কিন্তু গত সাত অক্টোবরে হামাসের হামলা এবং পরবর্তিতে ইসরাইলের গণহত্যার কারনে সৌদি আরবের সাথে ইসরাইলের সম্পর্ক কাছাকাছি আসলো না। গতকালও গাজার অধিবাসিরা ক্ষুধার্তছিল, বিশেষ করে সুপেয় পানির জন্য এক ধরনের হাহাকার সমগ্র গাজাময়। যতই দিন যাচ্ছে ততোই হামাসের প্রতিরোধ হামলা জোরদার হচ্ছে এবং সাধারন ফিলিস্তীনিদের হামাসের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি পাচ্ছে আর এ কারনে ইসরাইল গাজার সাধারন অধিবাসি, নারী ও শিশুদের হত্যায় মেতে উঠেছে।